বরিশাল: ঘুম থেকে উঠে চা পান করা ছাড়া অনেকেই দিনটি শুরু করতে পারেন না। গ্রাম কিংবা শহরের বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, আড্ডা ছাড়াও ফুটপাতে অসংখ্য চায়ের দোকান জানান দেয় এ পানীয়ের জনপ্রিয়তার।
বরিশাল নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষ পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরকে ঘিরে ত্রিশটিরও বেশি চায়ের দোকন বা টি-স্টল গড়ে ওঠেছে। চারদিক থেকে বিপণিবিতান, মার্কেট, ব্যাংক, অফিস ও আদালতপাড়া ঘিরে থাকা এই বিবির পুকুরের পাড় সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত হাজারো মানুষের আনাগোনায় মুখর থাকে। ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত এই পুকুর পাড়ে থাকে জনসমাগম।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনে কিংবা রাতে সমান তালেই এখানে চায়ের আড্ডা বসে। তবে দিনের বেলায় কর্মব্যস্ত মানুষের আড্ডা জমে বেশি। আর রাতের বেলায় শহরের তরুণ-তরুণীরা বিবির পুকুর পাড়ে চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠেন। মহামারি করোনাকালে জনসমাগম যদিও কিছুটা কমেছে।
বিবির পুকুরের পূর্ব পাড়ে শুভর দোকান। কথা হলে তিনি জানান, তিনি দৈনিক ২ থেকে আড়াইশ কাপ চা বিক্রি করে থাকেন। যেখানে দুধ চায়ের পাশাপাশি রং চা, আদা, লেবু কিংবা তুলসী পাতা দিয়ে বিক্রি করেন।
তবে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি চা বিক্রি করে থাকেন যারা হরেক রকম চা বিক্রি করেন। আর এই হরেক রকম চা পানের জন্য শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিবির পুকুর পাড় এলাকা বেশ জনপ্রিয়। এখানে শুধু একটি দোকানেই ৬৫ ধরনের চা বিক্রি হয়ে থাকে বলে দাবি করেছেন চা বিক্রেতা রমজান।
এই চা বিক্রিতা বাংলানিউজকে বলেন, যে ৬৫ ধরনের চা তিনি তৈরি করে ক্রেতাদের দিচ্ছেন তার মধ্যে বেশি জনপ্রিয় মাল্টা চা। তাছাড়া ড্রাগন চা, এলাচ চা, মালাই চা, দই চা, তেঁতুল চাও জনপ্রিয়। তবে আদা ও লেবুর রং চাও ভালো বিক্রি হয় বিবির পুকুর পাড়ে।
তিনি বলেন, দোকানে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকা পর্যন্ত প্রকারভেদে চা বিক্রি করেন তিনি। আর এই চায়ের দোকানের উপার্জিত আয় থেকেই স্ত্রী-সন্তান, বোনকে নিয়ে চারজনের সংসার নিয়ে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন।
জসীম নামের অপর এক দোকানি জানান, বিবির পুকুর ঘিরে প্রায় অর্ধশত দোকান রয়েছে, যারমধ্যে চায়ের দোকানই বেশি। আর এসব চায়ের দোকানে সবথেকে বেশি চলে ৫ টাকা মূল্যের রং চা। এখানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ভালো থাকে। বিশেষ করে বিকেলের পর থেকে তরুণীদের ভিড় বাড়ে। করোনার আগে কাঁচের গ্লাসেই চা পান করতেন ক্রেতারা। তবে করোনা আসার পরে কাঁচের গ্লাসের পাশাপাশি প্লাস্টিকের কাপের ব্যবহারও বেড়েছে।
৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮৫০ ফুট প্রস্থ নিয়ে এই পুকুরটি ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরির পালিত সন্তান জিন্নাত বিবির উদ্যোগে বরিশাল নগরের সদর রোডের পূর্ব পাশে পুকুরটি খনন করা হয়। পরে জান্নাত বিবির নামানুসারে এই পুকুরের নামকরণ করা হয় বিবির পুকুর।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১
এমএস/এইচএডি