সুন্দরবন আপনাকেই খুঁজছে। ঠিক এই মুহূর্তেই, যখন আপনি এই লেখাটি পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন।
বাঙালির অর্জন নেহায়েৎ কম নয়, কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার অধিকাংশ অর্জনই এসেছে অনেক রক্ত আর প্রাণের বিনিময়ে। আবার সেগুলোর বেশ কিছু বেহাতও হয়েছে। কিন্তু এমন কিছু সময় আসে, যখন সামান্য উদ্যোগই যথেষ্ট।
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন এই মুহূর্তে সেই সামান্য সক্রিয়তাই আপনার কাছে দাবি করছে।
যে যেভাবেই উদ্যোগ নিক না কেন, ‘নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স’ বা নতুন সপ্তাশ্চর্য এই প্রচারমুখর পৃথিবীতে একটি অনিবার্য বাস্তবতা। মানুষ বিস্ময় ভালোবাসে, প্রচার ভালোবাসে, ভালোবাসে সংক্ষিপ্ত তালিকা আর শ্রেষ্ঠ জিনিস সম্পর্কে জানতে বা জানাতে। আর তাই সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের এই উদ্যোগ নিয়েছে ‘নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স’ নামের একটি সংগঠন। ইতিপূর্বে কেবল মানুষ-নির্মিত আশ্চর্যকেই তালিকাভুক্ত করার রেওয়াজ ছিল, যার মধ্যে আমাদের উপমহাদেশের বিস্ময়কর কীর্তি তাজমহলও সগৌরবে স্থান করে নিয়েছে।
কিন্তু ২০০৭ সালে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনেরও উদ্যোগ গ্রহণ করে, প্রথমবারের মতো। মজার ব্যাপার হলো, প্রাথমিক সেই প্রাকৃতিক আশ্চর্যের তালিকায় বাংলাদেশের তিন-তিনটি গৌরব জায়গা করে নিয়েছিল। একটি এককভাবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। আর অন্য দুটি ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে : সুন্দরবন ও পদ্মা/গঙ্গা।
দুঃখের ব্যাপার হলো, চূড়ান্ত তালিকায় সাকল্যে এখন একটিই আছে : সুন্দরবন। আর সুখের ব্যাপার হলো, প্রতিযোগিতায় সুন্দরবনের অবস্থান বেশ ভালো। শুধু তা-ই নয়, আমরা যদি একটু সচেষ্ট হই, তাহলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাতটি প্রাকৃতিক আশ্চর্যের মধ্যেও জায়গা করে নিতে পারে আমাদের প্রিয় সুন্দরবন।
এর জন্য কী করতে হবে? না মিছিল-মিটিং-আন্দোলন-রক্তপাত নয়, কোনো যুদ্ধ নয়, লড়াই নয়, বরং চাই আপনার প্রথমে ব্যক্তিগত, পরে সম্ভব হলে, সাংগঠনিক উদ্যোগ।
এই লেখাটি আমরা যারা পড়ছি, তাদের অনেকেই জানি কীভাবে অনলাইনে গিয়ে ভোট করতে হয় (এমনকি বর্তমান লেখক ও তার বন্ধুদের নেতৃত্বে দেশের একটি প্রধান দৈনিকের পাঠক সংগঠনের উদ্যোগে সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক ভোট সংগ্রহ করা হয়েছিল)। তবু বলি : প্রথমে যাবেন www.new7wonders.com -সাইটে। তারপর voteঅপশনে গেলে ই-মেইলের শর্ত পূরণ করে সাতটি স্থান পছন্দ করে সাবমিট করুন। আপনার ভোট গণ্য হবে।
তবে এর একটি ছোট্ট সমস্যা আছে। আগে কার কত র্যাংকিং সেটি ওয়েবসাইটটিতে দেওয়া ছিল। তাতে বোঝা যেত কার কী অবস্থান। এখন আর সেটি নেই। ফলে সুন্দরবনের সঙ্গে বাকি যে ছয়টিকে আপনি নির্বাচন করছেন, তারা কি আগেই এগিয়ে আছে কিনা জানা কঠিন। ফলে আপনার এই প্রচেষ্টা বিফলেও যেতে পারে।
বরং এর চেয়ে সহজ একটি ব্যবস্থা আছে মোবাইলের মাধ্যমে। সেটি হয়তো এসএমএসের মাধ্যমে আপনি জেনেও গেছেন। তবু আরেকবার মনে করিয়ে দিই : আপনার মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখুন SB। তারপর পাঠিয়ে দিন ১৬৩৩৩ নম্বরে। এটা আপনি যে কোনো মোবাইল থেকে যতবার খুশি করতে পারেন। (আপনি মনে করতে পারেন এটি মোবাইল কোম্পানির ব্যবসা। এতে তাদেরই লাভ হবে। লাভ তাদের হবে অবশ্যই। কিন্তু দেশের লাভ তার চেয়েও বেশি। তাছাড়া এই ঈদে নিশ্চয়ই অনেককেই শুভেচ্ছা জানিয়ে এসএমএস করবেন। মনে করুন দেশের জন্যই আপনি কিছু শুভেচ্ছা এসএমএস করবেন।
এই লেখাটির এ পর্যন্ত এসে আপনার মনে হতেই পারে, কেন আপনি সুন্দরবনের জন্য এ সময় ও টাকার ‘অপচয়’ করবেন। শুধু সিডর আর আইলার কথা মনে করুন। দেখুন কীভাবে মায়ের মতো এই বন দক্ষিণ অঞ্চলকে সুরক্ষা দিয়েছিল। ভাবুন কীভাবে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে এই। ভাবুন কত লক্ষ লোক একে ঘিরে খেয়েপরে বেঁচে আছে। এই মায়ের জন্য কি আমরা কিছুই করব না।
আরেকটি কথা যেভাবে আমাদের সরকারি বনবিভাগ আর লুটেরারা দিনকে দিন এই মহামূল্যবান বনটিকে উজাড় আর ধ্বংস করে দিচ্ছে, যদি এটাকে আমরা প্রাকৃতিক বিস্ময়ে পরিণত করতে পারি, তাহলে সারা পৃথিবীর নজর থাকবে এর দিকে। এর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের দিকে। যা আমরা ব্যক্তিগতভাবে বা সরকারিভাবে করতে পারব না, কেবল একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে তাকে আমরা অনেকটাই রক্ষা করতে পারব। এটা নিশ্চয়ই কম কথা নয়?
এ বছর আমাদের মহান বিজয়ের চল্লিশ বছরের মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে আমাদের এ বিজয়। আসুন, আমরা এই সময়ে দেশকে কিছু উপহার দিই।
মাত্র দু-তিন জন কানাডা-প্রবাসী বাঙালির উদ্যোগে যদি আমাদের একুশে জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেতে পারে, তাহলে এই কোটি কোটি জনতা মিলে কেন সুন্দরবনকে বিজয়ী করতে পারব না?
তবে হাতে একদমই সময় নেই। যা করতে হবে সবই ১১.১১. ২০১১-র মধ্যে। তাই যা করার করুন এক্ষুণি, এই মুহূর্তেই।
আসুন আমাদের এই ঈদ আর এর সব আনন্দকে উৎসর্গ করি সুন্দরবনের জন্য।
saikathabib@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১১