ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ওরা সর্বরোগের চিকিৎসক!

জুলফিকার আলী কানন, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৪, নভেম্বর ১২, ২০১১
ওরা সর্বরোগের চিকিৎসক!

যুবকের নাম ছলেমান। বন-জঙ্গলের গাছপালার শেকড়-বাকড় তুলে কয়েকটি সাপ ঝুপিতে নিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে মজমা বসিয়ে ওষুধ বিক্রি করে।

এমন কোনো রোগ নেই যার ওষুধ বা চিকিৎসা সে জানে না! নিজেই তার ওষুধ সেবন করে বেশ কবার হাসপাতালে ভর্তি হলেও এ ব্যবসা ছেড়ে দেয়নি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভরাট গ্রামের অশিক্ষিত এ যুবক।

ওষুধ ব্যবহারে রোগ নিরাময়ের শত ভাগ নিশ্চয়তা দিলেও আরোগ্য লাভ করেছেন এমন লোকের সন্ধান মেলেনি। তারপরও চলছে এসব চিকিৎসা। শিক্ষিত ও প্রশাসনের লোকজনও এসব চমকপ্রদ কথা শুনে ওষুধ কিনছে।

শুধু ছলেমান কিংবা মালসাদহের সোনা মিয়া, মজিবর নয়, তাদের মতো শতাধিক ব্যক্তি  হাটে-বাজারে কিংবা রাস্তার ধারে মজমা বসিয়ে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বরোগের চিকিৎসায় পারদর্শী (!) এসব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় একদিকে যেমন রোগী ও সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে, অন্যদিকে রোগীর জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়া, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে।

গাংনী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ৫ শতাধিক হাতুড়ে চিকিৎসক রয়েছে যারা হাট-বাজারে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নিয়মিত রোগী দেখে। স্বল্প লেখাপড়া জানলেও বিভিন্ন রোগ চিকিৎসায় পারদর্শী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে লিফলেট বিতরণ করে প্রচার চালিয়ে বেড়াচ্ছে। যেখানে কম্পিউটারের একটি বোতামে চাপ দিলে সারা বিশ্ব চলে আসে হাতের মুঠোয়, সেখানে সাধারণ জনগণ এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের চমকপ্রদ কিছু কথা শুনে তাবিজ-কবজে বিশ্বাস করে প্রতারিত হচ্ছে।

বামন্দি বাজারের সাপুড়ে মজিবর জানান, পৈতৃক সূত্রে তিনি এ পেশায় জড়িত। রুটি-রুজির জন্য এ পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি বিক্রি করেন যৌবন বাহার সালসা, মদক ও হালুয়া আর দাঁত তোলার কাজ করে থাকেন। তার দেওয়া ওষুধে কোনো রোগ ভালো হয় কিনা তিনি জানেন না। তবে কেউ এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেছেন তিনি। দাঁত তোলার মতো একটা কঠিন বিষয়কেও তিনি অত্যন্ত সহজভাবে দেখে আর বলেন এটা একটা হাতের ম্যাজিক। তার মতে যে কোনো দাঁত সহজেই উৎপাটন করা সম্ভব।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. হাসান আলী বাংলানিউজকে জানান, জনগন এখন অনেক শিক্ষিত। তারা নিজেরা সচেতন না হলে কীভাবে সচেতন করা সম্ভব? তবে হাতুড়ে চিকিৎসকদের ব্যাপারে সিভিল সার্জন ও ড্রাগ সুপার ইচ্ছে করলে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস শহীদ জানান, জনবল সংকটের কারণে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হয়নি। তবে আগামীতে চেষ্টা করা হবে হাতুড়ে চিকিৎসকদের উচ্ছেদ ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।