ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মালদ্বীপ হেরে যেতে পারে সেন্ট মার্টিনের কাছে

ফজলুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৯, জানুয়ারি ১১, ২০১২
মালদ্বীপ হেরে যেতে পারে সেন্ট মার্টিনের কাছে

মালদ্বীপ যাওয়া হয়নি এখনো। তবে অনেক গল্প শুনেছি।

নীল সমুদ্রের ভাঁজে ভাঁজে জেগে আছে মায়াময় সব দ্বীপ। সেখানে সাগরের শব্দ ছাড়া আর কিছুই বোধের দরজায় কড়া নাড়ে না। জীবনানন্দের কবিতার রূপকল্পের মত সেখানে রাতে শিশিরের শব্দ শোনা যায় কান পাতলে।

চাঁদনি রাতে আকাশ নেমে আসে সাগরের বুকে। সমুদ্রবিলাসী মানুষের মন ভরিয়ে দেয় মালদ্বীপ বাসীদের আতিথেয়তা। অমন নীরব সুন্দর নাকি একা বেশিক্ষণ সহ্য করা যায় না। শেয়ার করতে হয়। মালদ্বীপ বেড়িয়ে এসে অনেকে আমাকে এমন গল্প বলেছেন।

শীতের এক নরম রোদমাখা দুপুরে নাফ নদী আর বঙ্গোপসাগরের একটু অংশ পারি দিয়ে সেন্ট মার্টিন নেমে প্রথমে একটু মন খারাপ হলেও কোলাহলের লোকালয় ছেড়ে সমুদ্রের কাছে গিয়ে মনে হয়েছে মালদ্বীপের সৌন্দর্য হার মানতে পারে এর কদম তলে।

ইস্টিমার থেকে নেমে একটাই পথ, পাকা। মানুষ আর ভ্যানের মিছিল। পুরো ঘটনাটা জেটিতে দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হবে কোথাও কোনও একটা মেলা বসেছে। সবাই ছুটছে সেই দিকে। মানুষের এই মেলা বা মিছিল দেখার জন্যে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্রয়োজন নেই ঢাকাবাসীর। ঢাকা শহরের যে কোনও পথে যে কোনও সময় এখন মানুষের এই যাত্রা দেখা যায়। সেন্ট মার্টিন যেতে হয় অন্য এক সৌন্দর্য দেখতে।

মূল সড়ক থেকে নেমে একটু পথ হাঁটলেই অপার সমুদ্র। নীল জল আর সৈকত জুড়ে প্রবাল পাথর। এখানে সাগরের তেমন হুঙ্কার নেই। তীর ঘেঁঘে বসেছে কত আয়োজন। অনিবার্য প্রয়োজনে কয়েকবার যেতে হয়েছে ভারতের তামিল নাড়ু প্রদেশের মাদ্রাজ। মাদ্রাজের নাম বদলে হয়েছে চেন্নাই। সমুদ্র শহর চেন্নাইয়ের বুকের মধ্যে মেরিনা বিচ। দীর্ঘ বালুর পথ মাড়িয়ে তবেই জলের দেখা মেলে সেখানে।

আর জলের ধারে ঢেউয়ের শব্দের সঙ্গে সমুদ্রের তাজা মাছের ভাজা পর্যটকদের রসনা মেটানোর সঙ্গে মনও ভরিয়ে দেয়। অনেকবার কক্সবাজার গিয়েছি। খুঁজে তেমন আয়োজন পাইনি। এখন অবশ্য অনেক বদলেছে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার। অনেক দালান উঠেছে। আর বিস্তৃত হয়েছে ‘মার্কেট’। অবাক করা ঘটনা হলো, সম্প্রসারিত সবগুলো শপিং মলের নাম রাখা হয়েছে বার্মিজ মার্কেট। আগে কয়েকটি দোকান ছিল। সবগুলোই চালাতো রাখাইন নারীরা। এখন উল্টোচিত্র। সমুদ্রস্নানের অনেক আয়োজন। ওয়াটার বাইক, স্পিডবোট আরও কত কী! কেবল এই বিচে ভাজা মাছ, কাঁকড়ার কোনও আয়োজন নেই।

সেন্টমার্টিনে অন্য কোনও আয়োজন না থাকলেও আছে সমুদ্রের মাছ, কাঁকড়ার গরম গরম ভাঁজা। ঘুরে ফিরে সৈকতে হাঁটতে কোনও ক্লান্তি লাগে না। একটু পরপরই সবুজ ডাবগুলো আপনার তিয়াস মেটাতে প্রস্তুত। নারকেল বাগান আর কেয়াবীথী ঠাণ্ড হাওয়ায় শীতল করে দেবে দেহ, মন। ঢেউয়ের আওয়াজ শোনা যায় এমন দূরত্বে বানানো হয়েছে ছোট ছোট কটেজ। রাত যাপনের দারুণ সব আয়োজন। আর তা যদি হয় জোছনামাখা রাত; তাহলে সেন্টমার্টিন জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।

পুরো দ্বীপ ঘুরে মনে হয়েছে সরকার যদি একটু হৃদয়বান আর যত্মবান হয়, পর্যকটদের জন্যে যদি কিছু বিষয় একটু শিখিল হয়ে যায়- তাহলে কেবল দেশি নয়, বিদেশিদের ভিড়ে নেচে উঠবে দ্বীপটি। একটু কেবল পরিকল্পনা প্রয়োজন। আর প্রচারের জন্যে আমরাতো আছি। আছেন জাদুকর লেখক হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে তার একটি বাড়িও আছে।   সেন্টমার্টিনে কেউ অন্য কারো বাড়ির নাম জানে না। চিনে না। একটি বাড়িরই কেবল খোঁজ করে, দেখতে চায়। প্রশ্ন করে ‘হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি কোনটি’?

একটু ভেবে চিন্তে, হৃদয়বান মানুষ দিয়ে পরিকল্পনা করে যদি সাজিয়ে দেওয়া যায় সেন্ট মার্টিনকে তাহলে মালদ্বীপ হার মানবে। এটা কেবল আমার অভিলাষী মনের কল্পনা নয়- অনেকেই মানেন তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ১১ জানুয়ারি, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।