ঢাকা: প্রয়োজনে নারীকে দেবী, অপ্সরী, মাতা যা কিছু বিশেষনে অভিষিক্ত করলেও পুরুষ সুযোগ পেলেই বলে থাকে- নারী ছলনাময়ী। প্রেম ও বিদ্রোহের কবি নজরুলের নারী বিষয়ক বিখ্যাত সেই কবিতাটি এখানে উদারণ হতে পারে-
" নারী কভু নাহি চায় একা হতে কারো
এরা দেবী, এরা লোভী
যত পূজা পায় এরা চায় তত আরো
ইহাদের অতি লোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয়- একা পেয়ে সুখি নয়
যাচে বহুজন"
নারী প্রসঙ্গে ইরানি কবি হাফিজের একটি শের হচ্ছে এরকম-
অন্তরে নেই বিশ্বস্ততা, ঠোঁটে যে হাসিই ফোটাক গোলাপ
ভগ্ন হৃদয়ে কাঁদে বুলবুল, হায়রে এখানে শুধুই বিলাপ।
আর রবী ঠাকুর বলেছেন একটু অন্যরকম করে- সুন্দরী হইলে বিশ্বস্ত হয় না, বিশ্বস্ত হইলে সুন্দরী হয় না।
এখানে এসব কথা বলার উপলক্ষ্য করে দিয়েছে প্রায় শতবর্ষী ইতালিয় এক দম্পতির এক ঘটনা।
বছরের একেবারে শেষে এসে অভিজাত বৃটিশ দৈনিক ডেইলি টেলিগ্রাফে ছাপানো ওই ঘটনা সারা বছরের আলোচিত ঘটনাগুলোর অন্যতম হতে যাচ্ছে নিশ্চয়ই। টেলিগ্রাফ জানায়, টানা ৭৭ বছর একসঙ্গে সংসারধর্ম পালনের পর ৯৯ বছর বয়সী এক ইতালীয় তার ৯৬ বছর বয়সী স্ত্রীকে ডিভোর্সের আবেদন জানিয়েছেন আদালতে।
না, নতুন কোনও প্রেমে পড়ার সূত্রে নয়, দাদুমশায় দিলে মারাত্মক চোট খেয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কারণ, স্ত্রীর পরকীয়া।
‘ছলনাময়ী নারী’র প্রতারণা তার মর্মমূলে এতটাই আঘাত হেনেছে যে তা কোনও মতেই বরদাশত করতে পারেননি তিনি।
অ্যান্তোনিও সি নামের ওই ইতালিয় সদ্য পেরিয়ে যাওয়া বড়দিনের আগে পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে গত শতাব্দীর ৪০ এর দশকে তার স্ত্রীর ওই গোপন পরকীয়া সম্পর্কের কিছু প্রমাণপত্র খুঁজে পাওয়ার পর বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।
আইনজীবীরা জানান, স্ত্রী রোসি সি’র অসততার ওই দলিল আবিষ্কারের পর অ্যান্তোনিও পাগলের মত পুরনো ওই চেস্টার ড্রয়ার (যেখান থেকে তিনি ওই ‘মহামূল্যবান’ দলিল হস্তগত করেন) তন্ন তন্ন করে আরও প্রমাণাদির তালাশ করেন।
ষাট বছরের বেশি অর্থাৎ ছয় ছয়টি দশকেরও বেশি অতীত হয়ে গেছে সেই সে প্রতারণা ‘কলংক’ ঘটনার পর, কিন্তু ঘটনা জানার পর প্রায় শতবর্ষী আন্তোনিও তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়েন। কে জানে তিনি মনে মনে সেই বাংলা প্রবচনটি আউড়েছেন কি না, ‘সতী নারীর পতি যেন পর্বতেরই চূড়া/ অসতীর পতি যেন ভাঙা নায়ের গুড়া। ’
অর্থাৎ নারীদের প্রসঙ্গ এলে উন্নত ইউরোপীয় হোক আর ‘অনগ্রসর’ বাঙালি হোক- সব পুরুষের এক মত!
