দেখতে এরা সাধারণ কুকুর থেকে কিছুটা আলাদা। মুখটা অনেকটা শেয়ালের মতো।
তাই সরাইলের এসব বিখ্যাত গ্রে-হাউন্ড কুকুরের দামটাও বেশি। বাচ্চা কুকুর ২০-২৫ হাজার আর বড় কুকুরের দাম ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার এই জাতের কুকুরের পরিচিতি উপমহাদেশ জুড়ে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে কুকুর কিনতে আসেন মানুষ। রীতিমতো দুধ-ভাত আর মাছ-মাংস খাইয়ে বড় করা হয় এদের।
একসময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িতে কেউ শখের বশে আবার কেউ আভিজাত্যের জন্য পালন করত এই বিখ্যাত কুকুর। কিন্তু কালের আবর্তে আজ সবই অতীত। বর্তমানে উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় মাত্র একটি পরিবার এই কুকুর পালন ধরে রেখেছে।
১ নভেম্বর দুপুরে সরেজমিনে ওই বাড়িতে যেতেই শোনা যায় কুকুরের ঘেউ ঘেউ। প্রথম দর্শনে ঘাবড়ে যেতে পারেন যে কেউ। তবে নাম ধরে ডাকতেই ছেড়ে রাখা সব কুকুর চলে এল গৃহকর্তা অজিত লাল রবিদাসের সামনে। কোনো কোনো কুকুর আবার আহ্লাদও করতে থাকে তার সাথে।
অজিত লাল জানালেন, টাইগার, মধু, পপি, কালী, লালী, টমি, কালাসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হয় তাদের। জন্মের কিছুদিন পরই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এ নাম দেওয়া হয় তাদের। বর্তমানে তার বাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি কুকুর আছে। ৫টি ছোট বাচ্চার জন্য তার প্রয়োজন হয় ২ কেজি দুধ। তাছাড়া ভালো দাম পেতে মাংসসহ উন্নত খাবারও দিতে হয়। ৩ থেকে ৫ মাসের একটি বাচ্চা কুকুর ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর বড় ও সুশ্রী কুকুরের দাম উঠে ৬০-৬৫ হাজার টাকা ।
কিন্তু কৌশলগত কারণে বড় কুকুর খুব একটা বিক্রি করতে চান না অজিত লাল।
কীভাবে এই কুকুর সরাইলে এল তার সঠিক ইতিহাস জানা কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে অজিত লালই ঠাকুরদার মুখে শোনা গল্পের বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে জানান, বহুকাল আগে এক দেওয়ান সাহেব হাতি নিয়ে সরাইল পরগনা থেকে কলকাতা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি কুকুর মনে ধরে তার। অনেক বলার পরও মালিক দেওয়ান সাহেবকে কুকুরটি দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। পরে হাতির বিনিময়ে মালিকের কাছ থেকে কুকুরটি নিয়ে আসেন ওই দেওয়ান। সেই কুকুর হাত বদলে একসময় তার দাদা গঙ্গাচরণ রবিদাসের কাছে চলে আসে। আর শিয়ালের সাথে মিলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান এই জাতের কুকুর। আবার অনেকে বলে থাকেন বাঘের সাথে মিলনের ফলে শিকারি প্রকৃতির এই গ্রে হাউন্ড কুকুরের উৎপত্তি।
তিনি আক্ষেপ করে জানান, নিজে যে ঘরে থাকেন সেই ঘরে কুকুর রাখা নিরাপদ নয়। কারণ প্রায়ই দামি এই কুকুর নিয়ে যেতে চোর-ডাকাত হানা দেয়। তাছাড়া দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো খাবার দেওয়াও তার জন্য কষ্ট হয়ে পড়ে। তিনি বিখ্যাত এই কুকুরটি ধরে রাখতে সরকারি সাহায্য কামনা করেন।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়েত মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সরাইলের ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে বিক্ষাত গ্রে-হাউন্ড কুকুরকে বাদ দেওয়া যাবে না। অনেক স্থানে এই কুকুরই সরাইলের পরিচিতি বহন করে।
সরাইলে সরকারিভাবে এই প্রজাতির কুকুরের একটি প্রজনন কেন্দ্র করার পরিকল্পনার কথাও জানালেন তিনি।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১১