মৌলভীবাজার: একটা সময় ছিল যখন আমাদের মা-মাসিরা চালেরগুঁড়ো দিয়ে সুন্দর করে আল্পনা তৈরি করতেন। অনেক সময় ধরে অসীম ধৈর্যসহকারে আঙুলের পরশে আঁকতেন নান্দনিক আল্পনা।
তবে কালের বিবর্তনে সেই চালেরগুঁড়োর আল্পনা আজ হারিয়েই গেছে। এখানে সংযোজন ঘটেছে আধুনিক পদ্ধতির উপকরণ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে চালেরগুঁড়োর পরিবর্তে রং-তুলির এই সংমিশ্রণ আল্পনার চাহিদাকে পূরণ করে চলেছে। আর সেই প্রাচীন চালেরগুঁড়োর আল্পনা ঠাঁই নিয়েছে স্মৃতির কোঠায়।
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার শহরতলীর একটি বাসায় মাঙ্গলিক শুভানুষ্ঠানে নতুন পদ্ধতিতে আল্পনায় বৈচিত্র্য আর শোভ বৃদ্ধি করে চলেছেন শিল্পী পার্থ দেব শুভ্র। তিনি ‘চারুশৈলী’ নামক স্থানীয় আর্ট একাডেমির পরিচালক।
এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চালেরগুঁড়োর আপডেট ভার্সন হলো রং-তুলির আল্পনা। সেই চালেরগুঁড়োর যুগ তো আমরা পেছনে ফেলে এসেছে। এখন সবাই আধুনিক উপকরণ ব্যবসারের প্রতি অধিকতর আগ্রহী। আর সেটা সহজলভ্যও। সব বিবেচনায় চালেরগুঁড়োর আল্পনাতে উঠে এসেছে এখন রং-তুলির ব্যবহার।
তিনি বলেন, আসলে আল্পনার সেভাবে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। নেই সুনির্দিষ্ট কোনো কাঠামোও। এটা নিজের দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। এটা তাৎক্ষণিক শিল্পের প্রকাশ। আল্পনাকে ইচ্ছামতো ছোট-বড় করা যায়। সাদা রং দিয়ে আঁকা শুরু হয়, তারপর ক্রমান্বয়ে লাল, হলুদ, আকাশি প্রভৃতি রঙে ফিনিসিং (সমাপ্তি) টানা হয়।
প্রকারভেদ প্রসঙ্গে এ শিল্পী বলেন, আল্পনা দু’রকম আছে। একটি সিনথেটিক পেইন্ট, অপরটি প্লাস্টিক পেইন্ট। বেশি চলে সিনথেটিক। এটি ঘরের মেঝেতে বেশি হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশি এই আল্পনার ব্যবহার হয়ে থাকে। আর দীর্ঘস্থায়িত্ব’র জন্য প্লাস্টিক পেইন্টের তৈরি আল্পনা। এটি পিচ ঢালাই রাস্তায়, উঠনে আঁকা হয়। স্থানীয় গ্রামাঞ্চলের মহিলারা একে ‘আলিপনা’ বলে থাকেন।
এর চাহিদার বিষয়ে পার্থ বলেন বিয়ে, পূজার অনুষ্ঠানসহ মাঙ্গলিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই আল্পনার চাহিদা ব্যাপক। আল্পনার নকশা, আকৃতি এবং সংখ্যার ওপর মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। আমরা ন্যূনতম দু’ হাজার টাকা থেকে আট/দশ হাজার বা তারও বেশি টাকার আল্পনার অর্ডার নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২১
বিবিবি/কেএআর