ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

শিশু বেলালের জীবন সংগ্রাম

রশিদ আল মুনান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৫, ডিসেম্বর ১, ২০১১
শিশু বেলালের জীবন সংগ্রাম

পিরোজপুর: দু’বেলা সে বাবার সঙ্গে খালে-বিলে মাছ ধরে। পরে বাজারে নিয়ে তা বিক্রিও করে।

সংসারের চাকাটি সচল রাখতে এভাবেই ওর ছোট্ট হাত দু’টি সদা তৎপর। তারপরও ওর পড়ালেখায় এতটুকু ঘাটতি নেই। দারিদ্র্যের সঙ্গে  লড়ে আর কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে জীবন গড়তে চায় মেধাবী বালক বেলাল।

পিরোজপুর উপজেলার নেছারাবাদ উপজেলার চিলতলা গ্রামে বেল্লালদের বাড়ি। ওর বাবা দুলাল আকন উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও সংসারের জোয়ালটি যেন আর কাঁধে রাখতে পারছেন না। তিনি সন্তানদের লেখাপাড়া করাবেন কী ভাবে! যে কারণে ইতোমধ্যে তার এক ছেলে ও দুই মেয়েকে লেখাপড়া ছেড়ে গার্মেন্টে কাজ নিতে হয়েছে।

কিন্তু ব্যতিক্রম তার ছোট ছেলে বেলাল। হতদরিদ্র পরিবারের এ শিশুটি নিয়ত সংগ্রাম করে লেখাপাড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে।

মাছ ধরার কাজে তার বাবাকে দু’বেলা সাহায্য করলেও স্কুল বন্ধ কামাই নেই তার। ক্লাসে বরাবরই সে প্রথম হচ্ছে। গতবছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে গ্রামের সাবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় বেলাল।

বেলালের বাবা বাংলানিউজকে জানান, তাদের ঘরে রাতে আলোর ব্যবস্থা নেই। তাই বেলালকে দিনের আলোতেই পড়াশুনা সারতে হয়। নিজের সংসারের ব্যয় নির্বাহ আর পড়াশুনার খরচ মেটাতে  প্রতিদিন সকালে বাবার সঙ্গে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে সে তা বিক্রি করতে যায়।

বেলালের দূর সম্পর্কের চাচা মোহাম্মদ আলম জানান, বেল্লালরা অত্যন্ত গরিব। তিন বেলা খাবার জোটেনা তাদের। এমনকি রাতে পড়াশুনা করতে কেরোসিন কিনে দিতে পারে না তার বাবা। এ জন্য দিনের বেলায় তাকে পড়াশুনা সারতে হয়।

মাঝে-মধ্যে রাতে তার বাড়িতে গিয়ে লেখা পড়া করে বেল্লাল। বেলালরা সব ভাই-বোনই মেধাবী বলে তিনি জানান। কিন্তু অভাবের কারণে তাদের লেখা পড়া হয়নি।
                           
বেলালের বাবা দুলালের ভয় হয় অভাব তার ছোট ছেলের লেখাপড়া কেড়ে নিতে পারে। তবে তিনি এ আশাও করেন, সমাজের কোনো বিত্তবান বা কোনো সংস্থা একটু সহায়তা করলে বেলাল তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবে।

আমীর হোসেন প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান, বেলালরা পারিবারিক ভাবেই মেধাবী। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তারা সামনে আগাতে পারছেনা। বিভিন্ন সময়ে অনেকে সাহায্যের হাত বাড়ালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

বেলালের বক্তব্য, যত কষ্টই হোক, সে লেখাপড়া ছাড়বেনা। ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর 2011

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।