মৌলভীবাজার: মূলত তিনি চা শ্রমিকের সন্তান। তবে বাগানে কাজ করেন না।
শ্রমের মূল্যায়নে একজন সুস্থ-স্বাভাবিক শ্রমিকের চেয়ে কোনো অংশেই কম নন তিনি। বিরতিহীনভাবে খণ্ড খণ্ড শ্রম বিলিয়ে দিতে পারেন দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। তাতেই খুশি মালিক। এই সন্তুষ্টিটুকুর জন্যই ভূমিকর্তা স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে আপন করে রাখেন। মালিক নিজে যা খান তা-ই খাওয়ান সেই শ্রমিককে।
সম্প্রতি এক সকালে শ্রীমঙ্গলের ইকোনমিক ফিশারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে কর্মরত অবস্থায় দেখা গেলো যোগেশকে। ফিশারি সংলগ্ন ধানক্ষেতের মাটি কোদাল দিয়ে কাটছিলেন তিনি। কাজের স্বাভাবিকতা দেখে বোঝই যাচ্ছিলো না যে তিনি এক চোখে দেখা মানুষ। অন্য সব সুস্থ-সবল শ্রমিকের মতো কাজ করে যাচ্ছিলেন।
নিজের চোখের দুর্ঘটনা সম্পর্কে যোগেশ বলেন, প্রায় আট/নয় বছর আগে জমিনে কোদাল মারতে গিয়ে হঠাৎ শক্তমাটির অংশ প্রচণ্ড বেগে ছুটে এসে আমার বামচোখে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে চোখের মণি গলে গিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়। চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলেও বামচোখে কিছুই দেখতে পাই না। যা দেখি সব ওই ডান চোখ দিয়ে।
‘তেরো বছর ও ছয় বছরে দুই সন্তান আছে আমার। স্ত্রী উর্বশী রিকমন ধামাই চা বাগানে অস্থায়ী শ্রমিক। ইকোনমি ফিশারিতে কাজের পাশাপাশি দৈনিক তিনবেলা খাওয়া-দাওয়া করি। মাস শেষে বাড়ি গেলে তিন হাজার টাকা করে বেতন পাই। ’
‘এখানে এই ফিশারিতে এসে বহুত ভালা আছি বাবু। আমার মালিক সব সময় দেখভাল করেন। ’
ইকোনমিক ফিশারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সের পরিচালক সুরজিত দাস বাংলানিউজকে বলেন, যোগেশ হঠাৎ করে দুর্ঘটনাবশত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে কর্মহীন হলে আমি তাকে আমার এখানে কাজ করার সুযোগ দিয়েছি। সে কাজের প্রতি বেশ মনোযোগী, আন্তরিক আর ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমাজের এমন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
বিবিবি/এএ