শেরপুর: ‘বকের সারি কোথা রে/লুকিয়ে গেলো বাঁশবনে...’। শৈশবে পড়া কবিতার এ চরণটি যেন মূর্ত হয়ে আছে নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় গ্রামের ব্রজেন্দ্র বর্মণের বাড়িতে।
দিনভর পাখিদের কুজনে মুখর থাকে বাড়িটি। শুধু বক নয়; ওদের সহচর হিসেবে সেখানে আস্তানা গেড়েছে পানকৌড়িসহ অন্যান্য জাতের পাখিও।
হররোজ কাকডাকা ভোরে ওরা বেরিয়ে পড়ে খাবারের খোঁজে। সন্ধ্যায় গান গাইতে গাইতে ফিরে আসে বাঁশঝাড়ে। বাড়ির মালিক কিছুটা অসুবিধা সত্ত্বেও মেনে নিয়েছেন এই অনাহুত অতিথিদের।
শেরপুর শহর থেকে ৩০ কিমি দূরের গ্রাম বাঘবেড়। প্রায় ১০ বছর আগে ব্রজেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ির বাঁশঝাড়ে আস্তানা গাড়ে বকের ঝাঁক। প্রথমে এক-দু’শো। পরে এ সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়।
প্রকৃতি প্রেমিক ব্রজেন্দ্র ওদের তাড়াননি। ওদের অবাধ বিচরণে কখনও বাধাও দেননি। ফলে দিনে দিনে বেড়েছে বকের সংখ্যা। পর্যায়ক্রমে বকের পাশাপাশি ওই বাঁশঝাড়ে বাসা বেঁধেছে অন্যান্য পাখি।
ব্রজেন্দ্র বর্মণ বাংলানিউজকে জানান, পাখিদের ডানা ঝাপটানির শব্দ আর বিষ্ঠার কারণে প্রথমে তার কিছুটা বিরক্তি এসেছিল। পরে ওদের প্রতি এক ধরনের মায়া জন্মে গেছে।
তিনি জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই তার বাড়িতে আসে পাখি দেখতে। অনেকে শিকারের ধান্দা করলেও ব্রজেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ ও তার ছেলে সতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ এই বক-পাখিদের আগলে রাখেন সন্তানের মতো।
পাখিদের কথা ভেবে ওই বাঁশঝাড় থেকে বাঁশও কাটেন না তিনি। বকের নিরাপদ আশ্রয়ের কারণে ওই এলাকায় ব্রজেন্দ্র বর্মণের বাড়িটি ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত ।
দিনভর ঝাঁকবেঁধে বকের আনাগোনা আর ভোরে বাঁশঝাড়ের নিচে সাপ-বেজি-গুঁইসাপের চঞ্চল ছোটাছুটি সেখানে চমৎকার প্রাকৃতিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়।
তবে চোরা শিকারিদের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বকগুলো। ভোরে ফাঁদ তৈরি করে তারা পাখি শিকার করছে। আবার কারও বন্দুকের গুলিতে লাল হচ্ছে বকের দুধসাদা পালক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১২