জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার
উঁচু নিচু পাহাড়ি লাল মাটি। উপরের আকাশসম সবুজের সমারোহ।

নতুন কলাভবনের সামনে চারিপাশের পরিবেশের সঙ্গে অলংকৃত করেছে জাবি ক্যাম্পাস। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাবিতে কোন শহীদ মিনার ছিল না। প্রায় ৩৫ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যতিক্রমী নকশায় নির্মিত হয়েছে এ শহীদ মিনার।
শিক্ষার্থীদের দাবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সদিচ্ছায় ২০০৫ সালের ৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মহান ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্প অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান।
অর্পূব নির্মাণশৈলী ও নান্দনিক স্থাপত্যর্কমের নিদর্শন জাবি শহীদ মিনার। যা স্বীকৃতি পেয়েছে দেশের সর্বোচ্চ শহীদ মিনার হিসেবে। মাটি থেকে ৭১ ফুট উঁচূ মিনারটির ত্রিভূজাকার তিনটি স্তম্ভ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকে প্রকাশ করে। ত্রিভূজাকৃতি স্তম্ভ তিনটি প্রতিদিকে ৫২ ফুট। ১৯৫২ সালের শহীদদের স্মরণেই ত্রিভূজের প্রতিটি বাহু ৫২ ফুট করা হয়েছে।
গোলাকার বৃত্তের চত্বরে আটটি ধাপ বাংলাদেশের ইতিহাসের আটটি ধারাবাহিক গণআন্দলনের প্রতীক। মূল বেদীর এই ধাপগুলোর মাধ্যমে ১৯৪৮, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালের সংগ্রামের ধারাবাহিক ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তিনটি স্তম্ভ প্রতীকীভাবে একটি বাংলার ভাষা, শিল্প, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, অন্যটি এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মাটি ও মানুষের এবং অপরটি স্বাধিকার, সার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতীক বহন করে। সবুজ উদ্যানের মাঝে পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনারটি লাল সিরামিক ইটের তৈরি, যার সাথে মিল রয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকার। শূন্যের দিকে উন্মুক্ত তিনটি স্তম্ভ আমাদের অসীমের দিকে গন্তব্যকে নির্দেশ করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার
ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৬৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত আগ্রহের ফলে শহীদুল্লাহ কলাভবনের দক্ষিণে আম বাগানের মধ্যে তৈরি করেছিলেন শহীদ মিনার।
রাবির প্রথম শহীদ মিনারটি তৈরিতে যাদের অবদান উল্লেখ্যযোগ্য তারা হলেন, আব্দুল হামিদ, আব্দুর রাজ্জাক, বায়েজিদ আহমেদ, শমসের আলী, আহসানুল করিম, ওমর ফারুক, সেলিমুজ্জামান, আবুল হোসেন, আবুল কাশেম, আব্দুল হাই, সাইদুর রহমান, একরামুল হক খুদ, নজরুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান সুজা, প্রভাত কুমার প্রমুখ।
পরে ১৯৬৪-৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গ রুপ পায়। যদিও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক বাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলে।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা ১৩৭৯ সালের ২৬ বৈশাখ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারটি বর্তমান স্থানে পুনরায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং বাংলা ৯ বৈশাখ ১৩৯২ বা ২৩ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী এম. মনসুর আলী এর উদ্বোধন করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসন ভবনের পূর্বে অবস্থিত এই শহীদ মিনারটি রাজশাহীর অন্যতম স্থাপত্য কীর্তি। শহীদ মিনারটি ২ লাখ ৯ হাজার বর্গফুট বা চার একর ভূমিতে ১২ ফুট উচু ৬ কোণা প্ল্যাট ফর্মের উপর ৫৬ ফুট লম্বা মূল শহীদ মিনারটিতে রয়েছে চারটি সাদা রঙের স্তম্ভ। মিনারে ওঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। পেছনেই দুটি ম্যুরালে অঙ্কিত রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধের নানা চিত্র। শহীদ মিনারের পটভূমিতে আছে বিখ্যাত শিল্পী মুর্তজা বশীরের ৩২১৬ ফুটের বিশাল ম্যুরাল। শিল্পী ফনীন্দ্রনাথ রায়েরও একটি ম্যুরালও আছে এই শহীদ মিনারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১২