অধ্যাপক ইফতেখার গনি চৌধুরী স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক ইফতেখার স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।
স্টেট ইউনিভার্সিটির নিজস্ব অফিসে তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। শিক্ষার নানান দিক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাসহ তরুণ নেতৃত্ব নিয়েও তিনি সরাসরি কথা বলেছেন স্বপ্নযাত্রার বিভাগীয় সম্পাদক শেরিফ আল সায়ারের সঙ্গে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়েছে ১৯৯৩ সালে। এখন আমরা ২০১২ সালে এসে দাঁড়িয়েছি। এই সুদীর্ঘ সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাখাতে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে বলে মনে হয়?
তখন তো একটা বা দুটা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে যাত্রা হয়েছিল। কিন্তু এখন সংখ্যাটি বেড়ে ষাটের কাছাকাছি চলে গেছে। এ থেকেই বোঝা যায় ক্ষেত্র বেড়েছে। অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় অবদান রাখছে। এটা তো ভালো। বর্তমানে আমাদের সমাজে শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই অবদান আছে। সে সঙ্গে বলতে হয় আগে খুব কম বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালগুলোর জন্ম হয়েছিল। কিন্তু এখন পড়াশোনার বিষয়ের সংখ্যাও বাড়ছে।
তাই বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর আপনি যে সুদীর্ঘ সময়ের কথা বলছেন সেটা এক কথায় বলে দেওয়া যায়। সেটা হলো, আগে মানুষ শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ভাবতো। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ভাবে। এই ভাবনার জগতে প্রবেশ করাটাই তো অনেক বড়।
সঙ্গে শিক্ষার মান কতটুকু বেড়েছে?
শিক্ষার মানও বেড়েছে। আমি যখন পড়াশোনা করতাম তখন তো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এতো সুযোগ সুবিধা ছিল না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আসার পর সুযোগ সুবিধা বাড়ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াচ্ছেন তাদেরও মানের দিকে আমরা লক্ষ্য দেই। তারা কেমন পড়ান, কীভাবে পড়ান। ক্লাসের শিক্ষার্থীরা কতটুকু বুঝতে পারছে; এসব আমরা খেয়াল রাখি।
অন্যদিকে প্রযোগিতা বাড়ছে। যেমন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাখাতে অনেক বিষয়েই নতুনত্ব এনেছে। সেটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দেখছে। তারাও তাদের কোর্স বৃদ্ধিতে কাজ করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিখছে। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিখছে।
সরকার বলেছে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। এ বিষয়ে আপনারা কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন?
সরকার বলেছে তিন একর জমি থাকতে হবে। কিন্তু ঢাকায় এতো বড় জায়গা পাওয়া সম্ভব না। কাজেই নিজস্ব ক্যাম্পাস করতে হলে ঢাকার বাইরে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন খেলার মাঠ, ছাত্রাবাস, একাডেমিক ভবন। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমি মনে করি এসব থাকা উচিত। তাই আমরা সে পথেই যেতে চাই। ধামরাইতে আমরা তিন একর জমি কিনেছি। সেখানে ক্যাম্পাসের কাজ হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, গুরুত্ব দেওয়া উচিত শিক্ষকের দক্ষতার বৃদ্ধির দিকে। যেটা আমাদের দেশে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব। সেটা নিয়ে সবার কাজ করা উচিত।
আমাদের দেশে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি আছে; সঙ্গে গবেষণাও হচ্ছে না। এছাড়াও একটি অভিযোগ আছে যে, বর্তমান প্রজন্ম গবেষণা করতে চায় না। এখান থেকে বের হওয়ার উপায় কী?
শিক্ষক কিন্তু তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে নতুনদের সবাই ভালো করছে। আমি বলছি অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বিষয়ে। অভিজ্ঞ যারা। কিংবা যারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন। তাদের সঙ্গে নতুনদের মিশতে হবে। নতুনদের শেখাতে হবে। নতুনদের তো তারাই তৈরি করবেন। দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমি বলেছি। তার মানে এই নয় যে দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি আছে। আমাদের সবই আছে। শুধু প্রয়োজন নতুনদের দক্ষ করে গড়ে তোলা। এই দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়েই আমাদের সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
অন্যদিকে আমি আপনার সঙ্গে একমত যে গবেষক তৈরি হচ্ছে না। তৈরি মানে হলো গবেষক উঠে আসছে না। মেধার কিন্তু অভাব নেই। এক্ষেত্রে আমি বলবো আমাদের গবেষণার জন্য যে পরিবেশটা দরকার সেটার অভাব রয়েছে। তারপরও দেখবেন যে গবেষণা হচ্ছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও গবেষণার সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হচ্ছেন। এটা পজিটিভ। পরিসরটা নতুনরাই তৈরি করে নেবে। গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য সময় প্রয়োজন। ধীরে ধীরে হবে বলে আমি আশাবাদি।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে এখন সবাই কথা বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি থেকে তরুণ নেতৃত্ব কী উঠে আসার সম্ভাবনা আছে?
অবশ্যই আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধু পড়াশোনা না। আমরা সহশিক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি। নাচ গান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রোগ্রামিং কনটেস্ট আমরা আয়োজন করি। এস আমার শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানগুলো আয়োজনে এক ঝাঁক তরুণরা যখন কাজ করে সেটাইতো টিমওয়ার্ক। এখানেই নেতৃত্ব তারা শিখে যায়। নিজের কাজ নিজে করে অন্যকে উৎসাহিত করাটাই নেতৃত্ব। তবে নেতৃত্বের মূল কথা হলো দায়িত্ববোধ। এ দায়িত্ববোধ পরিবার থেকে গড়ে উঠতে হবে। মানসিক পরিবর্তনটা পরিবারের উপর নির্ভর করবে। যেমন, আমাদের দেশে এখনো মা বাবারা মনে করেন আমার ছেলেকে মাষ্টার্স পাস করতে হবে। এখন এ ডিগ্রি তার জীবনে কতটুকু কাজে লাগবে সেটা নিয়ে তারা ভাবেন না। এই মানসিকতারও পরিবর্তন দরকার। প্রত্যেকটি মানুষকে পড়াশোনা শেষ করে দেশ নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের জন্য কাজ করার কথা ভাবতে হবে। তবেই নেতৃত্ব প্রসঙ্গ আসবে। আমরা শুরুতেই আমাদের সন্তানকে লক্ষ্যহীন করে দেই। লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। নেতা হতে হলে লক্ষ্য থাকতে হবে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যই সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তুলবে।
শেষ প্রশ্ন, আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রতি আপনি কিছু বলুন।
নতুন প্রজন্ম তো অনেক ভাগ্যবান। তাদের এখন প্রচুর সুযোগ। এতো সুযোগ থেকেও যদি তারা লক্ষ্যহীন হয়ে পড়ে তবে সেটা ঠিক হবে না। তবে আমি আশাবাদি। বর্তমান প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে জানে। তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে। প্রতিটি সময়কে কাজে লাগাতে হবে।
একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও টিকে থাকা সম্ভব না। যে খেলোয়াড় তারও শিক্ষার প্রয়োজন আছে। খেলাধুলা কয়দিন? বেশি হলে চল্লিশ বছর। তারপর কিন্তু তাকে ম্যানেজমেন্টে চলে যেতে হবে। তখন তার শিক্ষার প্রয়োজন আছে। তাই ভবিষ্যতকে সুন্দর করার জন্য শিক্ষার বিকল্প কিছুই নেই।
বাংলানিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১২