ঢাকা: কম্পিউটার অবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে সূচনা হয় নতুন এক অধ্যায়ের। অতীতের সকল কল্পনাকে এক দৌড়ে হারিয়ে দিয়ে ছোট একটি বাক্স হয়ে উঠেছে আজ সভ্যতার মানদণ্ড।
ব্রিটিশ গনিতজ্ঞ চার্লস ব্যাবেজকে বলা হয় আধুনিক কম্পিউটারের জনক। আর তিনি ১৮২২ সালে অবিস্কার করেছিলেন অধুনিক গণনাযন্ত্র। তারই রেশ ধরে নানা ধাপ পেরিয়ে পরিপূর্ণতা পায় আজকের কম্পিউটার। আর এই পরিপূর্ণতা দিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে কিছু কিছু কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে অগ্রগন্য ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান হলো আইবিএম, অ্যাপল এবং মাইক্রোসফট। পরবর্তীতে আরও নতুন নতুন করপোরেশন যুক্ত হয়েছে এর সঙ্গে। তাই নেতৃস্থানীয় এই করপোরেশনগুলোর প্রতীক পরিচয় নিয়ে এবারের পরিক্রমা করা হলো।
আই বি এম

কম্পিউটার জগতে পৃথিবীব্যাপী এক পরিচিত নাম আইবিএম। সরল এবং আর্কষণীয় এর প্রতীকটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নাম এবং মানের দিক প্রকাশ পায়। প্রতীকটি এর পণ্য, বিশ্বস্ততা, প্রাধান্য এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বহন করে।
১৯২৪ সালে এর প্রতীক তৈরিতে ব্যবহার করা হয় গ্লোব। সময়ের বির্বতনে আর আধুনিকতার চাহিদা মেটাতে বহুবারই পরিবর্তন করা হয়েছে এর প্রতীক। ১৯৪৭ সালে প্রতীকটি আবার নতুন করে তৈরি করা হয়। এরপর ১৯৫৬ ও ১৯৭২ সালে এর নতুন সংস্করন করা হয়।
বর্তমান প্রতীকটি তৈরি করেন ইতিহাস বিখ্যাত গ্রাফিক্স ডিজাইনার পল রেন্ড।
আকৃতি
আইবিএম এর বর্তমান প্রতীকটি আনূভূমিক (হরাইজন্টাল) আকৃতির। প্রতীকটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও গতিশীলতার অর্থ প্রকাশ করে।
রং
প্রতীকটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নীল রংয়ের ছাপ। নীল রং একটি পেশাদারি রং যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতীক তৈরিতে ব্যবহার করে। আর এই রংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও কর্তৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে।
অ্যাপল
আইবিএম এর পর কম্পিউটারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে অ্যাপল। স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আর কম্পিউটারের দৃষ্টিনান্দিকতা তৈরিতে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে অ্যাপল। অ্যাপল তার ভোক্তদের জন্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ছাড়াও সফটওয়্যার, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য কম্পিউটার তৈরি করে থাকে। অ্যাপল তার নিজের পণ্যের ব্যবহার সুবিধার জন্য বহুদিন ধরেই অত্যাধুনিক সব সফটওয়্যার তৈরি করে আসছে। প্রায় ৩০ বছর ধরে অ্যাপল এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং ক্রমান্বয়েই এগিয়ে চলছে।
অ্যাপল প্রথমে যে প্রতীকটি ব্যবহার করেছিল তাতে রংধনুর ব্যবহার ছিল। এই রংধনুর মাধ্যমে প্রযুক্তি জগতে উজ্জল সূচনার কথা জানান দিয়েছিলো তারা।
বলা হয়ে থাকে কম্পিউটার জগতের নির্বিবাদ পিতা “অ্যালেন এম টুরিং এক বিশ মিশ্রিত আপেল খেয়ে মৃত্যুবরন করেন যা এই প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যাপেল তার প্রতীকের মাধ্যমে পন্যের সর্বোচ্চ মানের কথা প্রকাশ করে থাকে।
আকৃতি
অ্যাপলের প্রতীকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান প্রকাশ পায়। এর প্রতীকে একটি আপেল ব্যবহার করা হয়েছে যার ডানদিকটা কামড়ানো এবং ডানদিকে তেড়ছাভাবে একটি পাতা রয়েছে।
রং
অ্যাপলের প্রতীকটি তৈরিতে রুপালি রং ব্যবহার করা হয়েছে যা দেখতে ভদ্র ও মার্জিত। রংটি এর প্রতীকটিকে একটি আধুনিকতার পরিচয় এনে দেয়।
মাইক্রোসফট
