বার মাসে তের পার্বণের দেশ এই বাংলাদেশ। যেসব পার্বণ আবহমান কাল থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ বাংগালির মনে আনন্দের ধারা বইয়ে চলেছে, পৌষ পার্বণ সেগুলোরই একটি।
অগ্রহায়ণের নবান্নের রেশ থেকে যায় পৌষের মাঠে মাঠে। তাই অগ্রহায়ণে যেটি ছিল ফসলের মাঠ, পৌষে এসে সেটি রূপ নেয় মেলার মাঠের।
গ্রামে থেকেছেন, এমন বাঙালির কাছে পার্বণের স্মৃতি সমুজ্জ্বল। কিন্তু শহরে যাদের আজন্ম বসবাস, তাদের কাছে পৌষপার্বণ কতটুকু পরিচিত?
আজ সংখ্যায় কম হলেও গ্রামে গ্রামে পৌষ-পার্বনের মেলার ইতিহাস সুদীর্ঘ। খোলা মাঠে অথবা কোনও বট-অশত্থের তলায় পার্বণের মেলা বসে বেশ জানান দিয়েই। এমন দেশজ মেলায় লোকজ সংস্কৃতির পরিবেশন যেন পৌষের মেলাতেই পোক্তভাবে পাওয়া যায়।
নানান স্বাদের রকমারি পিঠা-পুলির আয়োজন যেমন থাকে মেলায় আসা মানুষদের রসনা মেটাতে, তেমনি থাকে নানান লোকজ খেলার প্রতিযোগিতার উত্তেজনা। থাকে রাতভর যাত্রা-পালা, গীত-নাচের শিহরণ। কারুশিল্পীদের জন্য পৌষ-পার্বণ যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল।
ঐতিহ্যের এই ফলগুধারার সঙ্গে শহুরে মানুষদের মেলাতে ‘পৌষমেলা উদযাপন পরিষদ’ ঢাকায় রমনার বটমূলে ২৩ পৌষ (৬ জানুয়ারি) শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী পৌষমেলা। চলবে ২৫ পৌষ (৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত।
মেলায় থাকবে লোকসংগীতের আসর। দেশের লোক ঐতিহ্যের সংগে নাগরিকদের পরিচিত করে তোলার জন্য থাকবে যাত্রা-পালা, সঙযাত্রা, কিচ্ছাকাহিনী। এসবের পাশাপাশি থাকবে আধুনিক নাচ, গান ও আবৃত্তির অনুষ্ঠান।
‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ – এই স্লোগান নিয়ে আয়োজিত হতে যাওয়া এবারের মেলায় থাকছে ৩৫টি স্টল। এসব স্টলে থাকবে পিঠা-পুলি, ক্ষীর-পায়েস, মুড়ি-মুড়কিসহ নানান মুখরোচক খাবারের আয়োজন। হস্তশিল্প-কারুশিল্পের সমাহার থাকবে এই ‘নাগরিক’ পৌষমেলায়।
৬ জানুয়ারি সকাল সোয়া ৭টায় মেলা উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট লোকগবেষক বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এরপর মেলা চলবে সকাল ১০টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় আবার শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
দ্বিতীয় দিনেও মেলা শরু হবে সকাল ৭টায়, চলবে সকাল ১০টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় আবার শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। শেষদিন ৮ জানুয়ারি মেলা শুরু হবে বিকাল ৪টায়, চলবে রাত ৯টা অবধি।
বাংলাদেশ সময় ২০০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১২