একটি গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। এটিকে সায়েন্স ফিকশন গল্পও বলা চলে।
‘কানাডার কোল্ড লেকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন এর শত তম অধিবেশনের সভাপতিত্ব করছেন নর্থ ডাকোটা থেকে আসা ৫৫ বছর বয়সের বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী আফ্রদিতি চৌধুরী। শান্ত শিষ্ট কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত এই বৃদ্ধার দিকে তাকালেই বোঝা যায় তার পূর্ব পুরুষ এশিয়ান ছিলেন।
২০৯৫ সালের এই সময়টাতে পৃথিবীর জেগে থাকা অংশগুলোর মধ্যে ব্যাপক হারে জলবায়ু পরিবর্তন আর এ নিয়ে উন্নতদেশগুলোর আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ চলছে। ততদিনে বর্তমান পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে, আবহাওয়ায় এসেছে পরিবর্তন। পৃথিবী হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে; বাতাস বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কিছু ধনী দেশ বিলিয়ন ডলার খরচ করে একটি গ্রহকে বাসযোগ্য করার চেষ্টায় আছে। অথচ যারা পৃথিবী ছেড়ে অন্য গ্রহে পালাতে চায় তারাই আজকের অবস্থার জন্য দায়ি।
এইসব নিয়েই পরিবেশবাদীদের সাথে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের তুমুল বাকবিতণ্ডার পরে অধিবেশনে এখন বিরতি। হাতে কফির মগ আর মুখে স্বার্থপর দেশগুলোর জন্য চরম বিরক্তি নিয়ে সভাপতি বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই ঠাণ্ডা তুষারের এক ঝাপটা তাকে নিয়ে গেলো বর্তমান থেকে সুদূর অতীত শৈশবে তার দাদুর গল্পে……
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ছবির মতো সুন্দর সমুদ্র তীরবর্তী ছোট্ট একটা দেশের কথা তার গল্পে মনে পড়ে। এ যে বাংলাদেশ… আমাদের দেশ! বলা হতো ষড়ঋতুর দেশ। বছরের একেক সময়ে একেক রূপে সেজে থাকতো রূপসী বাংলা। গ্রীষ্মে আম, জাম, লিচু, কাঠাল আরও কত ধরনের ফল। বর্ষায় ঝম ঝম বৃষ্টির সাথে কদম ফুল আর মাছ ধরার ধুম। শরত-হেমন্তে ছিল কাশফুল আর নবান্ন। শীত আসলেই ভোরবেলায় ঠাণ্ডা খেজুর রস আর মায়ের হাতে তৈরি নানা রকম পিঠা। সবশেষে আসত রুপের রাণী বসন্ত, তার রুপের ডানা মেলে। সেইসব কিছুই আজ নেই, বাংলা নেই, নেই বাংলার সেই রুপ। সবই আজ শুধু গল্প। ’
গল্পে তো আর কিছুই বলার নেই। আমাদের পৃথিবী, আমাদের দেশ ধীরে ধীরে চলে যাবে সমুদ্রের তলে। আমার এ সুন্দর দেশটি কী হারিয়ে যাবে? এমন অনিরাপদ পৃথিবী যাদের জন্য তৈরি হয়েছে তারাই সম্মেলন করে। তারাই বিশ্ব জলবায়ুর নীতি তৈরি করে। ডারাবনে কিয়োটো চুক্তির ফলাফল অমিমাংশিত রয়ে গেলে। সম্মেলন শেষ। কিন্তু কোনো অর্জন সম্মেলনে নেই। কতটা অসহায় হলে আমাদের জন্য নতুন নীতি ‘অ্যাডাপটেশন’ তৈরি হতে পারে। সচেতন থাকবো আমরা; আর যারা কার্বন নির্গমন বন্ধ করবে না তারাই কোনো সচেতনতার কাছে ধারেও যাবে না। সত্যি আমরা অসহায়।
পরিশেষে বলতে চাই, মিটিং মিছিল কিংবা সম্মেলন যাই হোক না কেন; বিশ্বের নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপই পরিবেশ বান্ধব হতে হবে। একটি গনসচেতনতা চাই, যাতে করে পৃথিবীটা সবার জন্য বাসযোগ্য হয়ে থাকে। আমাদের প্রজন্ম যাতে একটি সুন্দর পৃথিবীতে থাকতে পারে। আমি বিশ্বের নেতাদের কাছে সেই দাবি জানাই। আমার পৃথিবীকে, আমার ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়ার অধিকার সৃষ্টিকর্তা কাউকেই দেয়নি।
সুমাইয়া আক্তার
ছাত্রী, ডিপার্টমেন্ট অফ বায়টেকনোলোজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং,
ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১১