ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মুখরোচক ঢাকাই শাহী পান

আলী আজগর খোকন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০৩, জানুয়ারি ১৭, ২০১২
মুখরোচক ঢাকাই শাহী পান

ঢাকা: আগেকার দিনে রাজা-বাদশাহরা শাহী পান খেতেন বলে জনশ্রুতি আছে। নানা গল্পগাথায় রাজ-রাজরাদের পানবিলাসের এন্তার বর্ণনা মেলে।

সেসব পান সাজানো হতো দুর্লভ সব মসলা দিয়ে। মেশানো হতো বহুমূল্য সুগন্ধি।

সেদিন আর নেই। তারপরও রাজধানী ঢাকার আনাচে-কানাচে টিকে আছে দু’একটি শাহী পানঘর। রাজা-বাদশাহদের দিন না থাকলেও এসব শাহী পানঘরে ব্যবসাপাতি মন্দা--এমন কথা বলা যাবে না। পুরান ঢাকার নবাববাড়ি গেটে থাকা একটি শাহী পানঘরে দৈনিক বেচাকেনা প্রায় লাখ টাকা। বিশেষ দিনে পান সরবরাহের অর্ডার পেলে এই অংক গিয়ে দাঁড়ায় ২ থেকে ৩ লাখে। এখানকার দোকানি শেখ মেহবুব আসলাম একথা স্বীকার করেছেন নিজ মুখে।

PAN-SUPARIতার দোকানে প্রতি খিলি পানের দাম ১০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। এত বহুমূল্য পানে কী মেশান-এমন প্রশ্ন করতেই মুচকি হাসেন মেহবুব। দম না নিয়ে বলতে থাকেন কয়েক ডজন স্বাদ বৃদ্ধিকারী মসলার নাম। এ মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোরব্বা, খেজুর, খোরমা, তানশিন, তেরেঙ্গা, চমন বাহার, এলাচ, গুন্তি, তবক, ইমাম, শ্রীকান্ত, নারিকেল, কিসমিস, সেমাই, স্লাচ, ঝুড়া ইত্যাদি। তিনি বলেন, এসব মসলার সবক’টি দেশে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বেশি আমদানি করতে হয় পাশের দেশ ভারত থেকে। তবে তাঁর দোকানে এক ধরণের তরল মসলা আছে যা তিনি নিজহাতে বানান। এটার নির্দিষ্ট কোনও নাম নেই- তারা এটাকে মসলার রস বলে। এই রসই তার দোকানের বিশেষত্ব।

শেখ মেহবুব আসলাম জানান, ঢাকার নবাব হাবিবুল্লাহ মিষ্টি পান খুব পছন্দ করতেন। তাঁর নির্দেশে ও পৃষ্ঠপোষকতায়ই ১৯১৮ সালে নবাববাড়ির গেটে দোকান দিয়েছিলেন দাদা শেখ শামসুদ্দিন। তখন তিনি নবাববাড়ির কর্মচারী। এ দোকান থেকেই বহুমাত্রিক মসলার সমাহারে শাহী পান বানিয়ে খাওয়াতেন নবাবকে। নবাবের অন্দরমহলেও ছিল পানের বেশ কদর। শেখ শামসুদ্দিন মারা গেলে বড় ছেলে শেখ আব্দুর রহমান নেন দোকানের দায়িত্বভার। তাঁর মৃত্যুর পর দায়িত্ব পান ছোট ছেলে শেখ আলাউদ্দিন। তিনি মারা গেলে দায়িত্ব পান শেখ আব্দুর রহমানের বড় ছেলে শেখ আব্দুল করিম। তিনি মারা যাওয়ার পর এখন দোকানের হাল ধরেছেন শেখ মেহবুব আসলাম নিজে। এভাবে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে শাহী পানের এই ঐতিহ্য। এখন ২৬ সদস্যের একটি যৌথ পরিবারও টিকে আছে এ পান দোকানের ওপর ভর করেই। সহায়-সম্পত্তিও করেছেন বেশ। তিনি বলেন, আগে নবাবের দক্ষিণায় থাকতাম নবাববাড়িতে। এখন মিরপুরে নিজের বাড়িতে থাকি।

