ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

১২ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় বগুড়ার আদমদীঘি

টিএম মামুন, স্টফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৫৭, ডিসেম্বর ১২, ২০১১

বগুড়া: ১২ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস।

দেশ স্বাধীনের মাত্র ৪ দিন আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে আদমদীঘিকে শত্রুমুক্ত করেন বীর বাঙ্গালীরা।

এ  যুদ্ধে উপজেলার ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

সে সময় আদমদীঘির সান্তাহার রেলওয়ে জংশন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কড়া পাহারা বসিয়ে কারফিউ জারি করে মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের গেরিলা হামলায় পাকসেনাসহ বিশ্বাস ঘাতক রাজাকাররাও পড়ে যায় চরম বেকায়দায়। অবশ্য এর আগেই থানা আক্রমণ করে বেশ কিছূ গোলা-বারুদ আয়ত্ব করে নেয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা।  

উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কুমারপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মহাতাব হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আদমদীঘি উপজেলা ছিল পাক হানাদারের শক্ত ঘাঁটি। পাক সেনা, তাদের দেশীয় দোসর বাহিনীর সদস্যরা মিলিতভাবে মার্চ মাসের শুরু থেকেই গ্রাম থেকে গ্রামান্তর অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

যুদ্ধের শুরুতেই কমান্ডার ফললুল হক, এলকে আবুল, মুনছুর রহমান, আজিজার রহমান, নান্টু, নজরুল ইসলাম, সেনা সদস্য আমজাদ হোসেন, আব্দুল হাকিমসহ অন্যান্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ পরিচালনা করেন।  

তিনি আরো জানান, পাক হানাদারের সাথে কুসুম্বী ও রেল স্টেশনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দফায় দফায় সম্মুখ যুদ্ধে বেশ কিছূ পাক সেনা নিহত হয়। এছাড়া ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হওয়ায় গেরিলা আক্রমন শেষে বিল পেরিয়ে চলে যেতো সেই স্থানে।

উপজেলার শালগ্রাম এলাকার আরেক মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেস আলী সাংবাদিককে জানান, এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকসেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে খুঁজতে থাকে তাদের। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বিশ্রাম নেোয়ার সময় আখিড়া গ্রামের কাছে জমির আইল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, আলতাফ হোসেন, আনোয়ারুল হক টুলু ও আব্দুল ছাত্তারসহ ৪ জনকে ধরিয়ে দেয় গ্রামের দালাল রাজাকাররা।

এ সময় তাদের উপর প্রকাশ্যে চলে হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। এরপর দেশ স্বাধীনের ৬ দিন আগে আদমদীঘি মহাশ্বশ্মান এলাকায় দিনের বেলায় প্রকাশ্যে গুলি করে  তাদের হত্যা করা হয়।

তিনি আরো জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৫ ডিসেম্বর ভোর হতে আদমদীঘি সদর থেকে পাক হানাদাররা রেল লাইনের পাশ দিয়ে হেটে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পালিয়ে যাবার সময় পাইকপাড়া গ্রামের কাছে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছাত্তারকে হত্যা ও কায়েতপাড়ার কাছে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা একরামকে বেয়োনেটের আঘাতে গুরুতর জখম করে। অবশেষে ১২ ডিসেম্বর কোনো প্রকার সংঘাত ছাড়াই বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আদমদীঘিকে হানাদার মুক্ত করেন।

তবে সময় পেরিয়ে গেছে ৪০ বছর, আজও বধ্যভূমিটি করা হয়নি কোনরকম সংস্কার। শুধু তাই নয়, দিবসটি উপলক্ষে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

বাঙলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।