ঢাকা: সত্যি ভাবতে গেলে বিস্ময়কেও হার মানায়! সামাজিক যোগাযোগের সাইটের মধ্যে ফেসবুক অন্যতম। সেই ফেসবুকের একজনের প্রোফাইলে সরাসরি বন্ধুত্বের বাইরেও সাবস্ক্রাইবারের মাধ্যমে পরোক্ষ বন্ধু হয়েছেন ৬০ হাজার ব্যক্তি! শুধু তাই নয়, কারো কারো সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, ১ লাখ, কারো-বা রয়েছে আড়াই লাখেরও মতো এবং তা প্রতিদিনই জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে।
কে এই ক্যাথেরিন গোল্ডস্টেইন?
ক্যাথেরিন গোল্ডস্টেইন পৃথিবীর অত্যন্ত জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনের সহযোগী প্রকাশনা স্লেট-এর(slate) ইনোভেশন এডিটর। তিনি মূলত সামাজিক যোগাযোগ ও ওয়েবসাইটভিত্তিক অনলাইন উপসম্পাদকীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত।
এত সাইস্ক্রাইবার থাকা সম্পর্কে ক্যাথেরিন গোল্ডস্টেইন বলেন, ‘আমার ৬০ হাজারেরও বেশি সাইস্ক্রাইবার রয়েছেন। প্রতিদিন আমার প্রোফাইলে সাইস্ক্রাইবিং জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। ’
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১ হাজারেরও বেশি ফেসবুক ইউজার আমার প্রোফাইলে সাবস্ক্রাইবিং করছেন। ’
প্রসঙ্গত, ফেসবুকের নিয়ম অনুযায়ী একজনের প্রোফাইলে ৫ হাজারের বেশি সরাসরি বন্ধু হওয়া যায় না। সে কারণে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুক এ সমস্যার সমাধান হিসেবে একজনের প্রোফাইলের সাইস্ক্রাইবার হওয়ার সুযোগ করে দেয়। একজন সাবস্ক্রাইবার সরাসরি বন্ধু না হয়েও কারো প্রোফাইলের স্ট্যাটাস, আপডেট দেখতে ও তাতে মন্তব্য করতে পারবেন।
প্রতিদিন কেন ক্যাথেরিন গোল্ডস্টেইনের ১ হাজার করে সাইস্ক্রাইবার বাড়ছে এ প্রশ্নের জবাবে ক্যাথেরিন বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার নতুন সাবস্ক্রাইবারদের উদ্দেশে এক স্ট্যাটাসে জানতে চেয়েছিলাম-কীভাবে তারা আমাকে খুঁজে পেলেন?’
তিনি বলেন, ‘সবার উত্তরের মধ্যে ৩৪ জনের উত্তর আমি তুলে ধরতে চাই। এই ৩৪ জনের মধ্যে মাত্র ৮ জন সঠিক জবাব দিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, তারা আমি যা পোস্ট করি, তার বিষয়বস্তু তাদের সাবস্ক্রাইবার হতে আকৃষ্ট করেছে। ’
‘এছাড়া ১৪ জন আরবিতে উত্তর দিয়েছেন। কেউ কেউ ইংরেজিতে লিখেছেন, ‘যেহেতু আপনি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’, কেউ লিখেছেন, ‘হাই বেবি’ (আদর করে ডাকা), কেউ লিখেছেন, ‘আপনি খুবই সুন্দরী! সেই জন্য আমি আপনার প্রোফাইলে সাবস্ক্রাইব করেছি এবং আপনি আমার উত্তরও দেবেন, এই আশা করে আপনার প্রোফাইলের সাবস্ক্রাইবার হয়েছি’। আবার কেউ কেউ লিখেছেন, আপনি খুবই সুন্দরী, সে জন্য আমি আপনাকে পেতে চাই!’
