নান্দাইল(ময়মনসিংহ) : দেখেছেন কয়েক যুগ, কাল। পেরিয়েছেন শতবর্ষ।
বাংলা ১৩০৩ সনে ফুলজানের জন্ম । ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী ফুলজান। প্রায় ৪৫ বছর আগে মারা গেছেন স্বামী। ৯ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আজিম উদ্দিন ১২ বছর আগে ৬৫ বছর বয়সে মারা গেছেন এবং মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়ে মনোয়ারা মারা গেছেন ৫৫ বছর বয়সে।
কেমন আছেন ফুলজান- জিজ্ঞেস করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুইটি সন্তান মারা গেছে। কিছুদিন হলো এক নাতিও মারা গেছে। অথচ, এখন তো আমার মারা যাওয়ার কথা। ভাল নেই, ভাল কী করে থাকি? যখন ভাবি এ পৃথিবীতে কেন আসলাম, আবার কেন চলে যাইবো- এর কিছুই হিসেব মেলে না। ’
ফুলজানের মতে- এখন অল্প বয়সে নানা রোগশোকে মানুষ মারা যাচ্ছে। এখন সব কিছুতেই ভেজাল। আবহাওয়ায় ভেজাল, খাদ্যে ভেজাল এবং মানুষের মনের মধ্যেও ভেজাল।
বললেন, ‘আগে মানুষের মন ছিল সাদা। খাদ্যও ছিল তরতাজা। জিনিসের দামও ছিল কম। এখন জিনিসের দাম বেশি, মানুষের মনে প্যাঁচ। মিথ্যার ছড়াছড়ি। ’
খুবই সদালাপী ও হাসি-খুশি স্বভাবের মানুষ ফুলজান । এখন তেমন চলাফেরা করতে পারেন না। বসতঘর আর উঠোন তার বিচরণ ক্ষেত্র। চলাফেরায় পরিবারের সদস্যদের সহায়তা নেন।
স্বামীর স্মৃতি প্রসঙ্গে ফুলজান বলেন, ‘বেশি সময়ই মনে পড়ে মানুষটার কথা। নয় বছর বয়সে তাঁর সাথে বিয়ে হয়। আমার বাবার বাড়ি আর স্বামীর বাড়ি ছিল পাশাপাশি। বিয়ের তিন বছর পর অনুষ্ঠান করে তুলে দেয়া হয় স্বামীর বাড়িতে। একদিকে ওড়িয়ারা পালকি দিয়ে আমাকে স্বামীর বাড়ি দিয়ে যেতো অন্যদিকে আমি পালিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতাম। এভাবেই কেটেছে শিশু আর কিশোর বেলা। পনের বছর বয়সে সংসার কি কিছুটা বুঝেছি। ’
সিংদই গ্রামের আবুল হাসেম সরকার (৭০) বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফুলজান হলেন এই সিংদই গ্রামের সবচেয়ে মুরব্বি মানুষ। আমার মনে হয় তিনি নান্দাইল তো বটে ময়মনসিংহের মধ্যেও সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ হতে পারেন। ’
ফুলজানের বড় ছেলে বাহা উদ্দিন(৬০) বাংলানিউজকে বলেন, ‘মায়ের শরীর ইদানীং খারাপ যাচ্ছে। আমরাও বৃদ্ধ হয়ে গেছি। সবচেয়ে ভাল লাগে এই বৃদ্ধ বয়সেও মাকে মা বলে ডাকতে পারছি। এটা আমাদের প্রতি আল্লাহ্ পাকের বড় করুণা। ’
ছোট ছেলে আচারগাঁও ইউপির সাবেক সদস্য আলাল উদ্দিন(৫০)বলেন, ‘মা আমাদের সবার প্রিয়। উনার গুণ ছাড়া আর কিছুই আমাদের জানা নেই। ’
উপজেলা আচারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার জানা মতে এই উপজেলায় তিনিই বেশি বয়স্ক মানুষ হবেন। ’
ফুলজানের জীবিত বড় ছেলে বাহাউদ্দিন(৬০), সাইফুদ্দিন(৫৫) ও আলাল উদ্দিন(৫০)। মেয়ে আছিয়া (এ্যাংরাজের মা) (৬৮), রাবিয়া (৫২), আনোয়ারা (৫৪) ও রেনু আরা (৪৮) সবাই শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়া মাকে নিয়ে আনন্দিত। এছাড়া ফুলজানের রয়েছে প্রায় শতাধিক নাতি-পুতি-থুতিসহ চার প্রজন্মের বংশধর।
বাংলাদেশ সময় : ১২০০ ঘণ্টা, ২২ জানুয়ারি, ২০১১