ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

কাঠের চাকায় জীবন বাঁধা

শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১২, ডিসেম্বর ৩, ২০১১
কাঠের চাকায় জীবন বাঁধা

চাটমোহর (পাবনা): ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, কতো রব আমি পন্থের দিকে চাইয়ারে...। ’

এ দেশের গ্রামে-গঞ্জে মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের সেই মন মাতানো গান এখনো সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য  গরুর গাড়ি আজ অনেকটা বিলুপ্তির পথে; তারপরও কৃষক, ক্ষুদে ব্যবসায়ী, জাত গাড়োয়ানের কাছে গরুর গাড়ির কদর একেবারে কমে যায়নি।  

প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন ধান ওঠার মৌসুমে কৃষকের প্রধান বাহনই হয়ে দাড়ায় এই গরুর গাড়ি। তবে চলার যে যন্ত্র সেটা সবারই চেনা। দু’পাশে বিশালাকার কাঠের গোলাকার বস্তু ক্যাচর-ম্যাচর শব্দ তুলে অবিরাম গড়িয়ে চলে। এরই নাম ‘চাকা’। আর এই চাকা যেন গতিময়তার এক চিরায়ত প্রতীক।

খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ঘুরছে চাকায়। রিক্সাওয়ালা, গ্রামের কালো মৈশাল, ঘোড়ার কোচওয়ান থেকে শুরু করে সবার জীবনই যেন চাকায় বাঁধা পড়ে আছে।

গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করতে দরকার হয় বাবলা কাঠের। অনাদর-অবহেলায় এ কাঠ জন্মে গ্রামগঞ্জের পথে-ঘাটে-মাঠে । এ কাঠ ছাড়া অন্য কাঠে নাকি চাকা তৈরি করা শক্ত। অন্যদিকে চাকা তৈরির পেশায় যারা আছেন তারাও খাতা-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন না।

অনেকটা দেখে দেখেই শেখা। হয়তো  কোনো এককালে বাপ-দাদার দেখাদেখি ছেলেও অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে পেশা হিসাবে গাড়ির চাকা তৈরির এই কারবার একেবারে মন্দ না।

দিনে খেয়ে পরে মজুরি হিসাবে ২০০-৩০০ টাকা একেকজন আয় করেন। কেউ কেউ আগবাড়িয়ে খুশিতে নেচে ওঠেন। মহাজনরা নাকি মাঝে মাঝে তাদের সিনেমায়ও নিয়ে যায়। বড় মহাজনদের চাকা তৈরিতে হয়ে যায় একটা বড় কামাই।

পাবনার ঈশ্বরদী আড়মবাড়িয়া, নাটোরের লালপুরে ছোট-বড় মহাজনের ঘরে প্রতিদিন শ’ শ’ চাকা তৈরি হচ্ছে। এ দুটি জায়গা গরু ও ঘোড়ার গাড়ির চাকার জন্য আগে থেকেই প্রসিদ্ধ। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকা চলে যায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে।

আড়মবাড়িয়া থেকে পাবনার চাটমোহরে কাজ করতে আসা জামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘চাকা বানান কাম আগের থনে কম থাকলেও অহনও গ্রামের মানুষের চাহিদা মরে নাই। হেরা অহনও ডাক পারে’।

তিনি আরোও জানান, গত ২৪ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। কিন্তু বর্তমানে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তার সংসার চলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

চাকা শিল্পীর শ্রম ও মেধায় দু’দিনেই গড়ে ওঠে একজোড়া চাকা। মহজনরা এই একজোড়া চাকা প্রায় আড়াই থেকে ৩-৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

চাকা ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চাকা তৈরির প্রধান যে কাঠ সেই বাবলা গাছও আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে বাবলা গাছ লাগানোর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। গরুর গাড়ি ঘোড়ার গাড়ির কদরতো এমনিতেই দিন দিন কমছে। তবুও তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।