PAN-SUPARIশেখ মেহবুব নিজে পান খান না। অথচ অসাধারণ স্বাদু সুগন্ধী খিলিপানের জাদুকর তিনি। তার হাতে বানানো পান খেয়ে স্বাদ পাননি এমন ব্যক্তি নেই। হাসিনা-খালেদা-এরশাদ থেকে শুরু করে প্রথমম শ্রেণীর রাজনীতিকরা তার হাতের পান খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন। এখনও পুরান ঢাকায় কোনও অনুষ্ঠান-প্রোগ্রাম হলে ডাক পড়ে শেখ মেহবুবের। সম্প্রতি মেহবুবের দোকানের সামনে গিয়ে লক্ষ্য করা গেছে, পান নিয়ে ৪ জনের ব্যস্ততা। আর বিদ্যুৎগতিতে দুহাতে পানে বহুমূখি মসলা ছিটিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যারা প্যাকট করছেন তারা শেখ মেহবুবের ভাতিজা। আর দুই ছেলে অর্ডার নেওয়া, কাস্টমারের কথা শোনা এবং পান সরবরাহের কাজে ব্যস্ত আছেন। তবে বাপ-দাদার ঐতিহ্যের প্রতি সন্তানদের ঝোঁক কম বলে জানান শেখ মেহবুব। এজন্য নিজে ভেতরে ভেতরে কষ্ট অনুভব করেন। পরবর্তী বংশধরদের হাতে দোকানটা টিকে থাকবে কিনা- তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।

দোকানের পাশে ২০ টাকা দামের খিলির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা পুরান ঢাকার বাসিন্দা ইমরান বলেন, এ দোকান থেকে আমার বাবা আগে শাহী পান নিতেন। এখন আমি নিই। দিনে অন্তত ২০টি মিষ্টি পান লাগে। মাঝে মাঝে বাড়ির সবার জন্যও শাহী পান নিয়ে যাই। আমার নানী মিষ্টি পান খুব পছন্দ করেন। আর আমার ৭ বছরের ছেলে জুনায়েদও। অনেক বাচ্চা বাজার থেকে এলে চকলেট বা বিস্কুট-চানাচুর তালাশ করে। কিন্তু আমার ছেলে মিষ্টি পানের কথা জিজ্ঞেস করে। পান খেয়ে মুখ লাল করে। আমারও দেখে ভালো লাগে।

শেখ মেহবুব বলেন, প্রায় শতবর্ষ ধরে চলছে আমাদের এ শাহী পানের দোকান। তার পানের স্বাদের বিশেষত্ব কী জানতে চাইলে মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। পরে দুটি খিলি হাতে তুলে দিয়ে বলেন, এবার খাইয়া দেখেন, তাইলেই বুঝবেন। এখানে পানির মতো যে মসলাটা দিই সেটাই আমার পানের খিলির মূল স্বাদ আনে।

শেখ মেহবুবের দোকান ছাড়াও পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারে অর্ধশতবর্ষী আরেকটি শাহী পানের দোকান আছে। এই দোকানের মালিক নোকুল দেবনাথ। পঞ্চাশের দশকে শাঁখারির ব্যবসা ছেড়ে ধরেন শাহী খিলি পানের দোকান। দোকানটি জনপ্রিয়তাও পায় সমানতালে। আগের সেই ঝুপড়িঘর এখন নানা ধরণের প্রসাধনীতে পূর্ণ। এখন দোকান চালান তার ছোট ছেলে বাপ্পী দেবনাথ। তিনি বলেন, বাবার একসময় পথে বসে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখনই তিনি পানের খিলির দোকান ধরেন। সেই থেকে চলছি। আমাদের আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সব ভাই-বোনের বিয়ে-শাদি, সংসার সবই চলছে- এই দোকানের ওপর ভর করেই। এখন অনেক ভালো আছি।

