ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

তিন প্রজাতির প্রজাপতি আবিষ্কার

ওয়ালিউল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:১৯, নভেম্বর ৩০, ২০১১
তিন প্রজাতির প্রজাপতি আবিষ্কার

প্রজাপতিকে বলা হয় প্রকৃতির অলংকার। প্রজাপতির পাখায় যেন লুকিয়ে থাকে স্বপ্ন।

তাই তো গানে গানেই প্রজাপতিকে প্রশ্ন করা হয়, ‘কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা?’। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দৃষ্টি নন্দন প্রজাপতি। এই পতঙ্গটি শনাক্ত করতে এবং রক্ষা করতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: মনোয়ার হোসেন।

সম্প্রতি তার নেতৃত্বাধীন ‘বাটারফ্লাই কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভ’ দল শনাক্ত করেছে নতুন তিন প্রজাতির প্রজাপতি। তাদের শনাক্তকৃত প্রজাপতি তিনটির নাম হল: Purple Sapphire, Common Tinsel ও Orange Awlet.

ড. মনোয়ার হোসেন জানান, ‘বাংলাদেশে প্রথম এই তিন প্রজাতির প্রজাপতি জানুয়ারি ২০১১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১১ এর মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। ’

নতুন এই তিন প্রজাতির প্রজাপতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘Purple Sapphire প্রজাপতিটি Lycaenidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এবং এটি আকারে ছোট। এই প্রজাতির পাখার দৈর্ঘ্য ২৪-২৮ মিলিমিটার এবং এরা দ্রুত উড়তে সক্ষম। রাস্তার ধারে এবং প্রশান্ত সবুজ বনভুমিতে এরা উড়তে পছন্দ করে। চিম্বুক অঞ্চল থেকে শনাক্তকৃত এ প্রজাপতিটি মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পশ্চিম মালয়শিয়া, ভূটান, জাভা, সুমাত্রাসহ চীনের দক্ষিন অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।

Common Tinsel প্রজাতির প্রজাপতিটি Laycaenide গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এরা ছোট জাতের পতঙ্গ। এদের আকৃতি ২৬-২৮ মিলিমিটার। দ্রুত উড়তে সক্ষম এ প্রজাতির প্রজাপতিটি খোলা জঙ্গলে এবং পাঁচ হাজার ফিটের মধ্যে কম উচু পাহাড়ী এলাকায় পাওয়া পায়। লাউয়াছড়া বনে শনাক্তকৃত এ প্রজাপতিটি দক্ষিণ ভারত, উড়িষ্যা, আসাম, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারে দেখতে পাওয়া যায়।

Orange Awlet নামক এই প্রজাতির প্রজাপতিটি Hesperidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এর আকৃতি ৫০-৫৫ মিলিমিটার। অতি দ্রুত উড়তে পারা এ প্রজাপতিটি পাহাড়ের নিচু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। লাউয়াছড়া থেকে শনাক্তকৃত প্রজাপতিটি পশ্চিম ঘাট, সিকিম, আসাম ও মিয়ানমারে দেখা যায়।

এই তিন প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করার আগে অধ্যাপক মনোয়ার ‘স্ট্রাইপড পাইরট’, ‘মানকি পাজল’, ‘ব্লু প্যানসি’ ও ‘পেইন্টেড লেডি’ নামের চারটি প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করেন।

১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম প্রজাপতি নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন অধ্যাপক ইসমাইল।

তার একক গবেষণায় এ পর্যন্ত মোট ১৫০টি প্রজাতি প্রজাপতির শনাক্ত হয়েছে বলে দাবি করে জাবির সহযোগী অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রজাপতির নতুন নতুন প্রজাতির সন্ধান মিললেও দেশে প্রজাপতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। বনভূমি কমে যাওয়ায় প্রকৃতির এই অলঙ্কারটির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।

তিনি প্রজাপতি সংরক্ষণে দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রজাপতির সবকটি প্রজাতির তালিকা তৈরির পাশাপাশি এদের সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।

উল্লেখ্য, ২ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘প্রজাপতি মেলা-২০১১’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখার আয়োজনে এ মেলায় থাকছে প্রজাপতির উপর ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বাটারফ্লাই হাট, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির ঘুড়ি উড়ানো, সম্মাননা প্রদান ও সল্পদৈঘ্যের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, ৩০ নভেম্বর, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।