ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে সুন্দরবন

স্থানীয়রা অনেকেই জানেন না

আশরাফুল ইসলাম, সুন্দরবন অঞ্চল থেকে ফিরে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩১, নভেম্বর ৫, ২০১১
স্থানীয়রা অনেকেই জানেন না

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় আগে। অন্যদিকে ২০০৭ সাল থেকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় সুন্দরবন নিজের জায়গা করে নেওয়ার জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাচ্ছে।



অন্যদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যর একটিতে পরিণত করতে নানামুখী তৎপরতা চলছে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে। এ নিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে দেশে এবং বিদেশে থাকা বাঙালিদের মাঝে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনগোষ্ঠী ও তরুণ-প্রজন্ম এ নিয়ে একটু বেশিই উৎসাহী। কারণ, প্রাথমিকভাবে এর ভোটদান প্রক্রিয়া পুরোপুরি ছিল ইন্টারনেটনির্ভর।

তবে সরকারি-বেসরকারি প্রচার-প্রোপাগান্ডা আর সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনে এর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ায় গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষেরও বিপুল ‍আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে একে ঘিরে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যে সুন্দরবন নিয়ে দেশ-বিদেশে এত হৈ-হুল্লোড়, এত আয়োজন অথচ যারা আছে এর কেন্দ্রে, সেই সুন্দরবনের স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই জানেন না এই বিষয়টি।

খুলনা রেঞ্জের কোবাদক ফরেস্ট অফিসের এক বনকর্মী জানান, এখানকার মানুষ সেভেন ওয়ান্ডার্স কি, তা বুঝে না। এলাকাবাসীদের বিষয়টি জানাতে কোনো লিফলেট বা প্রচারজাতীয় কিছু এখনো পৌঁছোয়নি। তাই মুখে মুখে যতটুকু পারি বলছি।

কোবাদক বিট এলাকার মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবিব (৫৫)। ছোটবেলা থেকেই সুন্দরবনে নানা সম্পদ আহরণ করে জীবিকার সংস্থান করেছেন তিনি। জানালেন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে প্রতিযোগিতার বিষয়টি তিনি প্রথম শোনলেন এই প্রতিবেদকের কাছেই। এর আগে কেউ তাকে এ বিষয়ে জানাননি। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বহুত কষ্টে আছি ভাই। আইলার পর থাইক্কা বনে যাওয়া বন্ধ (আইলার পর এই সময়ে সুন্দরবনের বিপর্যয় ঠেকাতে বনবিভাগ গড়ানসহ সব কাঠ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে)। কাম-কাইজ নাই। কোনো রকম জীবন চলছে। ’

সাধারণভাবে আমৃত্যু জীবনসংগ্রামী এই জনপদের মানুষদের কাছে এসব বিষয় গুরুত্ব কম পাবারই কথা। কিন্তু তার মতে, তারা যখন সুন্দরবন এলাকারই বাসিন্দা, সুন্দরবনকে ঘিরেই তাদের বেঁচে থাকা, তাই তাদেরকে সংবাদটি জানালে বা কোনো উদ্যোগ নিলে তারা অবশ্যই সাধ্যমতো সহযোগিতা করতেন।

এখানকার সিংহভাগ মানুষের প্রতিক্রিয়া এরকমই। তবে সচেতন কেউ কেউ আবার সুন্দরবনকে নিয়ে তাদের অহংকারের কথা জানাতেও ভুললেন না।

বিষয়ের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলার পর সেখানকার মাসুম ঢালী নামে এক যুবক বলেন, ‘আমরা চাই নিজেরা কষ্ট পাইয়াও আমাগোর বন ভালো থাকুক। প্রয়োজনে তিন সাজের (বেলা) জায়গায় এক সাজ খামু , তারপরও সুন্দরবন বিশ্বে এক নম্বরে আসুক- তাতেই আমাগো গৌরব। তবে কিছুতেই যেন বন নষ্ট না অয়, কারণ সুন্দরবন না থাকলে আমরা বাঁচবো না। ’

সপ্তাশ্চার্য নির্বাচন নিয়ে শহুরে তরুণ প্রজন্মের মতো সুন্দরবনের আশপাশের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের অনেকেই বেশ আবেগময়। সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদ খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেতকাশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ জাহারুল ইসলাম জানান, আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা কেউ বলেনি। টিভি-পত্রিকাতে জেনে মোবাইলে সুন্দরবনকে ভোট দিয়েছি। বিদেশী পর্যটকরা আমাদের সুন্দরবনে আসুক, তাদের আকৃষ্ট করুক আমরা এটাই চাই। সুন্দরবনের জন্য আমাদের গর্ব হয়। ’  

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।