ব্রহ্মণবাড়িয়া: সেই শৈশবে বাবার হাত ধরে তারা পুতুলনাচ দেখতে যেতেন। রাত জেগে পুতুলনাচ দেখে মিঠাই-ম-া খেয়ে তবেই ফিরতেন বাড়ি।
তাই তো এতো বছর পর পাড়ার নাতিরা যখন পুতুলনাচের আয়োজন করলো সুযোগটা তারা হাত ছাড়া করলেন না। পুতুলনাচের আসরে বসে আশৈশবের স্মৃতিতর্পণ, নষ্টালজিয়া আর পুরনো দিনগুলোতেই যেন ফিরে গেলেন সত্তরোর্ধ সুভাষী সাহা ও কানন বালা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অরুণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত পুতুল নাচ দেখতে এসে কাঁপা গলায় বাংলানিউজের কাছে তাদের অনুভুতি জানাচ্ছিলেন এ দুই বৃদ্ধা। সময়ের ব্যবধানে পুতুলনাচের মতো বিনোদন মাধ্যমও যে প্রায় হারিয়ে গেছে, সে কথা জানিয়ে আক্ষেপ করলেন তারা।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসেম, নব নির্বাচিত পৌর মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ বিপুল উৎসাহে পুতুলনাচের আসরে অংশ নেয়।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, জন্ম নিয়ন্ত্রনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পুতুলনাচের হারানো ঐতিহ্য উদ্ধারের লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন বলে জানান আয়োজকরা।
‘বাঘের ভয় উপেক্ষা করে রাতে গাছ কাটতে বনে গেল কাঠুরিয়া। জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তার এ দশা। পরে কাঠ কেটে ফেরার পথে বাঘের কবলে প্রাণ হারান কাঠুরিয়া...’।
একের পর এক এমন নানা ঘটনার মঞ্চয়ান চলছে। পেছন থেকে সুতার মাধ্যমে নিপুণ হাতে একজন তা নিয়ন্ত্রণ করছে। পাশাপাশি তালপাতার বাঁশির মাধ্যমে অনেকটা মানুষের মত শব্দ করে কথাও বলছে পুতুলগুলো। শো’র শেষ পর্যায়ে ‘মানব শিশুর সঙ্গে পুতুলের বিয়ে’ বিষয়টি দারুণ উপভোগ করেন দর্শকরা।
পুতুল নাচ দেখাতে আসা ‘বাণী বীনা পুতুলনাচ’র পরিচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মেড্ডার খেলু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিশু অধিকার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয় পুতুল নাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলি আমরা। ১৫ বছর ধরে পুতুল নাচ দেখাতে দেখাতে সারাদেশ ঘোরা হয়ে গেছে আমাদের’।
তিনি জানান, বড় ভাই ধন মিয়ার কাছ থেকে ৩ বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেছেন এ কাজ। পুতুলনাচ দেখানোর জন্য দূরত্ব অনুযায়ী ৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত তারা বায়না নেন। সহযোগীদের বেতন এবং অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতে থাকে বলে জানান তিনি ।
তিনি জানান, সব মানুষ এ কাজের প্রশংসা করলেও টাকা কম থাকায় বিপাকে তারা। সরকারি সহযোগিতা পেলে কাজের পরিধি আরও বাড়বে বলে তার আশা।
পুতুল নাচ দেখতে এসেছিরেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান বাঁধন এবং সাহেদুল হাসান মিশেন।
তারা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই এলাকার এক বন্ধুর মুখে হারিয়ে যাওয়া এই সংস্কৃতির কথা শুনে আখাউড়ায় আসা। পুতুলের নাচ দেখার পর মনে হচ্ছে না এলে অনেক কিছুই মিস করতাম’।
আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল বাংলানিউজকে বলেন, ‘সেই ছোটবেলার পর এই ম-পে আবারও পুতুল নাচ দেখে খুব ভাল লাগলো। ঐতিহ্যবাহী এই পুতুল নাচ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া উচিত’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১২