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, পুরুষের মন বলে কথা! কারণ সীতাকেও তো অগ্নিপরীক্ষা দিয়েই রামের কাছে নিজের নিষ্কলুষতার প্রমাণ দিতে হয়েছিল। তবে ইতালিয় ওই দাদীজানও চেষ্টার কম করেননি। তার পক্ষে ভারতীয় কায়দার ওই অগ্নি-পরীক্ষা দেওয়া হয়তো সম্ভব নয়, বা বলা যায় সে সুযোগও নেই- কিন্তু তিনি স্বামীর পদসমীপে ‘ক্ষম অপরাধ মম’ বলে অনুনয়-বিনয় আর অনুশোচনা বিস্তরই করেছেন। কিন্তু গলেনি অ্যান্তোনিওর প্রস্তর-হৃদয়।
ডেইলি টেলিগ্রাফ জানায়, ঘটনা জানার পরপর স্ত্রী রোসি স্বামীর সঙ্গে তার প্রতারণার আদ্যোপান্ত অপরাধ অকপটে স্বীকার করে ক্ষমা চান। কিন্তু অ্যান্তোনিওর কলজেতে বিষয়টা এতটাই গভীর আর জটিল ক্ষত তৈরি করেছে যে রোসি কোনোকিছুতেই স্বামীর কৃপাদৃষ্টি পাননি। শুভ বড়দিন লগ্নে বৃথাই গেছে তার পাপস্বীকার।
রোম আদালতের সূত্রে পাওয়া নথি মতে- রোসি তার গোপন প্রেমিককে ওই চিঠিগুলো লিখেছিলেন ১৯৪০ এর দশকে।
জানা গেছে, আলোচিত এ জুটির চারচোখের মিলন হয় ১৯৩০ এর দশকে যখন অ্যান্তোনিও নেপলস শহরে একজন তরুণ পুলিশ অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। প্রায় ৮ দশক ধরে চলা ‘সুপার গ্লু’র ন্যায় অটুট বন্ধনের পর এ জুটি এখন বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে তারা ৫ সন্তানের বাবা-মা হন। সেসব সন্তান সূত্রে ডজনখানেক নাতি-নাতনি এবং একজন পুতি(great-grandchild) রয়েছে তাদের।
জানা গেছে, ৯৯ বছর বয়সী স্বামীর ৯৬ বছর বয়সী স্ত্রীকে ডিভোর্স আবেদনের এ ঘটনা বাস্তবে রূপ পেলে তা হবে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে নয়া রেকর্ড। থুথ্থুরে বয়সের বুড়ো-বুড়ীদের ডিভোর্সের ক্ষেত্রে এর আগের রেকর্ডটি ছিল বিটেনের বার্টি ও জেসি উডের। আলোচিত ওই ডিভোর্সের সময় তারা দু’জনই ছিলেন ৯৮ বছর বয়সী। ২০০৯ সালে জীবনের শতবর্ষ পূরণের মাত্র ২ বছর আগে তারা তাদের ৩৬ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান।
মাত্র গত বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশের গোয়ালন্দে ঘটা এর বিপরীতধর্মী একটি সংবাদ বাংলানিউজ পাঠকদের ব্যাপক আগ্রহের খোরাক যুগিয়েছিল। প্রকাশিত সচিত্র ওই সংবাদে জানা যায়, রাজবাড়ি জেলার ৭০ বছর বয়সী বিবাহিত তারা মাতুব্বরের প্রেমে পড়েন ফরিদপুরের ১৮ বছর বয়সী তরুণী আসমাউল হুসনা। সফল প্রেমের পরিণতিতে তারা পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। কিন্তু মেয়ে পক্ষ ঘটনা জানতে পেরে মেয়েকে বন্দি করে রাখে। পরে অনেক ঘটনার জন্ম দিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় নবপরিনীতা আসমাউল হুসনা প্রেমিক স্বামী তারা মাতুব্বরের ঘরে গিয়ে ওঠেন নববধূ হিসেবে।
পাঠকদের জন্য ওই নিউজের লিঙ্কটি এখানে দেওয়া হলো।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫২ ঘণ্টা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১