ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে সুন্দরবন

জেগে ওঠো বিশ্ববাঙালি

সৈকত হাবিব, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩২, নভেম্বর ১০, ২০১১
জেগে ওঠো বিশ্ববাঙালি

এ লেখাটি যখন লিখতে শুরু করেছি, তখন প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের কাউন্টডাউনে দেখা যাচ্ছে, সময় বাকি আছে আর মাত্র ২২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, এ লেখাটি আপনি যখন পড়ছেন, ততক্ষণে সময় নিশ্চয়ই আরও অনেক গড়িয়ে গেছে।



কিন্তু লেখাটি লিখতে হচ্ছে খুব মর্মবেদনা নিয়ে। কারণ নিউসেভেনওয়ান্ডার্স ওয়েবসাইটের ‘ভোটিং ট্রেন্ডস’ অপশনে (দয়া করে ক্লিক করুন : http://www.new7wonders.com/voting-trends) গিয়ে দেখছি sundarbans মার্ক করা জায়গাটি লালরঙ-চিহ্নিত। ওখানে কার্সর রাখলেই দেখা যাচ্ছে ‘গ্রোইং স্লোয়ার’। এর মানে হলো বেশ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। মানে সুন্দরবনের পক্ষে যথেষ্ট সংখ্যায় ভোট দেওয়া হচ্ছে না। অথচ ওখানেই আরো ১২টি প্রাকৃতিক নিদর্শন আছে সবুজ-চিহ্নিত। সেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘গ্রোইং ফাস্টার’, মানে জোর কদমে এগোচ্ছে। অর্থাৎ  আমাদের সুন্দরবন দৌড়ে বেশ পিছিয়ে আছে।

এটা কি বেশ খারাপ একটি খবর নয়? যেখানে এটি কেবল বিশ্বের একটি ছোট রাষ্ট্র বাংলাদেশেরই সম্পদ নয়, বরং অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতেরও সম্পদ?

আরও বেদনার ব্যাপার, অন্তত শাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে সুন্দরবনের চেয়ে ১২টি জায়গা ভোটে বেশ এগিয়ে রয়েছে। অথচ সেরা নির্বাচিত হবে কেবল সাতটি! আর বাংলাদেশ-ভারত ও বিশ্ব মিলিয়ে বাঙালিই আছে অন্তত ২৫ কোটি। তাহলে সুন্দরবনের এই হাল কেন হবে? আমরা কি যথেষ্ট সক্রিয় নই? এত যে প্রচার, লেখাজোখা ও আনুষ্ঠানিকতা সেগুলো কি তাহলে আমাদের টনক তেমন নাড়াতে পারেনি! নাকি অন্য কোনো ব্যাপার।

আমরা যখন ২০০৭-০৮ সালে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নিয়ে প্রচার ও ভোট কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম, তখনই আমাদের কোনো জ্ঞানী-গুণী বন্ধু ও বিশিষ্টজন, মায় মিডিয়া এ নিয়ে বেশ প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাদের বক্তব্য, কতিপয় ধান্ধাবাজ সেভেন ওয়ান্ডার্স নিয়ে ব্যবসা ফেঁদেছে, এগুলোতে আমাদের অংশগ্রহণে ফায়দা কী হবে। কথাটা হয়তো ঠিক, আবার পুরোটাই ঠিক এ কথা বলাও কঠিন। এটা ঠিক যে, পুঁজিবাদী পশ্চিমাবিশ্ব মুনাফার জন্য সব কিছুই করতে পারে। তারা হাওয়া থেকেও মুনাফা নিতে ওস্তাদ।

কিন্তু আমাদের জবাব হলো, এই মুনাফাবাদের বাইরে তো আমরাও নই। অন্যদিকে এই পণ্য-পৃথিবীতে আপনার নিজেকে/নিজের দেশকে/দেশের গৌরবকে তুলে ধরতে প্রচার ও বিজ্ঞাপনের কোনো বিকল্প নেই। আর একেই কর্পোরেটের ভাষায় আমরা বলছি ‘ব্র্যান্ডিং’। এমনকি দেশকে কীভাবে ব্র্যান্ডিং করা হয় তার সাম্প্রতিক উদাহরণ আমাদের খুব কাছেই আছে, মালয়েশিয়া। তারা নিজের দেশকে ‘ট্রুলি এশিয়া’ বলে ব্র্যান্ডিং করেছে এবং অত্যন্ত সফলও হয়েছে। কেবল তা-ই নয়, বিশ্বজুড়ে মালয়েশিয়া পর্যটন ও উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবেও নিজেকে হাজির করেছে। আর এর পুরোটাই মালয়েশিয়াকে দীর্ঘ দিনের শ্রম দিয়ে তৈরি করে নিতে হয়েছে।  

কাজেই এই ব্র্যান্ডিংয়ের যুগে কেউ যদি আপনার একটি প্রকৃতিদত্ত সম্পদকে তুলে ধরতে চায় এবং খুব অল্প আয়োজনেই আপনি নিজেও যদি লাভবান হন, তাহলে সমস্যাটা কোথায়? নিউসেভেনওয়ান্ডার্স কী ব্যবসা করছে, তারচে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনার-আমার দেশ লাভবান হচ্ছে কীনা। একটু ভেবে দেখুন ‘বিশ্বের সবচে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে’ কেবল এ কথাটিও যদি আপনি দেশের অর্থে বিজ্ঞাপিত করতে চান তাহলে কত বিলিয়ন ডলার দরকার! তারচে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এমন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে, যেখানে আপনার দেশ নিজের যোগ্যতায় স্থান করে নিয়েছে এবং দেশের নাগরিকরা সচেষ্ট হলেই একে খুব বড়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, এটা কি অনেক মর্যাদাকর নয়? আর নিউসেভেনওয়ান্ডার্স-এর মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের জন্য এই সুযোগটিই খুব অল্প সময়ের জন্য আমাদের হাতে আছে,  খুবই অল্প সময়ের জন্য।  

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মুহূর্তে আমাদের প্রিয় সুন্দরবন বেশ পিছিয়ে রয়েছে। একে যদি আমরা সত্যিই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় দেখতে চাই, তাহলে আরো একটু আন্তরিকতা, আরো একটু দেশ ও প্রকৃতিপ্রেম আমাদের চাই। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন, আর যিনিই এই লেখটি পড়ছেন, এক্ষুনি সুন্দরবনকে একটি ভোট দিন ইন্টারনেটে, ফোনে বা এসএমএসে। হতে পারে আপনার একটিমাত্র ভোটই সুন্দরবনকে মর্যাদার স্বর্ণচূড়ায় নিয়ে যেতে পারে।

সময় কিন্তু একদমই নেই। যা করতে হবে সবই ১১ নভেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে। অতএব, এখনই...

saikathabib@gmail.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।