ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গল্পের বাস্তব রূপ!

জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৩৮, জানুয়ারি ২০, ২০১২
বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গল্পের বাস্তব রূপ!

ঢাকা: ভারতের পাহাড়ি ছোট্ট রাজ্য মেঘালয়। এখানে এখনও সেই প্রাগৈতিহাসিক কালের মাতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।

এ ঘটনা যেন অনেকটাই বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গল্পের বাস্তব রূপ।

তবে মাতৃতন্ত্রে এরা আরো একধাপ এগিয়ে। এখানে সম্পদ বণ্টন হয় মা থেকে মেয়ের দিকে। পুরুষরা বঞ্চিত হয়। অনেক পুরুষ এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে রীতিমত আন্দোলনে নেমেছে সংঘবদ্ধ পুরুষেরা।

ইউরোপীয়রা প্রথম যখন এখানে আসে তখন এই রাজ্যের সর্পিল স্মৃতিজাগানিয়া পাহাড় দেখে ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’ নামে ডাকা শুরু করে তারা।

ঘটনাক্রমে এই রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের বাজার এখন স্কটল্যান্ডের পশমী যা স্থানীয়ভাবে হস্তচালিত তাঁতে বোনা চাদরে (শাল) সয়লাব। বিশেষ করে শরৎকালে যখন একটু করে শীত পড়তে থাকে তখন এই শাল বাজারে আসতে থাকে। এই শাল এখানে ব্যাপক জনপ্রিয়।

রাজধানী থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে চেরাপুঞ্জিতে বছরে রেকর্ড ২৬ মিটার বৃষ্টিপাত গিনেজ বুকে নাম উঠিয়েছে।

তবে এসবের আড়ালে সবচে মজার যে বিষয়টি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হচ্ছে স্থানীয় খাসী উপজাতির মধ্যে প্রচলিত অদ্ভুত সমাজ ব্যবস্থা ও সংস্কৃতি। ১৯৬০ এর দশকে বুদ্ধিজীবীদের একটি গ্রুপের আন্দোলনের ফসল এটি।

তারপর থেকে এ অঞ্চলে প্রচলিত এই সংস্কৃতিতে বাকি বিশ্বের উল্টো ঘটনা ঘটছে। এখানে পুরুষরা নানাভাবে বঞ্চিত। বঞ্চনার শিকার পুরুষরা অধিকার আদায়ে আন্দোলনে নেমেছে পর্যন্ত।

সিংখং-রিমপেই-থিমাই নামে একটি পুরুষ অধিকার সংগঠন রয়েছে এখানে। এর প্রেসিডেন্ট কিথ পারিয়াত।

প্রেসিডেন্ট পারিয়াত তার সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে যাতে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় তাই স্পষ্ট করে বলেন, নারীদের ছোট করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা শুধু চাই নারীরা বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে পুরুষদের ঠিক ওই অবস্থানে নিতে।

পারিয়াতের বাবার দেওয়া ডাক নাম হৈরিক (অবিচলচিত্ত)। তিনি এই পুরনো রীতিকে মানতে নারাজ। এই সংস্কৃতির কারণে পুরুষরা তাদের আত্মিক সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলছে, অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি।

এই সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়েদের প্রতি কেমন পক্ষপাতিত্ব করা হয় বা তারা কতোটা সুযোগ সুবিধা পায় তা দেখতে হাসপাতালে গেলে কিছুটা টের পাওয়া যায়।

হাসপাতালে মেয়ে শিশু জন্মালে ওয়ার্ডের বাইরে থাকা পরিবারের লোকজন উল্লাস করে। আর যদি শোনে ছেলে হয়েছে তাহলে মিনমিন করে বলে, ‘ঈশ্বর যা দিয়েছেন ঠিকই দিয়েছেন’।

পুরুষের প্রতি এরকম বৈষম্যের ভূঁড়িভূঁড়ি উদাহরণ আছে এই সমাজে। এই বৈষম্যের প্রভাব খাসী ভাষা, সংস্কৃতির মধ্যেও স্পষ্ট।

যেমন, তারা একটি গাছকে পুং লিঙ্গ মনে করে কিন্তু শুকিয়ে কাঠ হলে বলা হয় স্ত্রী লিঙ্গ। একই ভাবে বিশেষ্য পদেও রয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য। অকেজো কিছু ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠলে সেটা স্ত্রী লিঙ্গ হয়ে যায়। সংস্কৃতিটাই এমন যেনো পুরুষরা নিজেদের অবাঞ্চিত ভাবতে বাধ্য।

তবে এখানকার নারীরা এই ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় না। শিলংয়ের একটি দৈনিকের সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া মুক্কুম জানালেন, তার সমাজে এই ঐতিহ্য চালুর বড় কারণ হলো রাজনীতিতে নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়া থেকে নারীদের বাদ দেওয়ার প্রবণতা এখনও বেশ প্রবল।

খাসী মেয়েরা অবশ্য তাদের অবস্থা নিয়ে বেশ খুশিই। একজন নারীর একাধিক পুরুষের সঙ্গ পেতে কোনো বাধা নেই। উপরন্তু একই সঙ্গে মা হওয়া এবং সফল স্বনির্ভর নারী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে এই সংস্কৃতি।

তবে এই বাড়াবাড়ির সংস্কৃতিতে পুরুষরা মোটেও খুশি নয়। তারা নারীর কর্তা নয় অন্তত সমান অধিকার চায়। সম্পত্তিতে সমান অধিকার পেতে চায়। অনেক ছোট বয়সেই পুরুষদের তাদের বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতে যেতে হয়। এ কারণে পড়াশোনা হয় না তাদের। এভাবে পিছিয়ে যেতে চায় না পুরুষরা। তাই পুরুষ অধিকারের আন্দোলন মেঘালয়ের এই অঞ্চলে জোরদার হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।