তিনি জানান, তার দোকানে ২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দামের পর্যন্ত খিলি আছে। এর মধ্যে নরমাল শাহী খিলি ২০ টাকা। আর বেনারসী খিলি ২৫০ টাকা। খিলির দাম কীভাবে নির্ধারণ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসলার কমবেশির ওপরই মূলত নির্ভর করে কোনটার দাম কত। তাছাড়া খিলির জন্য বিশেষ পানও আমদানি করতে হয়। বেনারসী পানের জন্য ভারতের বেনারস থেকে আসা পান ও সুপারি দেওয়া হয়। আর খিলিটি বানানো হয় অন্তত ২৫ পদের মসলা দিয়ে। তিনি বলেন, এমন এমন মসলা দেওয়া হয়- যাতে ক্রেতার পুরো টাকা উসুল হয়ে যায়। পান মুখে দিলে মুখের ভেতরেই মিলিয়ে যাবে। চিবানোর সময় পিক ফেলার দরকার পড়ে না। যত চিবানো হবে, তত মোলায়েম এবং স্বাদ বাড়তে থাকবে। তিনি নিজেও শখ করে সপ্তাহান্তে দু’চারটা খিলির আস্বাদ নেন বলে জানান।

PAN-SUPARIএকসময় পুরান ঢাকায় আরো কিছু ঐতিহ্যবাহী পানের খিলির দোকান ছিল। সদরঘাটের সেই পানের খিলির অস্তিত্ব আর নেই। ঐতিহ্যকে পুঁজি করে কেবল বাণিজ্যমোহে রাজধানীতে শাহী পানের খিলির কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। এসব কাকরাইলের শান্তিনগর, গুলশান, ধানমণ্ডি এবং মোহাম্মদপুরের বিহারি কলোনি এলাকায় পাওয়া যায়। বেশ প্রচারণা চালিয়ে বসানো হয়েছে এসব দোকান।

শান্তিনগরের ৩টি দোকানে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দামের খিলি আছে। এরা অন্য কোনও ব্যবসা করে না। পানের খিলিই বিক্রি করেন প্রায় ৩০ বছর ধরে। সিরাজ স্টোরের পান বিক্রেতা মো. রাকিব জানান, তার বাবা সিরাজ মিয়া প্রায় ৩০ বছর আগে ওমানে ছিলেন। ওমান থেকে দেশে ফিরেই ধরেন পানের খিলির ব্যবসা। অদ্যাবধি সেটাই চলছে। গ্রামের বাড়ি ইটের গাঁথুনি দিয়েছেন পানের খিলির বদৌলতেই।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময় শাহী পান বিক্রি হয়- বিয়ে বা উৎসব-অনুষ্ঠানে। মাস দুয়েক আগে তার দোকানে একদিনে সর্বোচ্চ বিক্রি হয় ৬০ হাজার টাকার খিলি পান। তবে এসব দোকানেv শাহী খিলির ধরণ ও স্বাদ আলাদা। পুরান ঢাকার খিলির সঙ্গে এসব দোকানের পানের খিলির মসলা ও দামের বেশ পার্থক্য রয়েছে। এখানে শাহী পান মাত্র ১০ টাকা। শাহজাদী ২০ এবং বেনারশ ৩০। আর বোম্বে মাসালা খিলি বিক্রি হয় ৫০ টাকায়।

