ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সোনালী সৈকত সোনার চর

জাকারিয়া হৃদয়, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৪, জানুয়ারি ৩০, ২০১২
সোনালী সৈকত সোনার চর

পটুয়াখালী: সোনারচর। একটি সৈকত।

বঙ্গোপসাগরের এই সৈকতে নেই কোনো সোনা। তবে আছে সোনালী রঙের বালু। নিবিড় বনভূমির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার।

শেষ বিকেলের রোদের আলো যখন সোনারচরের বেলাভূমিতে পড়ে, তখন দূর থেকে পুরো দ্বীপটাকে সোনালী রঙের একটা থালার মত মনে হয়। মনে হয় যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দেওয়া দ্বীপটিতে।

কখন, কে বা কারা এর নাম সোনারচর রেখেছে, তার কোনো ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে পর্যটকসহ স্থানীয়দের ধারনা, শেষ বিকেলের ওই দৃশ্যের উপর নির্ভর করেই এই চরের নাম সোনারচর হয়েছে।

সাগরে যখন জোয়ারের পানি উথলে ওঠে, তখন অন্য এক সৌন্দর্য বিকশিত হয় সোনারচরে। তটরেখায় আছরে পড়ে ছোট-বড় ঢেউ। গলে পড়ে ঝুরঝুরে বালি। লোনা পানির তীরে ঘন সবুজ অরণ্যের বিস্তার।

প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের যে কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ। মনে হবে প্রকৃতির খেয়াল আপনাকে যেন আকড়ে ধরে রাখতে চায়।

ঢাকা থেকে লঞ্চ, সড়ক কিংবা আকাশ পথের যে কোন উপায়ে পটুয়াখালী। পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা। ইচ্ছা করলে ঢাকা থেকে সড়ক ও লঞ্চপথে গলাচিপা আসতে পারেন। পরে গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে সড়ক পথে দশ কিলোমিটার দেিণ পানপট্টি লঞ্চঘাট।

সেখান থেকে ইঞ্জনচালিত ট্রলারযোগে আগুনমুখা মোহনা পেরিয়ে দেিণ যাত্রা। সামনে গিয়ে বাঁক ঘুরতেই দাঁড়ছিড়া নদী। দুই পাশে সারিসারি ঘন ম্যানগ্রোভ গাছের সারি। নদীর বুক জুড়ে গাঙশালিকের অবাধ বিচরণ। সামুদ্রিক হাওয়ার মৃদুমন্দ ছোঁয়া। সব মিলিয়ে এক অন্য রকম ভালোলাগার অনুভূতি।

ট্রলার কিংবা লঞ্চ যোগে আগুনমুখা মোহনা থেকে ঘণ্টাতিনেক এগুলেই চোখে পড়েবে মায়াবী দ্বীপ চর তাপসী। তাপসীর বাঁকে পৌঁছুতেই সোনার চরের হাতছানি। গলাচিপা থেকে নৌপথে সোনারচর পৌঁছুতেই আপনার সঙ্গে দেখা হবে হরিণ, বনবিড়াল আর বিভিন্ন প্রজাতির বানরের। এছাড়া চলার পথে গাঙচিল যেন আপনার সঙ্গী হয়ে থাকছে।

এখানে আছে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অনন্য সাধারণ দৃশ্য। যা কুয়াকাটাকেও হারমানিয়েছে। কারণ সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের এই দৃশ্য দেখতে কুয়াকাটায় ভোগান্তি পোহাতে হয়; কিন্তু সোনার চরে খুব স্বাভাবিকভাবেই এ দৃশ্য দেখা যায়। এখানে আরও আছে পাঁচ হাজার একরের বিশাল বনভূমি।

পটুয়াখালী বনবিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সুন্দরবনের পরেই আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। সোনারচরের বিশাল বনভূমির মধ্যে ছড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক ছোট-বড় খাল। ছোট্ট নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিয়ে এসব খালে ভেসে ভেসে দেখা যায় বিচিত্র সব পাখ-পাখালীর বিচরণ। তবে ভয় নেই। একমাত্র শিয়াল আর মেছোবাঘ ছাড়া হিংস্র কোনো জন্তু নেই এখানে।

বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়তো সহজেই চোখে পরবে বুনো মোষ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা হতে পারে হরিণ পালের সঙ্গে। এখানে রয়েছে শুকর, বানর, মেছো বাঘসহ আরও সব বন্যপ্রাণী।

এসব দেখতে হলে খুব সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে আপনাকে। দেখতে পারবেন সমুদ্রগামী হাজারো জেলের জীবন সংগ্রাম। পর্যটকদের জন্য আছে ডাকবাংলো এবং বনবিভাগের ক্যাম্প।

পর্যটন শিল্পে প্যাকেজ ট্যুরের বিষয়টি এখন বেশ পরিচিত। পারিবারিকভাবে তো বটেই; বন্ধু-বান্ধব মিলে এক সঙ্গে  দল বেধে ঘুরে বেড়ানোর মজাও কম নয়। বেশিরভাগ পর্যটকই এ জেলার অপর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ঘুরে চলে যান। কিন্তু সোনারচর, রূপারচর ও চরহেয়ারসহ সমুদ্র ফুলে জেগে ওঠা সবুজ বনাঞ্চলের সন্ধান জানেন না অনেকেই।

এসব চর আর সৌন্দর্যের লীলাভূমি দ্বীপগুলোকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন দরকার। শুধু সোনারচরই নয়। পাশের রূপার চর, মৌডুবী, জাহাজমারা, তুফানিয়া, চর ফরিদ ও শিপচরসহ আরও কয়েকটি দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো। এর প্রত্যেকটিই সাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা। এ দ্বীপগুলোকে রণাবেণ করলে দেশের পর্যটন শিল্পে যোগ হবে নতুন মাত্রা।

বাঙলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।