হংকং: হংকং বিশ্বের ধনী শহরগুলোর একটি। বিলাস আর বৈভবের আতিশয্যে ঝাঁ তকতকে এক বাণিজ্য নগরী এই হংকং।
এখানে আকাশচুম্বি সব দালানে বসবাস করেন সব অভিজাত মানুষেরা। বিলাসী হোটেল আর ব্যয়বহুল বারে ভরপুর এ শহর। কিন্তু ঝাঁ তকতকে শহর হংকংয়ের রাজপথে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যাদের দিকে কারও ফিরে তাকানোর সময় নেই। এরা সব সময়ই উপেক্ষিত। পয়সাওয়ালারা ব্যস্ত আরও পয়সা বানাতে। এদের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে কেউ কখনও সামান্য উদ্যোগও নেয়নি।
তবে উদ্যোগ কেউ নেয়নি তা বললে বোধ হয় ভুল হবে। ছিন্নমূল মানুষদের জন্য রাতে ঘুমানোর এক অভিনব এবং একই সঙ্গে অমানবিকও বলা চলে, ব্যবস্থা চালু হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে। মানুষ হয়েও মানবেতর জীবনাযাপনকারী এসব প্রাণী (!) রাতে ঘুমায় খাঁচায়! তাই বলে বিনে পয়সায় নয়, এজন্য প্রতিমাসে গুনতে হয় কমপক্ষে ২০ ডলার।
হংকংয়ে প্রায় এক লাখ মানুষ এসব ভাড়া করা খাঁচায় জীবন কাটান। এক একটা খাঁচার পরিধি মাত্র ছয় ফুট বাই দুই ফুট। প্রতিটি কক্ষে এরকম ২০ থেকে ২৫টি খাঁচা রয়েছে।
এসব খাঁচার মধ্যে আবার আয়তন ভেদে ভিন্নতা এবং চাহিদার পার্থক্য রয়েছে। একটার ওপর একটা সাজানো খাঁচার মধ্যে নিচের দিকেরগুলোর চাহিদা বেশি, তাই ভাড়াও বেশি। কারণ এগুলো একটু বেশি প্রশস্ত।
সম্প্রতি ব্রিটিশ আলোকচিত্রী ব্রায়ান কেসির ক্যামেরায় উঠে এসেছে আলো ঝলমলে হংকং শহরের ভেতরের অন্ধকার এই দিক।
খাঁচায় বসবাসকারী খেটে খাওয়া মানুষদের টয়লেট ভাগাভাগি করতে হয়। এখানে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। বেশিরভাগ ঘরে নেই রান্নার সুবিধা। তাই বাইরের খাবার কিনে খেতে গিয়েই পকেট থেকে বেরিয়ে যায় উপার্জনের সিংহভাগ।
হংকংয়ের এই খাঁচা ঘরগুলো বহুদিন ধরেই রয়েছে। সরকারের কলঙ্ক হয়ে থাকা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
শাম শিউতে বসবাসকারী একজন খাঁচাবাসীর নাম চিউং। তার কণ্ঠেই ফুটে ওঠে তার বাসস্থানের অসহনীয় আর ভয়াবহ চিত্র। তিনি বলেন, ‘খাঁচায় প্রচণ্ড গরম। এখানে বাস করা এক কথায় অসম্ভব। পা ভাঁজ করে শুতে হয় আমাদের। ভাল মতো ঘুম হয় না। শরীর ভাঁজ করে কষ্ট করে ঘুমালেও মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। আর ঘুম আসে না।
আরও আছে দেয়ালে অজস্র টিকটিকি, ইঁদুর আর তেলাপোকা। মাঝে মধ্যে ভয় হয়, ঘুমের মধ্যে কখন টিকটিকি বা তেলাপোকা কানের ঢুকে পড়ে। ’
উল্লেখ্য, হংকং বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ মানুষ বাস করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১২