মসলার বাহার
শাহী খিলিপানে যেসব মসলা মেশানো হয় সেগুলো হচ্ছে- তানশিন, তেরেঙ্গা, চবন বাহার, এলাচ, গুন্তি, তবক, ইমাম, শ্রীকান্ত, নারিকেল, কিসমিস, সেমাই, স্লাচ, ঝুড়া, মিক্সার, মোরব্বা, খেজুর, খোরমা,  সেমাই, এলাচ, দারচিনি, লং, গোলমরিচ, পিপারমেন্ট, লাউ। তবে দোকানিরা অনেক মসলার নামই বলতে রাজি হননি প্রতিবেদকের কাছে। বাপ্পী নাথ জানান, এমন অনেক মসলাই আছে, যেগুলোর নাম তাদেরও জানা নেই। কেবল পানে মসলার আইটেম ও স্বাদ বাড়ানোর জন্যই দেন তারা।

অনেক দেশেই প্রিয়
পান-সুপারী আর নানান মশলা দিয়ে তৈরি একখিলি পান খেতে উৎসুক মানুষের দল শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। এরমধ্যে ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, দক্ষিণ চীন, তাইওয়ারন, ফিলিপাইন, পশ্চিম ভঅরতীয় দ্বীপপুঞ্জ, আফ্রিকার কিছু দেশ উল্লেখযোগ্য। তাইওয়ানে তরুণীরা রাস্তার ধারে ধারে ছোট্ট পান দোকান নিয়ে বসেন যা সেখানের এক পরিচিত দৃশ্য। পান সুন্দরী (তাইওয়ানি ভাষায় বিংলাং ঝি সি অর্থাৎ বেটেল নাট গার্ল বা বেটেল বিউটি) তাইওয়ানি সংস্তৃতির অতি পরিচিত অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। পান সুন্দরীদের নিয়ে সেদেশে রচিত হয়েছে নাটক, নভেল, বানানো হয়েছে সিনেমাও। তবে পান-সিগারেট ও পানীয় বিক্রেতা এসব তরুণীদের সংক্ষিপ্ত পোশাক-আশাক নিয়ে তাইওয়ানি সমাজে বিতর্কও আছে।

অভিজাত পানের দোকান ‘পান সুপারী’

PAN-SUPARIঢাকার বিভিন্ন এলাকার শাহী পান দোকানের পাশাপাশি ‘পান সুপারী’ নামের অভিজাত প্রতিষ্ঠানটি বেশ নাম করেছে। বিভিন্ন এলাকায় তাদের কয়েকটি শাখা রয়েছে।

পান সুপারী’র কর্ণধার কণা রেজা বাংলানিউজকে জানান, মূলত দেশীয় ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই তাদের এ প্রয়াস। আমাদের দেশে পান একসময়ে ভূড়িভোজের পর হজমকারক উপাদান হিসেবে ব্যবহার হতো। এখন যেমন, খাওয়ার পর বিভিন্ন মিষ্টান্ন বা বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়র চল রয়েছে।     

২০০৩ সালে ধানমন্ডির মমতাজ প্লাজায় পান সুপারীর প্রথম দোকানটি যাত্রা শুরু করে। এরপর গুলশান, বসুন্ধরা সিটি, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বনানীতে শাখা খোলেন। গুলশানের শাখাটি বন্ধ করে বনানীতে শাখা করা হয়েছে।
তিনি জানান, তার দাদা-দাদী, নানা-নানীসহ পরিবারের মুরুব্বীরা সবাই পান খেতেন। সে হিসেবে তিনিও পান রসিক। একপর্যায়ে ভাইবোনদের উৎসাহে পান সুপারীর যাত্রা শুরু করেন।

তিনি বলেন, আমি খুবই সন্তুষ্ট য়ে পান সুপারীর মাধ্যমে আমাদের একটি ঐতিহ্যকে দেশি-বিদেশিদের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে পেরেছি। বিমানবন্দর শাখা ও ঢাকার সোনারগাঁ হোটেলে বিভিন্ন  অনুষ্ঠানে তার প্রতিষ্ঠানের পান সরবরাহের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্য পানকে বিদেশিদের আড়ম্ভরের সঙ্গে কাছে উপস্থাপন করা গেছে।

তবে পানের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের সুপারী দেওয়া হয় না। আর পানে ক্ষতিটা হয় সুপারীতে।

কিন্তু সুপারী ছাড়া পান কী রকম লাগে! ‘পান খাইতে সুপারী লাগে আরো লাগে চুন...’ জনপ্রিয় একই গানের কথা তো তাহলে পান সুপারীতে এসে ভুল প্রমাণ হয়ে গেল!

