ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মাতৃসেবায় হিরো হলেন রবিন

শেরিফ সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩৬, জানুয়ারি ১১, ২০১২
মাতৃসেবায় হিরো হলেন রবিন

প্রতিবছরই জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন ‘হিরো অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে। গত বছর এ পুরস্কার পান ‘রবিন লিম’।

মা ও শিশুদের সেবামূলক কাজের জন্য তিনি এ সম্মাননা পান।

রবিন লিম আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন মিডওয়াইফ বা ধাত্রী। তিনি একাধারে একজন কবি এবং লেখক। ১৯৯৪ সালে রবিন ইন্দোনেশিয়ায় ঘুরতে যান। সেখানকার দরিদ্রদের অবস্থা দেখে তিনি আঁতকে ওঠেন।

বিশেষ করে সন্তান প্রসবের সময় অনেক মহিলা ও শিশুদের মৃত্যু তাকে শঙ্কিত করে। বিশ্বে এভাবে মানব সন্তানের মৃত্যু হবে সঠিক চিকিৎসার অভাবে! এ বিষয়টি রবিনকে অস্থির করে তোলে।

তাই রবিন নিজে থেকেই সন্তানসম্ভবা মায়েদের সেবা শুরু করেন। এ পর্যায়ে রবিন এ বিষয়ে পড়াশোনার তাগিদ অনুভব করেন। ইন্দোনেশিয়ায় ঘুরতে গিয়ে সেখানকার মানুষগুলোকে রবিন বড্ড ভালোবেসে ফেলেন।

এমনকি এ সমস্যাকে তিনি বিশ্বের জন্য ভয়াবহ বলেও চিহ্নিত করেন। তাই রবিন আবার নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে এসেই রবিন মিডওয়াইফ (ধাত্রী) বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।

এবারে পড়াশোনা শেষ করে রবিন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ফিরে যান। গড়ে তোলেন ‘হেলদি মাদার আর্থ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান শুধু দরিদ্রদের স্বাস্থ্য সেবা দেয় না; একাধারে বহু মানুষকে এ বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকে।

জরিপ সূত্র মতে, ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিটি পরিবারের দিনে গড় আয় ৮ ডলার। কিন্তু একটি শিশু জন্মগ্রহণের সময় খরচ হয় ৭০ ডলার। রবিন মনে করেন, ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ নারীরা অর্থের জন্য সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়।

এ প্রসঙ্গে রবিন বলেন, মাতৃ মৃত্যু হার এখানে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছিল। সঠিক পদ্ধতিতে প্রসব না হওয়ার জন্য বহু মা ও শিশু জন্মের সময়েই মারা যায়।

উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর হানা দেয় সুনামি। ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মানুষ পড়ে নিদারুণ দুর্ভোগে। এতে বহু মানুষ ভেসে যায় সমুদ্রে। এমন ভয়ানক সময়ে রবিনের প্রতিষ্ঠানের ডাক্তাররা ভঙ্গুর পথ দিয়ে রওনা দেয় সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে।

কারণ সেখানে অসংখ্য মা ও শিশুরা বন্দী জীবনে পড়েছেন। তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক যে কোনো সংস্থা পৌঁছানোর আগেই এখানে পৌঁছে যায় রবিন এবং তার সেবাদল। সেখানে কোনো রকমে একটি ছনের ঘরে আশ্রয় নিয়ে শুরু করে উদ্ধার কাজ।

প্রথমেই উদ্ধারকৃত মা ও শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনার চেষ্টা চলতে থাকে। অন্যদিকে রবিন লিম বিশ্বের কাছে সাহায্যের জন্য জোরালো আবেদন জানান। বিশ্বের বহু তরুণ ডাক্তার এ সময় রবিন লিমের ডাকে ইন্দোনেশিয়ায় চলে আসে। তারা সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় এমনকি নিজের জমানো তহবিল খরচ করে মানুষের সেবা প্রদানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

তবে খারাপ সময় এখন আর নেই। রবিনের জন্য সেই দূর্গম ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রের কাছে আচেহ শহরে রবিনের সেই ছন ঘরে শুরু করার ক্লিনিকটি অর্থায়নে হয়ে উঠেছে বিশাল দালানের হাসপাতাল। সাধারণ মানুষ সেখানে কম খরচে চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন। এখানে মা ও শিশুদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

ইন্দোনেশিয়ার মানুষ রবিনকে আদর করে ডাকে ‘মাদার রবিন’। বিশ্বে হাজারো মানুষ মা ও শিশুদের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সিএনএন মাদার রবিনকে দেওয়া এ পুরস্কারটি সেই হাজারো উদ্যোক্তাদের সম্মান জানিয়েছেন। রবিন এ পুরস্কারটি গ্রহণের সময় বলেন, পৃথিবীতে প্রতিটি মায়ের তার সন্তানকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রসবের অধিকার তার মানবাধিকারের মধ্যে পড়ে।

সিএনএন হিরো অব দ্য ইয়ারের পুরস্কারটি হাতে নিয়ে ভেজা চোখ আর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে রবিন বলেন, প্রতিটি শিশু শান্তি ও ভালোবাসার প্রতীক। প্রতিটি মা হোক সুস্বাস্থের অধিকারী। প্রতিটি শিশুর জন্ম হোক নিরাপদ। কিন্তু আমাদের বিশ্ব এ অবস্থায় নেই। তাই মানব স্বার্থেই আমাদের এক হতে হবে। আসুন আমরা একসঙ্গে বিশ্বের মা আর শিশুদের জন্য সেবার হাত বাড়িয়ে দেই।

বাংলাদেশ সময় ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।