ঢাকা : আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন: ক্ষুধা ও দারিদ্র ঘোচাও’।
এক আত্মীয়ের মোবাইলের মাধ্যমে বুধবার সকালে লক্ষীপুর জেলার এক দিনমজুর মহিলা (৫০) আয়েশার সঙ্গে কথা হলো। সকাল ৬টা থেকে রাত দশটা অবধি একটি বাড়িতে গৃহর্কমীর কাজ করেন তিনি।
জ্যাঠী কেমন আছেন? জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘বালা (ভাল), আমনে বালা আছেননি?’
‘‘মোতালেব ভাই’র খবর কি?’’ জিজ্ঞাসা করলে কেঁদে দিলেন আয়েশা জ্যাঠী। বললেন, ‘কুনু (কোনও) খবর নাই, উত্তর বাইর (বাড়ির) রফিকে কইছে জেলে আছে, সোদি পুলিশের লগে মিটমাট কইরতে অইব, কে কইরবো’।
আয়েশা জ্যাঠীর স্বামী মঈনুদ্দিন মারা গিয়েছেন বছর আট হয়েছে। বড় ছেলে কাদের বৌ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বাড়িতে থাকে। খোঁজ খবর নেয় না মা’র। দ্বিতীয় ছেলে মোতালেব সৌদি আবর গিয়েছে বছর ৬ আগে। আর ৫ মেয়ের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে।
ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অবৈধ হয়ে পড়েছিল মোতালেব। ২ বছর ধরে পালিয়ে পালিয়ে ছিল। এখন সৌদি জেলে। একা একা দিন কাটে আয়েশা বিবি’র।
মনে পড়ল গতরাত ১২টায় শহীদ মিনারের বিপ্লবী নারীদের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমরাই পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের এ আয়োজনে আঁধার ভাঙার শপথ নিয়েছিলেন নারী মুক্তি আন্দোলনের নেত্রীরা।
গ্রামের আয়েশা বিবি; সকালে ফোনে বলে, ‘চাইর দিকে আন্ধার অই গেছে, সুদের টিয়া এবো সোদ কইরতাম হারি ন’ (আমার চারপাশ অন্ধকারে ঢেকে গ্যাছে,সুদের টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। )।
‘গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন: ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ঘোচাও’--এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নারী দিবস পালিত হচ্ছে এ কথা বলা যায় না। আন্তর্জাতিক নারীদিবসকে ঘিরে আয়োজিত প্রসাধন সামগ্রীর উৎসবের রং আসলে ফর্সা বানাতে পারে না আয়েশা বিবি বা সকালে শাহবাগের রাস্তা ঝাড়ু দেয়া আনোয়ারা বেগমের চামড়ার রঙ।
সকাল আটটায় আনোয়ারা বেগম ঝাড়ু দিচ্ছিলেন চারুকলার সামনের রাস্তা। বয়স ৩০ বললেও দেখতে মনে হচ্ছিল বয়স ৪০।
বললাম, আপা আপনেরে দেখতে সুন্দর কিন্তু একটু বয়স্ক লাগতাছে। লজ্জা পেলেন আনোয়ারা। বললেন, কাম করতে করতে বয়স বেশি মনে অয়।
রাজধানীর ধলপুড় বস্তিতে স্বামীর সঙ্গে থাকেন আনোয়ারা। বড় দুই ছেলেমেয়ে বাবাকে ময়লা নেয়ার কাজে সাহায্য করে। আর ছোট মেয়ের বয়স ৪। বস্তিতেই থাকে।
‘নারী দিবস’ শব্দটি শুনেছেন কিনা জানতে চাইলে অবাক হলো, মনে হলো আমার কথোপকথনে তার কাজের বিঘ্ন হচ্ছে। তবে তিনি যে ‘নারী’ এ শব্দটাই হয়তো তার কানে বাজল বেশি করে।
কর্মজীবী নারী সংগঠনের সঙ্গে নেই আনোয়ারার পরিচয়। তাই কর্মীজীবী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো কঠিন শব্দ তার সামনে কেউ আওড়ায় না।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত বিশেষ দিনগুলোর একটি হয়ে উঠছে নারী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলের সামনে নারীমুক্তি আন্দোলনের গান শোনানো হচ্ছে এবং নারীদের মুখে মাখা হচ্ছে প্রসাধনী।
কর্পোরেট নারী দিবসে আয়েশা বিবি বা আনোয়ারাদের দরকার হয় না প্রসাধনী সামগ্রী বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের।
আর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এখন তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত নারীদের ছবি তোলা এবং এক বেলার খাবার জোগাতে ব্যস্ত।
গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন: ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ঘোচানোর সময় কোথায়?