না, আমরা কিন্তু এমনিতে পানে সুপারী দেই না। তবে কেউ চাইলে তাকে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, সঠিক মশলার প্রয়োগে যত্নের সঙ্গে পান বানাতে তিনি ভারত থেকে ১০ জন কারিগর এনেছেন। সঙ্গে রয়েছে বেশ কয়েকজন দেশি কর্মী।

গত বছর থেকে তারা পানের বিভিন্ন মসলাও উৎপাদন শুরু করেছেন বলে জানালেন কনা রেজা। ভারতীয় বিভিন্ন মসলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে তাদের তৈরি মসলা- পান সযপারী, পানবাহার, ময়ূরমূখী, পঞ্চরস, নবজ্যোতি প্রভৃতি।    

চিকিৎসকের অভিমত

সপারী চিবুনো মানুষের প্রাচীনতম অভ্যাসগুলোর একটি। খ্রীস্টিয় প্রথম শতাব্দীতে সংস্কৃতে লিখিত চিকিৎসা শাস্ত্র বিষয়ক লেখালেখিতে বলা হয়েছে- সুপারীতে ১৩টি ভেষজ গুণ রয়েছে। এগুলো হলো- সুগন্ধি, ঝাঁঝ, তেঁতো, নোনতা, মিষ্টতা প্রভৃতি। এছাড়া আছে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার গুণও।     

অপরদিকে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে খিলিপান উপকারী কোনও খাদ্যবস্তু নয়। নেহায়েত আয়েশ আর বিলাসিতায় পড়ে পান চিবায় মানুষ। তবে শুধুই পানের পাতা চিবুলে ওষধিগুণ পাওয়া যায়।

তবে নিয়মিত পান খাওয়া নিয়ে বিপদসঙ্কেতের ইঙ্গিত দিয়েছেন ডাক্তাররা। তারা বলেছেন,  বাহারি মসলায় রসে টস টস পান খেয়ে ক্যান্সারকে নিজের শরীরে ডেকে আনা ছাড়া এটা আর কিছু না। মেডিকেল সায়েন্স কখনোই পান খাওয়ার স্বীকৃতি দেয়নি। পানে ব্যবহৃত সুপারিতে উত্তেজক উপাদান থাকে। ফলে পান খাওয়ার পর দেহে উত্তেজনার অনুভূতি জাগে। এ কারণে অনেক সময় অ্যাজমা বেড়ে যাওয়া, হাইপারটেনশন বা রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, ট্যাকিকার্ডিয়া বা নাড়ির স্পন্দন বেড়ে গিয়ে অস্থিরতা অনুভূত হতে পারে।

ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ক্যান্সার স্পেশালিস্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক কনসালট্যান্ট ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন বলেন, প্রত্যেক পানেই সুপারি এবং চুন মেশানো হয়। আর মুখাভ্যন্তরের ক্যান্সারের জন্য প্রধান দায়ী উপাদান হচ্ছে চুন-সুপারি। এর সঙ্গে জর্দা-তামাক তো আছেই। এসবের বিক্রিয়ার কারণে মুখের অভ্যন্তরে এবং খাদ্যনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তা ছাড়া পানে অধিক লালের জন্য ব্যবহৃত খয়ের এসট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে মুখের আবরণীকে সংকুচিত করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪, ১৭ জানুয়ারি, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।