ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা...

মাহবুব আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:২৯, নভেম্বর ৩, ২০১১
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা...

ক্লাস, পরীক্ষা, লাইব্রেরি ও অ্যাসাইনমেন্ট। জীবন যেন একটা ছকে বাঁধা।

দিনভর কেবল নোটপত্র নিয়ে ছোটাছুটি। এভাবে আর কত? একসময় একঘেয়েমি চলেই আসে, হাঁপিয়ে ওঠে মন। তখন একটু ছুটি, একটু অবসর যেন প্রত্যাশিত বৃষ্টির মতই। অন্তত এ সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে তো বটেই।

তাই বন্ধুদের আড্ডার বড় অংশ জুড়েই থাকছে ঈদুল আযহার ছুটি। কে কবে বাড়ি যাবেন, কীভাবে ছুটি কাটাবেন, এ নিয়ে চলছে বাতচিত।

যানবাহনে টিকেটের অপ্রতুলতা, যানজট, রাস্তায় ভোগান্তি সহ নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যারা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন তাদের চোখেমুখে ছিল মহামলিনের উচ্ছ্বলতা।

এ নিয়ে ক্লাসের ফাঁকে চাকসু ভবনের পাশের ঝুপড়িতে বসে আড্ডা জমিয়েছেন আলমগীর, হাসান, আরিফ ও ফেরদৌস শাম্মী। হাসানের এবার পরীক্ষা থাকায় রমজানের ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারেননি, তাই কাঙালের মতো অপেক্ষা করছেন এবারের ছুটির জন্য।

‘ক্যাম্পাস যেদিন বন্ধ হবে, সেদিন রাতেই রওনা দেব। ’ বলছিলেন লালমনিরহাট থেকে চবিতে পড়তে আসা হাসান । আরিফের অবশ্য কোনো তাড়া নেই। তিনি চট্টগ্রামেই ঈদ করবেন। কারণ তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবার-পরিজন সবকিছু এখানেই।

আর ফেরদৌস শাম্মীর কিছু টুকটাক কেনাকাটা বাকি। ‘ওটুকু শেষ হলেই বাসে চেপে বসব আমি। কত দিন হয় বড় আপু, আম্মু ও আব্বুকে দেখি না...’ আবেগে ছলছল করে ওঠে শাম্মীর চোখ।

১ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা ১৫ দিনের ঈদেও ছুটি শুরু হয়ে গেছে। আগে থেকেই শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের দলে দলে ক্যাম্পাস ছাড়ার মহোৎসব।

হিন্দু পরিবারের ছেলে পুরঞ্জয় গোস্বামী রাজু, কিন্তু ঈদের ব্যাপারে তার উৎসাহের কমতি নেই। ‘প্রতিবছর ঈদের সময় বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠি; বন্ধুদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে সেমাই খাই। সারা বছরের সেমাই আমি ঈদের দিনই খাই’ হাসতে হাসতে বললেন হবিগঞ্জ থেকে পড়তে আসা রাজু।

ঈদ যতই আনন্দের হোক, ঈদে বাড়ি ফেরাটা অনেকের কাছেই অভিশাপস্বরূপ। বাস- ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে যে কী পরিমাণ ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। বাস- ট্রেন কিংবা লঞ্চ সবখানেই থাকে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অগ্রিম টিকিটের জন্য ভোর থেকে বিকেল অবধি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর শোনা যায় ‘টিকিট শেষ’!

তারপরও হাসান, আলমগীর, শামীমরা বাড়ি ফিরবে। ভালোবাসার টানে, নাড়ির টানে! আর সেই শেঁকড়ের টানে হয়তো বাস- ট্রেন - লঞ্চের কোথাও সিট না পেয়ে ছাদে কিংবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পাড়ি দেবেন দীর্ঘ পথ।

মায়াবী রাতে তারার সঙ্গে নিঃশব্দে গল্প করতে করতে একসময় পৌঁছে যাবেন আপন ঠিকানায়, যেখানে প্রোথিত আছে তাঁদের জীবন। অপেক্ষায় রয়েছে বাড়ির পাশের শান্ত পুকুর, মাছরাঙা, প্রজাপতি কিংবা জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা একজোড়া সজল চোখ...!

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।