মৌলভীবাজার : মুখ ও পা লাল রঙের। শরীরটা গাঢ় ও হালকা নীল।
ফি বছর মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওরে এভাবেই দিন কাটে অনিন্দ্য সুন্দর আমুদে স্বভাবের পরিযায়ী পাখি কালেমের। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি মওসুমেই ওরা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বিল-ঝিলে ভিড় জমায়।
অন্যান্য অতিথি পাখি বা দেশীয় পাখির সঙ্গে এরা মিলেমিশে থাকে। দিনের অনেকটা সময় কাটে কচুরিপানার মধ্যে। রোদ পোহানোর জন্য বিল তীরের হিজল, করচ গাছে দলবেঁধে গিয়ে বসে।
কালেম অনেকটা আমাদের দেশি পাখি ঘুঘুর মতো করে ডাকে। কিছুক্ষণ পর পর এই ডাক জানান দেয় ওদের অস্তিত্ব।
দিনের বেলায় পাখিগুলোর খাবার সংগ্রহের ব্যস্ততা, খুনসুটি, ডুবসাঁতার, ঝাঁকে ঝাঁকে দলবদ্ধ হয়ে ওড়ার দৃশ্য মনকাড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের। সন্ধ্যায় দলবেঁধে ওরা ফিরে যায় বিলতীরের হিজল, করচ, আড়ংসহ বিভিন্ন গাছের বাসায়।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখির কলকাকলিও বাড়ে। একটু ওম, খাবারের নিশ্চয়তা আর নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় যুঁথবদ্ধভাবে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ওরা আসে এখানে।
হাকালুকি হাওরের চকিয়া বিল, হাওয়া বিল, ফুট বিল, হিংগাইজুর বিল, পিংলা বিল, বিরালি খাল, হাওর খালবিল, কালাপানি বিল, বোয়ালজুর বিল, নাগুয়া-ধুলিয়া বিল, জালক্ষা বিল, বালিজুরি বিল, পালোভাংরা বিল, চাতরা বিল, নামা তুরল বিল, ফোয়ালা বিল ও উজান তুরল বিলসহ ১৭টি বিলে কালেমসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি পাখিরা ভিড় করে।
২০০১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ও দেশের সবচেয়ে বেশি পাখির সমাবেশস্থল হাকালুকি হাওরে দু’দিনব্যাপী জলচর পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় পাখি বিশেষজ্ঞরা ৬১ প্রজাতির ৬৪ হাজার ২৮২টি পাখি গণনা করেন।
দু’দিনব্যাপী ওই পাখিশুমারি শেষে প্রাথমিক ফলাফলে ৬৪ হাজার ২৮২টি পাখির দেখা মেলে। ৬১ প্রজাতির পাখির মধ্যে সবেচেয়ে বেশি দেখা গেছে ‘বামনিয়া’। যার ইংরেজি নাম টাফটেড ডাক। এদের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৬৫টি।
বাংলাদেশ সময় : ১৮৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১২