ব্রাহ্মণবাড়িয়া: পঁচা লাশে নাকি সুগন্ধ আছে! মন দিয়ে ভালো করে শুকলে সুগন্ধি নাকে লাগে। মানসিক অশান্তি থাকলে লাশের কাছে গেলে তৃপ্তি পাওয়া যায়!
লাশের পাশে শুয়ে থাকলে মনে পাওয়া যায় পরম শান্তি! এতে ভয়ের কিছুই নেই।
এমন পরিস্থিতিতে শফিক এখন এলাকায় আতংক জাগানো এক চরিত্রের নাম। এলাকাবাসী বলছে- ‘কবরে থাকা লাশের আতঙ্ক!’
এলাকাবাসী বাংলানিউজকে জানান, শফিকের এমন পাগলামিতে সবাই উৎকন্ঠায় থাকেন। পরিবারের দাবি, মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে সে এমন কাজ করছে। আর শফিকের বক্তব্য হচ্ছে, সে পাগল নয়। কবরে থাকা লাশের সাথে তার লেনদেন আছে বলেই তাদের কাছে ছুটে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল গ্রামের জাহের মিয়ার ছেলে শফিক মিয়ার বয়স আনুমানিক ত্রিশ বছর। এক সময় এপার-ওপারের (চোরাচালান) ব্যবসা করতো। বছর খানেক হলো তেমন কোনও কাজ করে না, বাড়িতেই থাকে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে শফিকের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সে তখন কাঁঠাল গাছে। ডেকে পাঠালে হাতে বেশ কয়েকটি কাঁঠাল পাতা নিয়ে চিবুতে চিবুতে ঘরে আসে শফিক।
তার চুল কাটার ধরণটাও অদ্ভূত।
এলাকাবাসী জানান, নয়াদিল গ্রামের কবরস্থান থেকে মাস ছয়েক আগে প্রথম লাশ তোলার চেষ্টা করে শফিক। কিছুদিন আগে মারা যাওয়া হোসেন মিয়া নামে এক ব্যক্তির লাশ উঠানোর জন্য কবর খোড়া শুরু করলে স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলে।
গ্রামের জলিল মিয়া বলেন, ‘কয়েকদিন আগে মধ্যরাতে শফিক আমার মায়ের কবর খোড়া শুরু করে। গ্রামের লোকজন তাকে দেখে সরিয়ে নিয়ে আসে। সে কিছুদিন আগে গ্রামের আলমগীর মিয়ার স্ত্রীর লাশও তুলে আনতে যায়। ’
একই গ্রামের হেলাল মিয়া ও জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘শফিক এমনিতে কোনো পাগলামি করে না। কারো কোনো ক্ষতি বা বিরক্ত করে না। শুধু কবর থেকে লাশ নিয়ে আসতে যায়। গ্রামের লোকজন এ নিয়ে আতঙ্কে আছে। ’
এছাড়া স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি সে কাঁঠাল পাতা, কাঁচা মাছ খায় বলে জানান স্থানীয়রা।
একই সঙ্গে তাকে নিয়ে গ্রামের মানুষের মনে অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারও ডালপালা ছড়াচ্ছে। যেমন নয়াদিল গ্রামের শেখ কানু মিয়া বলেন, ‘শফিক অগ্রিম কথাও বলে দেয়। হুসেন মিয়া নামের এক ব্যক্তির লাশ উঠিয়ে আনার সময় আমি তাকে বাধা দেই। এসময় সে আমাকে বলে, বাড়াবাড়ি করলে তোর বাবা নির্বাচনে ফেল করবে। এ কথা শুনেও আমি তাকে জোর করে কবরস্থান থেকে নিয়ে আসি। পরে ইউপি নির্বাচনের মেম্বার পদে আমার বাবা ফেল করে। ’
এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই শফিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘কাঁডাল (কাঁঠাল) পাতা খাইতাছি। প্রেকটিস অইয়া গেছে। ভিটামিনের লাইগ্যা এই পাতা খাই। নাইলে কবরে যামু কেমনে। কবরের হেরার লগে লেনদেন আছে। এই পইজ্জন্ত পাঁচ জনরে কবর থেইক্কা তুইল্লা আনতাম গেছি। কবর খুইড়া ঘুমাইছি। অহন মাইনসের লাইগ্যা যাইতাম পারি না। ’
কথা বলার সময় খুবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল শফিককে। তবে প্রশ্ন করলে হেসে উঠে শফিক আরো বলে, ‘লাশের গন্ধ সুন্দর। কবরে লাশ পছেনা। বালাই কইরা গন্দ শুনন লাগে। কবরে গেলে কোনো ডর নাই। মাইঝে মইধ্যে অই আমার কবরে যাওয়ন লাগে। ’
শফিকের বাবা জাহের মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে বড় অশান্তিতে আছি। রাতে তার জন্য ঘুমাতে পারিনা। শুধু কবরে চলে যেতে চায়। পুলিশে দিয়েছিলাম। কিন্তু পাগল বলে তাকে থানায় রাখেনি। ’
তিনি আরও জানান, মাস ছয়েক ধরে শফিক অস্বাভাবিক চলাফেরা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। এরপর থেকে মাথায় সমস্যা দেখা দেয়।
তার বাবা আরও বলেন, ‘শফিক কিছুদিন ভারতের আগরতলা জেলে ছিল। পরে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফিরে আসে। আগরতলায় পছন্দ করে বিয়ের পর স্ত্রীর পরিবার তা মেনে নিতে পারেনি। মারধর করে ও মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। সেখানকার জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার পর সে এমন হয়ে গেছে। ’
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহআলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মনে হয় শফিক নামের ওই যুবক মানসিক সমস্যায় ভুগছে এবং তার অবস্থা খুবই খারাপের দিকে। এ ধরনের রোগীরা যে কোনো সময় আত্মহত্যাও করতে পারে। তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১১