ক্যাথেরিন জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুক সরাসরি বন্ধু হওয়া ছাড়াও ‘সাবস্ক্রাইব’ নামে নতুন একটি ফিচার যুক্ত করেছে, যার মাধ্যমে স্টাটাস ফলো করা যাবে, ঠিক যেমনটা আছে টুইটারে। যেহেতু আমি সেøটের সামাজিক যোগাযোগের ইনোভেশন এডিটর, সে জন্য সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করতেই আমি এই সুযোগকে সাধুবাদ জানাই। ’
কিন্তু কীভাবে এত তাড়াতাড়ি অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ১ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ৩ মাসে এত সাবস্ক্রাইবার হওয়ার কারণ কী সংবাদমাধ্যমের এ প্রশ্নের জবাবে ক্যাথেরিন স্টেইন বলেন, ‘ফেসবুক পাবলিক ফিগারদের (সমাজের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব) প্রোফাইলের সঙ্গে যখন সাবস্ক্রাইব করার সুযোগ করে দিলো, তখন থেকেই বিশেষত সাংবাদিকরাও পাবলিক ফিগার, সে কারণে অনেকেই সে সুযোগটা নিলেন। ’
তিনি বলেন, ‘তবে ফেসবুক প্রতিনিধিও কোনো ইঙ্গিত দিতে পারেননি যে, কেন এত সাবস্ক্রাইবার হলো আমার। ’
তবে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১১ সালের ডিসেম্বরের দিকে খেয়াল করেছি, ফেসবুকের ডানদিকে আমার প্রোফাইল সাবস্ক্রাইব করার একটা ছোট্ট বিজ্ঞাপন ছিল। এর পর থেকে আমার প্রোফাইলের সাবস্ক্রাইবার জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে এবং এখন তা ৬০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। তা এখন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। ’
ক্যাথেরিন গোল্ডস্টেইন বলেন, ‘শুধু আমার ক্ষেত্রেই যে, এমনটা ঘটেছে, তা কিন্তু নয়। আমার অন্য সাংবাদিক বন্ধুদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। যেমনটা উল্লেখ করা যেতে পারে, আমার সাবেক সহকর্মী বিয়ানকা বোস্কার, যিনি হাফিংটন পোস্টের সিনিয়র টেক এডিটর তার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৫ হাজার। ’
বিয়ানকা বোস্কার অনলাইন পাইরেসি বিষয়ে একটি নিবন্ধ ফেসবুকে শেয়ার করার পর ৪৫টি মন্তব্য পান।
ক্যাথেরিন জানান, ফেসবুকে সাবস্ক্রাইবিং বিষয়টি চালুর পর একজন নারী সাংবাদিক হওয়ায় তাদের সাবস্ক্রাইবিং বেশি হয়েছে। এ জন্য তাদের অনেক সমস্যাতেও পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘নারী সাংবাদিক হওয়ায় অনেকে বিব্রতকর পোস্ট দিচ্ছেন। তার মধ্যে আজেবাজে মন্তব্য, অপ্রাসঙ্গিক কথা, এমনকী অশ্লীল পর্নোভিডিও ক্লিপও পোস্ট করছেন, যা ফেসবুকের নীতিমালা বিরোধী কর্মকান্ড। তারপর আবার অনেকেই বিদেশি ভাষায় মন্তব্য করছেন, যার পাঠোদ্ধার করা যায় না। ’
ক্যাথেরিনের মন্তব্য, ‘তবে পুরুষ সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এতটা ঘটে না। ’
তিনি বলেন, ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সোস্যাল মিডিয়া এডিটর লিজ হেরনের সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন আড়াই লাখেরও বেশি। তবে আমাদের মতো তাকে এতটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়নি। তার একটা নিজস্ব রীতি আছে। অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো স্টাটাস পড়লেই হেরন ১৫ মিনিটের মধ্যেই তা মুছে ফেলেন। সে কারণে তার শতকরা ৮৫ ভাগ স্টাটাসই সঙ্গতিপূর্ণ পাওয়া যায়। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১২