ঢাকা : বৃক্ষ মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম।
তবে বৃক্ষের প্রতি আমাদের কর্তব্যবোধ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার করিমপুরের একদল কিশোর। তারা সভ্য সমাজকে জানিয়ে দিচ্ছে কেবল বৃক্ষরোপণ দিবস পালন করে কিংবা বৃক্ষরোপণ করেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। নিয়মিত পরিচর্যাও করতে হয়।
উদ্যোমী এ কিশোরেরদল বৃক্ষরক্ষার এক ব্যতিক্রমী অভিযানে নেমেছে। তারা বৃক্ষরক্ষার নানা স্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন, মই, ভ্যানরিকশা আর পেরেক তোলার জন্য লোহার তৈরি একটি বাঁকানো রড নিয়ে দলবেধে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে।
তারা বৃক্ষের গায়ে নির্দয়ভাবে লাগানো পেরেক ও সাইনবোর্ড তোলার কাজ করে করে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে থাকা ভ্যানরিকশার সামনে একটি আর্ট পেপারের ওপর সবুজ কালিতে লেখা ‘সবুজ বাঁচাও, সবুজে সাজাও’।
নদীয়া জেলার করিমপুরের মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙা-আরবপুর গ্রামের পনেরো জনের ওই কিশোর বাহিনী ভরদুপুরে রাস্তার দু’ধারের গাছগুলোর দিকে দৃষ্টি রেখে এগিয়ে চলছে। যে গাছে কোনো হোর্ডিং বা পোস্টার পাওয়া যাচ্ছে- সেখানেই থেমে যাচ্ছে দলটি। তারপর মই বেয়ে গাছে উঠে পেরেক উপড়ে পোস্টার খুলে ভ্যানে রেখে দলটা আবার এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
বৃক্ষপ্রেমী জয়ন্ত ঘোষ, ষষ্ঠী প্রামাণিক, সুব্রত মিস্ত্রি, নারায়ণ বিশ্বাস, গৌতম বিশ্বাস, প্রসেনজিৎ প্রামাণিক, শৌভিক বিশ্বাস, অভিজিত মণ্ডলকে এলাকার মানুষ এখন একবাক্যে চেনে।
তারা জানায়, আমরা সকলেই দেখেছি দেশজুড়ে বেশ ঘটা করে বৃক্ষরোপণ উৎসব পালিত হয়। কিন্তু পরে সেই গাছের কথা কেউ আর খোঁজ-খবর নেয় না বা মনেও রাখে না।
তাছাড়া গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে লাগানো হয় নানা বিজ্ঞাপন। হোর্ডিং, ফেস্টুন, পেরেকের ভিড়ে গাছকে গাছ বলে চেনাই দায় হয়ে পড়ে। গাছ যেন নিখরচায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার আদর্শ জায়গা হয়ে ওঠে।
তাই আমরা সবাই মিলে ঠিক করি যেভাবেই হোক গাছকে এই যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাব। সেইমত আমরা গত কয়েকদিন ধরে গাছে গাছে উঠে পেরেক তুলে ফেস্টুন কিংবা হোর্ডিং খুলে দিচ্ছি।
তারা আরো জানায়, আমরা সীমান্ত এলাকার ছেলে। বেশ কয়েক বছর আগেও দেখেছি এই এলাকায় নদীর ধারে শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসত। এখন সেই সংখ্যাটা অনেক কমে গিয়েছে। সভ্য মানুষের ক্রমাগত অত্যাচারেরই এ রকম ঘটছে।
এরপর আমরা কয়েকজন মিলে ঠিক করি এর একটা বিহীত ব্যবস্থা করব। তারপরে ত্রিশ টাকা দিয়ে একটা ভ্যান ভাড়া নিয়ে গাছ থেকে পেরেক তুলে ফেস্টুন ও হোর্ডিং খোলার কাজ শুরু করেছি। গাছকে যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিতে পেরে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।
স্থানীয় ফরেস্ট রেঞ্জার অমলেন্দু রায় বলেন, গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে এভাবে পোস্টার কিংবা হোর্ডিং লাগানো রীতিমত অপরাধ। আমরা একাধিকবার এই বিষয়ে প্রচারও করেছি। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের ওই ছেলেরা স্বেচ্ছায় গাছ বাঁচাতে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
সূত্র: আনন্দবাজার
বাংলাদেশ সময় : ১৪১৭ ঘন্টা, মার্চ ০৩, ২০১২