ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

হাওর-বিল সুরক্ষায় বিশেষ প্রকল্প

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩৪, জানুয়ারি ২, ২০১২
হাওর-বিল সুরক্ষায় বিশেষ প্রকল্প

ঢাকাঃ দেশের গুরুত্বপূর্ণ হাওর ও বিল সুরক্ষায় বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকারের মৎস্য বিভাগ। ‘ডিজাস্টার অ্যান্ড ক্লাইমেট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন ফিশারিজ সেক্টর’ নামে এ প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ হাওরের সঙ্গে ৪২টি বিল এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এরমধ্যে মৌলভীবাজার জেলার হাইল হাওরের রয়েছে ২১টি বিল। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এসব মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, আশপাশে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নতকরণ ও জীববৈচিত্র রক্ষার প্রচেষ্টা চালানো হবে।
প্রকল্প পরিচালক ড. সৈয়দ আলী আজহার বাংলানিউজকে জানান, ‘বাংলাদেশে ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছের মধ্যে সিংহ ভাগের প্রাপ্তিস্থান হচ্ছে- বিল ও হাওর-বাওড়। এসব মুক্তজলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে মাছের প্রজনন ঘটে।

প্রকল্পের মাধ্যমে এসব জলাশয়ে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেশে বিরাজমান দেশীয় মাছের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হবে। সেইসঙ্গে জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র রক্ষা করা হবে এই প্রকল্পের কাজ। ’


ড. আজহার আরও জানান, বিদেশি সহায়তায় বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে কারিগরি সহায়তা কার্যক্রমও রয়েছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন করে তোলা হচ্ছে।

অধিক সমৃদ্ধ সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোতে এসব কার্যক্রমের ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের হাইল হাওরের অন্যতম সমৃদ্ধ বাইক্কা বিলে কৃত্রিমভাবে প্রজনন ঘটিয়ে দেওয়ার পর এখন হাওরের সর্বত্র চিতল মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বাইক্কা বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণার পর থেকে সব ধরণের মাছের উৎপাদন বেড়েছে।


সিলেট অঞ্চলে ৮৪৪ বর্গ কিলোমিটার হাওরের মধ্যে কেবল মৌলভীবাজারেই রয়েছে ১৬০ বর্গ কিলোমিটার। এ অঞ্চলের প্রধান হাওর হাকালুকি। সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বড়লেখা ও কুলাউড়া থানা নিয়ে অবস্থিত বিশাল জলরাশি হাকালুকি।  

হাকালুকির পরই হাইল হাওর। ২০.০৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট হাইল হাওরের অবস্থান মৌলভীবাজার জেলায়। গবেষকদের মতে, এক সময় এ অঞ্চলের হাওরগুলো ছিল মৎস্য ও জীববৈচিত্রে ভরপুর।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসছে এসব জলাশয়ের পরিমাণ। সেই সঙ্গে কমছে মৎস্য সম্পদ ও  জলজ প্রকৃতির সাহচর্যে থাকা বিপুল জীববৈচিত্র।

তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে শুধু সিলেটের মৌলভীবাজার জেলাতেই ২০ একরের উর্ধ্বে জলমহাল ছিল ১৩৪টি। ২০ একর পর্যন্ত আয়তনের জলমহাল ছিল ২৫৭টি। বড় ধরণের পুকুর ছিল প্রায় ১২শ’র মতো। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বাস্তবায়নাধীন ‘ডিজাস্টার অ্যান্ড ক্লাইমেট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন ফিশারিজ সেক্টর’ প্রকল্প নানামুখি সংকটে থাকা দেশের বিল ও হাওরগুলোকে তাদের পূর্বেকার রূপে না ফেরাতে পারলেও ভারসাম্য ধরে রাখতে সহায়তা করবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।