ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

১৬ বছরের কিশোরীর বিশ্বজয়

রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:২৯, জানুয়ারি ২২, ২০১২
১৬ বছরের কিশোরীর বিশ্বজয়

ঢাকা: ১৬ বছর বয়সী এক ডাচ বালিকা সমুদ্রে পথে একাকী বিশ্ব ভ্রমনের অভিযান শেষ করে বিশ্বের সমুদ্র অভিযানের ইতিহাসে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

মহাসাগর থেকে মহাসাগরে , দীর্ঘ এক বছর লম্বা এই নি:সঙ্গ যাত্রায় তার বাহন বলতে ছিল একটি ক্ষুদ্র ইয়ট।



অবশেষে আটলান্টিকের ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পোতাশ্রয়ে তার নৌকা ‘গাপি’র কূলে ভেড়ে। আর এর ভেতর দিয়েই সমাপ্তি ঘটে তার এই দীর্ঘ অভিযানের।

১৬ বছরের এই যখন দ্বীপের পোতাশ্রয়ে তার নৌকা থেকে নেমে আসে তখন বাতাসে ছুড়ে দেয় উদ্বেলিত দুই বাহু। তার উচ্ছাসের বাধ ভেঙ্গে পড়ে বিশ্বজয়ের আনন্দে।  

লরা ডেকার নামের এই বালিকার ইতিহাস সৃষ্টির সাক্ষী হতে বন্দরে শনিবার  হাজির হন কয়েক শত মানুষ। তারা হর্ষধ্বনির মাধ্যমে তার বিজয় উদযাপনের সঙ্গী হন।

ডেকার এই একই পোতাশ্রয় থেকে ২০১১‘র ২০ জানুয়ারি  সমুদ্রে পথে বিশ্ব ঘুরে আসার যুগান্তরী অভিযান শুরু করেন।

অভিযান শেষের পর তার দাবি অনুযায়ী তিনিই বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নাবিক যে একা বিশ্ব ভ্রমন সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেন।

তবে তার দুভার্গ্য যে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রের্কড কর্তৃপক্ষ তার এই কৃতিত্বের কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের দাবি এই সফরকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে এই ধরণের বিপজ্জনক কর্মকান্ডকে উৎসাহিত করতে চাননা তারা।

দু:সাহসী এই ডাচ বালিকার অভিযানে কম বিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি। তবে তার এই সফরে প্রকৃতি খুব কমই বাধার সৃষ্টি করে। তার সামনে মূলত বাধার পাহাড় হয়ে দাড়ায় তার নিজের দেশ হল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ। এমনকি নিজের  স্কুল কর্তৃপক্ষ, যেখানে সে পড়াশোনা করতো তারাও মেনে নিতে পারেনি তার এই আকাংখা।

ডাচ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ভাবে তাকে এই অভিযান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। তাদের দাবি এই ধরনের বিপজ্জনক অভিযানের জন্য তার বয়স এখনও অনেক কম। অপর দিকে তার স্কুল কর্তৃপক্ষ সাফ জানায় এই বয়সে তার ক্লাসরুমে থাকার কথা, কোন সমুদ্রে অভিযানে নয়।

পাশাপাশি  যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে গত ২০১০‘র আগস্টে তার অভিযান নিষিদ্ধ করার দাবিতে মামলা ঠুকে দেয় শিশু কল্যান কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি এত কম বয়সে ডেকার নি:সঙ্গ সমুদ্রে একাকী তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না।

তবে অবশেষে বালিকা মামলায় জিতে গেলে সমুদ্র অভিযান আর কোন বাধায় থেমে থাকেনি।

মূলত নৌকার ডেকেই লরা ডেকারের শৈশব বেড়ে ওঠে। সে মাত্র ছয় বছর বয়সেই একা নৌকা চালায়। আর যখন তার বয়স দশ তখন থেকেই সে মূলত স্বপ্ন দেখে সাগর পথে একা একা বিশ্ব পাড়ি দেওয়ার।

১৬ বছরের এই বালিকা আগামী সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে ১৭ বছর বয়সে পড়বে। এই ভ্রমনের ফলে সে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ নাবিক যে আট মাসের ভেতরে সমুদ্রে পথে বিশ্ব ঘুরে আসতে সক্ষম হলো।

তার আগে এই রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ান বালিকা জেসিকা ওয়াটসনের , যে কিনা তার ১৭ বছর পূর্ন হওয়ার মাত্র তিনদিন আগে একাকী সমুদ্রপথে বিশ্বভ্রমন সমাপ্ত করে। জেসিকা ওয়াটসন তার অভিযান শেষ করেন ২০১০‘র মে মাসে।

তবে ওয়াটসন অভিযানকালে কোনখানে বিরতি নেননি।

ডেকার অবশ্য বন্দর থেকে বন্দরে ঘুরে তার যাত্রা শেষ করে।

ডেকারের ম্যানেজার অবশ্য এসব রেকর্ডকে একদমই পাত্তা দিচ্ছেন না। তার কাছে সবচেয়ে  গুরুত্বপূর্ন হলো ডেকারের স্বপ্ন পূরণ হওয়া।   সংবাদ মাধ্যমকে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন  ‘তার স্বপ্ন সার্থক হলো, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।