শীত মৌসুম এলেই একশ্রেণীর শৌখিন ও পেশাদার শীতের পাখি শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদের অনেকেই এ সময় মূল পেশা ছেড়ে নেমে পড়ে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ও অতিথি পাখি শিকারে।
শেরপুরে এখন শীতের অতিথি পাখিসহ দেশীয় বক শিকারের হিড়িক পড়েছে। কিন্তু প্রশাসন রয়েছে নিশ্চুপ। ফলে শিকারিরা অবাধে শীতের পাখি শিকার করে প্রকাশ্যে শহরের বিভিন্ন দোকান-পাটে বিক্রি করছে। প্রতিটি বক বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকায়।
অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, বক খেলে শরীর থেকে বাত চলে যায় বা বাত রোগ ভালো হয়ে যায়। ফলে যাদের শরীরে বাত রয়েছে তাদের মাঝে বক খাওয়ার ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আবার অনেকে শখ করেই এসব পাখি খেয়ে থাকে।
শেরপুর জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলায় রয়েছে বহু নদী, বিল, ছোট ছোট খালসহ বিভিন্ন জলাশয়। এসব জলাশয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জেলা সদরের হাওরা বিল, আওরা-কাওরা বিল, গাওয়া বিল, কাল ডাঙ্গা বিল, কেউটা বিল, বাইট্টা বিল, ইছলি বিল, রৌহা বিল।
নকলা উপজেলায় রয়েছে বর বিল, বিরি বিল, জোসনাকুঁড়ি বিল, কুর্শা বিল, বোরডুবি বিল, মেহেদীডাঙ্গা বিল, কায়দা বিল।
শ্রবির্দী উপজেলায় আছে ছোট বয়সা ও বড় বয়সা বিল, শিমুলদহ বিল, উজান জলকেশর রায় বিল, শিংহজানী বিল, বুচাদহ বিল, সাতমাথা বিল, কালিদাহ সাগর।
নালিতাবাড়ি উপজেলায় আছে ঘোল্লার বিল, কৈয়াকুড়া বিল, গাইমারি বিল, নাকশি বিল, কৈয়ার বিল, টাকিমারি বিল, দুরামারি বিল, বগালরা বিল, মাটিফাটা বিল, পানিহাতা বিল।
ঝিনাইগাতী উপজেলায় আছে ধলি বিল, গজারমারি বিল, ব্যাঙকুড়া বিল, শৈলা বিল, বাটিয়ামারি বিল, নিশিন্দা বিল ইত্যাদি।
জেলার উল্লেখযোগ্য নদীর মধ্যে আছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, মহারশি, সোমেশ্বরী, মৃগী, ভোগাই, চেল্লাখালী, দশানী নদী এবং অসংখ্য খাল ও জলাশয়।
এসব বিল-নদী ও জলাশয়ে আগের মতো পানি না থাকলেও বা অনেক নদী বা বিল বর্তমানে শুকিয়ে গেলেও যেসব বিলে বা জলাশয়ে পানি রয়েছে সেসব খাল-বিল ও জলাশয়ে প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। আর এ সুযোগেই এক শ্রেণীর পেশাদার ও শৌখিন পাখি শিকারি ঝাপিয়ে পড়ে পাখি শিকারে। অন্যদিকে শিকারিদের অনেকেই জানে না যে পাখি শিকার করা আইনত অপরাধ বা নিষেধ রয়েছে। আবার অনেকে জেনেও শিকার করে সংশ্লিষ্ট কেউ তাদের বাধা দেয় না বলে।
নকলা উপজেলার লাভা গ্রামের শৌখিন বক শিকারি কামাল (২৫) জানান, আমার পূর্বপুরুষেরা শখের বশে বক, কালিম, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করত। এসব পাখি তারা নিজেরা খেত এবং বাজারে বিক্রিও করত। তাই আমিও শীত এলে অন্য কাজ ফেলে বক শিকার করি।
তিনি আরো জানান, বক শিকার করতে তাদের সনাতনি কায়দায় বিল বা জলাশয়ের কাছে যেখানে বকের বিচরণ সেখানে ছোট্ট ঘর তৈরি করে ঘরের ওপর লতা-পাতা দিয়ে ঢেকে পোষা বককে বসিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। ওই পোষা বকের ডাকে অন্য সব বক এসে ওই ঘরের উপর বসা মাত্রই শিকারি ধরে ফেলে। এছাড়া অতিথি পাখি মিলে গেলে তা মাছ ধরার জাল দিয়ে শিকার করা হয় বলে জানান ওই শিকারি।
একই উপজেলার চন্দ্রকোনা গ্রামের বক শিকারি দুলাল (২৮) জানান, পাখি বা বক শিকার আইনত অপরাধ তা আমার জানা ছিল না। এছাড়া কেউ তো নিষেধও করে না।
তিনি জানান, এখন আগের মতো বক বা অন্য সব অতিথি পাখির ব্যাপক সমাগম হয় না। ৫ থেকে ৬ বছর আগে এই শীত মৌসুমে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি বক শিকার করা গেলেও এখন দিনে ৮ থেকে ১০টির বেশি শিকার করা যায় না।
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. নাসিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অবৈধ পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে শিগগিরই মোবাইল কোর্ট বসানো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১১