ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মঙ্গলের শিলাখণ্ড পৃথিবীতে, বিজ্ঞানীদের মাঝে আনন্দ

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:২৭, জানুয়ারি ১৯, ২০১২
মঙ্গলের শিলাখণ্ড পৃথিবীতে, বিজ্ঞানীদের মাঝে আনন্দ

‘এটা যেন জানুয়ারি মাসে বড়দিনের আনন্দের মত!’

ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা স্পেস ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও নাসার সাবেক বৈজ্ঞানিক অ্যালেন স্টার্ন যে বিষয়টিকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তা স্রেফ একটি শিলাখণ্ড হলেও তার দাম সোনার চেয়েও বেশি। এটি মঙ্গলগ্রহ নিয়ে গবেষণারত রুশ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাসাসহ দুনিয়ার সব মহাকাশ বিজ্ঞানীর জন্যই খুব আনন্দের সংবাদ।

কারণ, মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণার কাজে ওই শিলাখণ্ডগুলো যে এক দুর্লভ আর মহার্ঘ বস্তু- তাতে কারও কোনো সন্দেহ নেই।
উল্লেখ্য, এ যাবত নাসা বা রাশিয়ার কোনো মহাকাশযানই মঙ্গলপৃষ্ঠ থেকে তার মাটি বা শিলার নমুনা আনতে পারেনি।
 
বিজ্ঞানীদের মতে- উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে সম্প্রতি পাওয়া মোটমাট ৭ কিলোগ্রামেরও কম (১৫ পাউন্ড) ওজনের শিলাখণ্ডগুলো আসলে মঙ্গলগ্রহ থেকে ছুটে আসা যা উল্কাপিণ্ড আকারে পৃথিবীর বুকে আছরে পড়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত উল্কাবৃষ্টির সময়ে পৃথিবীপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছিল।

হিন্দি দৈনিক নবভারতটাইম্স এর অনলাইন সংস্করণে বলা হয়- পৃথিবীতে এটা পঞ্চমবারের মত ঘটনা যখন বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে মঙ্গলগ্রহের কোনও শিলাখণ্ড যা টাটকা পৃথিবীর বুকে এসে পড়েছে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষও বলছেন যে তারা ওই শিলাখণ্ডগুলো মাটিতে আছড়ে পড়তে দেখেছেন। ৬মাস আগে আগুনের গোলার মত ওই শিলাখণ্ডগুলো পৃথিবীপৃষ্ঠে আছড়ে পড়লেও ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বৈজ্ঞানিক আর সংগ্রাহকরা এই শিলাখণ্ডগুলোর ব্যাপারে প্রচণ্ড উৎসাহ দেখাচ্ছেন। এ কারণে এর দামও উঠে যাচ্ছে আকাশ ছোঁয়া। ওই শিলাখণ্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির ওজন ১ কিলোগ্রাম।

কোথা থেকে আসছে- এটা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণাগার, বিশ্ববিদ্যালয়, যাদুঘর ওই শিলাখণ্ডগুলোর জন্য অকল্পনীয় দাম দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে। এর মধ্যে নাসাও আছে।

লোহিত গ্রহ থেকে শিলাগণ্ডগুলো ছুটে এসেছে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এগুলো স্থানীয় এক ব্যবসায়ী কিনে নেন। পরে ওই খণ্ডগুলো তিনি অনেক অনেক গুণ বেশি দামে বিক্রি করে দেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই পাথরগুলো তাদের ওজনের দশগুণ স্বর্ণের চেয়েও বেশি দামি।

ক্রিস হার্ড নামে একজন গবেষক (যিনি ওই ‘অমূল্য‘ পাথরখণ্ডগুলো থেকে কণামাত্র হস্তগত করতে পেরেছেন) বলেন, ‘এটা হচ্ছে মঙ্গল থেকে পাঠানো একটি “ফ্রি স্যাম্পল”, তবে এটা পাওয়ার জন্য শুধু আপনাকে এর ডিলারকে যথোপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হবে। ’

জ্যোতির্বিদদের মতে- ওই খণ্ডগুলো লক্ষ-কোটি বছর আগে মহাকাশীয় কোনও বস্তুর সঙ্গে মঙ্গলের সংঘর্ষে ছুটে বিচ্ছিন্ন হওয়া গ্রহটির শিলার অংশবিশেষ। এগুলো এতকাল মহাকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এবং সর্বশেষ পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণজনিত বলের প্রভাবে উল্কাপিণ্ড হয়ে খসে পড়েছে পৃথিবীরই বুকে। বাকিগুলো বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে জ্বলে ছাই হয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত এগুলো জ্বলে শেষ হওয়ার আগেই ভূ-পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে। ফলে ভষ্মে পরিণত হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৩ ঘণ্টা, ১৯ জানুয়ারি, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।