ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২১
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি

ঢাকা: রাস্তার দুই পাশজুড়ে সারি সারি সুউচ্চ গাছ। শোঁ শোঁ শব্দে উঁচু সেই গাছের ছোট-বড় পাতার ফাঁক-ফোকড় দিয়ে বইছে হিমেল হাওয়া।

মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র শীতল সেই হাওয়ার পরশ মুহূর্তেই আপনার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।

একটু একটু করে ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার, এখনি নামবে সন্ধ্যা। দিনের শেষ রেখায় দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও রঙবেরংয়ের কীটপতঙ্গ। শোনা যায় অচেনা পাখি ও ব্যাঙের ডাক, আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জন।

যারা গ্রামে বসবাস করেন, সন্ধ্যা নামলে জোনাকি পোকার মিছিল আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকের সঙ্গে তাদের সখ্যতা বেশ দারুণ। তবে, যারা শহরে থাকেন, তাদের কাছে গ্রামের ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন অবশ্য স্বপ্নের মতো। কেননা সন্ধ্যা নামলেই ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ঝিঁ ঝিঁ সঙ্গীত মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি। বিশেষ করে সেই পরিবেশে যদি জোনাকি পোকা যোগ হয়, তবে তো কথায় নেই!

এ নিয়ে রাজধানীর একটি কর্পোরেট হাউজের কর্মকর্তা এবং প্রকৃতিপ্রেমী মো. সোহেল আহমেদ বলেন, অনেক দিন ধরে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা হয় না। আগে সন্ধ্যা হলেই ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যেতো, মেলা বসতো জোনাকি পোকারা। কতদিন সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি তো ঝিঁঝিঁ পোকা আর জোনাকি পোকা ধরতেই কেটে গেছে। এখন আর তার কিছুই নেই। গ্রামে গেলেও এখন সেসবের দেখা মেলে কম। সেই পরিবেশ কত মধুর ছিল। আর এখন তা যেন শুধুই স্মৃতি। সত্যিই তাই, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ এখন যেন আমাদের হারানো এক সম্পত্তি, ঐতিহ্য। তবুও গ্রামে কিছু কিছু সময় এই পোকার ডাক আমরা শুনি। আর যারা এই গান এখনো শোনেন, তাদের বেশ ভাগ্যবানই বলা চলে।  

এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে গ্রাম থেকে ঘুরে আসা রাজধানীর একজন বাসিন্দা ইমরান হোসেন সাগর বলেন, অনেক দিন পর এবার গ্রামে গিয়ে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনেছি। চাঁদ রাতে বাড়ির একটু বাইরে বেরুলাম যখন হাঁটতে, তখনই কানে এলো সুমুধুর সেই সুর। কতদিন পর যে এই শব্দ শুনলাম, তা হিসাব করে বলা যাবে না। তবে, বিষয়টা অত্যন্ত দারুণ।

ঝিঁঝিঁ পোকা সাধারণত গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়। রাতের বেলা নিস্তব্ধতার মধ্যে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক বেশ সুমধুর, শুনতেও ভালো লাগে। ঝিঁঝিঁ পোকা কিন্তু মোটেও ক্ষতিকর নয়। রাতের আঁধারে ঝিঁঝিঁর ডাক শুনেনি এমন মানুষ কী পাওয়া সম্ভব? গ্রাম বাংলায় সন্ধ্যা হলেই ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যায়। অনেকগুলো ঝিঁঝিঁ পোকার একসঙ্গে ডাক শোনার সেই মুখরিত শৈশবের সন্ধ্যেটা কত শিহরিতই না করে আমাদের প্রকৃতিপ্রেমীদের।

ঝিঁঝিঁ পোকা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা তথ্য থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ৯শটিরও বেশি ঝিঁঝিঁ পোকার প্রজাতি আছে। অনেক প্রজাতি আছে যারা উড়তে পারে না। আবার অনেক প্রজাতি শব্দ করতে পারে না। ঝিঁঝিঁ পোকারা বিভিন্ন জায়গায় বাস করে। তবে, এরা ঘাসে, ঝোপে, বনের গুহায়, জলাভূমি এবং বেলাভূমিতে বাস করতে বেশি পছন্দ করে। ঝিঁঝিঁ পোকারা নিশাচর। সন্ধ্যের পর এদের চলাচল শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায় গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় এলাকায়। এছাড়া ঝিঁঝিঁর যে গান, তা মূলত পুরুষ ঝিঁঝিঁ পোকাদের কণ্ঠ থেকেই বেশি শোনা যায়। পুরুষ ঝিঁঝিঁ পোকা মেয়ে ঝিঁঝিঁদের কাছে টানার জন্য গান গায়। উচ্চ শব্দে গাওয়া গানের জন্য এরা বিখ্যাত। তবে, সব ঝিঁঝিঁ গান গাইতে পারে না। যারা গান গায় তাদের শ্রবণশক্তিও অনেক ভালো থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২১
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।