কম্পিউটারের সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশনের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি কাজ করে মাইক্রোসফট। অ্যাপ্লিকেশন জগতে একে বলা হয় বিগ জায়ান্ট। বিশ্বে সর্বাধিক প্রচলিত অ্যাপ্লিকেশন বলতেই মাইক্রোসফটের অ্যাপ্লিকেশন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে এর সদর দপ্তর অবস্থিত। পৃথিবীর ১০২ টিরও বেশি দেশে প্রায় ৮৯,০০০ হাজারের ও বেশি লোক এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকে।
কম্পিউটারের সফটওয়ার ও অ্যাপ্লিকেশনের উন্নয়নের কাজ ছাড়াও ই-মেইল সেবা, প্রকাশনা, ইলেকট্রনিক গেম ইত্যাদি তৈরি করে থাকে।
আকৃতি
১৯৭৫ সালে যখন এর প্রথম প্রতীক তৈরি করা হয় তখন এর মধ্যে খাজকাটা ছিল যার মাধ্যমে ৭০ এবং ৮০ এই যুগের চিন্তাধারনার প্রকাশ পায়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত এর দ্বিতীয় প্রতীক ব্যবহার করা হয় । তখন প্রতীকটির অক্ষরে সবুজ রং ব্যবহার করা হয়।
১৯৯৪ সালে এর বর্তমান প্রতীকটি তৈরি করা হয়। আমেরিকান গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্কট বেকার এর ডিজাইন করেন। মাইক্রোসফটের বর্তমান প্রতীকটিতে ও এবং এস এর মাঝখানে একটি সø্যাস রয়েছে যা প্রতিষ্ঠানটির উজ্জ্বলতা ও দ্রুত গতির প্রকাশ করে।
ইনটেল
ইনটেল কর্পোরেশন যা ইলেকট্রনি ডিভাইস তৈরিতে বিশ্ববিখ্যাত এক নাম। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারায় অবস্থিত এর সদরদপ্তর। ব্যক্তিগত ব্যবহার্য কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, মাদারবোর্ড চিপ, ফ্ল্যাশ মেমোরি, গ্রাফিক চিপ ইত্যাদি তৈরি করে থাকে ইনটেল।
ইনটেল ইনসাইড এই স্লোগান প্রচারণার মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইনটেল। প্রায় ৩৯ বছর আগে সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট নয়সি ও গর্ডন মূর এর প্রথম প্রতীকটি তৈরি করেন। ১৯৯১ সালে নতুন করে এর বর্তমান প্রতীকটি তৈরি করা হয়। নতুন এই প্রতীকটি ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিত্বতার অর্থ প্রকাশ করে।
আকৃতি
ডিম্বাকৃতির এই প্রতীকটিতে প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে মাঝখানে। প্রতীকটি আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে। এছাড়া বিপনন পরিচালনায় এর ব্যতিক্রমতার পরিচয় পাওয়া যায় এই প্রতীকের মাধ্যমে।
রং
প্রতীকটির নীল রং মানুষের মাঝে এর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রকাশ করে।
এইচ পি
হিউলেট পেকার্ড কোম্পানি যা এইচ পি নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটির সদরদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালির্ফোনিয়ার পালো অল্টোতে। ১৯৫৭ সালে এইচ পি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এইচ পি সনি ও ইয়োকোগাওয়া ইলেকট্রনিক্্র এর সাথে ব্যবসায়িকভাবে সম্পৃক্ত হয়। ১৯৯৬ সালে এইচ পি ২১০০/ এইচ পি ১০০০ সিরিজ দিয়ে এর বাজারজাত শুরু করে। এইচ পির প্রতীকের সরলতা ছাড়াও এর প্রযুক্তির জন্য এটি বিশ্ববিখ্যাত।
এর প্রতীকটি দেখতে খুবই সাধারণ যা প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বস্ততা ও ক্ষমতার প্রকাশ করে। তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়াও এটি আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সুপরিচিত।
আকৃতি
চারকোনা বাকানো এর প্রতীকটি দেখতে অনেকটা চর্তুভূজ আকৃতির। মাঝখানে একটি রিংয়ের মাধ্যমে অক্ষরগুলো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতীক। অক্ষরগুলো মাঝখানে উপর-নিচ করা যা এর সুরুচিপূর্নতা ও অন্যদের চেয়ে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে।
রং
এইচ পির প্রতীক তৈরিতে নীল ও সাদা রংয়ের ব্যবহার করা হয়েছে। এই রংয়ের মাধ্যমে এর সরলতা ও আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১১