ঢাকা: ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল ঘটেছিল মর্মান্তিক টাইটানিক দুর্ঘটনা। সেসময়ের বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও বিশালায়তনের জাহাজ এটি।
শূন্য ডিগ্রিরও কাছাকাছি তাপমাত্রায় সমুদ্রে সুবিশাল আইসবার্গের মুখোমুখি হতে পারে টাইটানিক, এমন শতর্কবার্তা টাইটানিকের রেডিও অপারেটরকে জানিয়েছিল আমেরিকা ও মিসাবা নামের দু’টি জাহাজ, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা পৌঁছেনি জাহাজের মূল যোগাযোগকেন্দ্রে। এরই পরিণতিতে ধীরে ধীরে টাইটানিক এগিয়ে চলে ভয়ংকর পরিণতির দিকে। সেদিনই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষণকারীরা সরাসরি টাইটানিকের সামনে সেই আইসবার্গটি দেখতে পায়।
টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মারডক আকস্মিকভাবে বামে মোড় নেওয়ার আদেশ দেন এবং জাহাজটিকে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে চালনা করতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন। কিন্তু তখন অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। ডানদিকে আইসবার্গের সাথে প্রচণ্ড ধাক্কায় টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে চিড় দেখা দেয় এবং এভাবেই ধ্বংসের পথ পরিগ্রহ করে ইতিহাস বিখ্যাত টাইটানিক।
দুর্ঘটনার পর প্রমোদতরী টাইটানিকের ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ অসহায় অসংখ্য যাত্রীর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে স্বেচ্ছায় আটলান্টিকের জলে আলিঙ্গণ করেন মৃত্যুকে। ক্যাপ্টেন স্মিথের এমন আত্মত্যাগের কারণে পরবর্তীতে নানাভাবেই মহিমান্বিত করা হয় তাকে। এমন ইতহাসই আমাদের জানা।
সম্প্রতি বহুলে আলোচিত টাইটানিক দুর্ঘটনা নিয়ে বেরিয়েছে নতুন এক তথ্য এবং সে তথ্যে মহিমান্বিত ক্যাপ্টেন স্মিথকেই দায়ী করা হয়েছে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার জন্য। টাইটানিক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী এমিলি রিচার্ডসের লেখা একটি চিঠি নতুন করে এ বিতর্ক জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি দৈনিকের বরাত দিয়ে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
এমিলি সাউদাম্পটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। লাইফবোটের সাহায্যে তিনি, তার দুই ছেলে উইলিয়াম আর সিবলি, মা এলিজাবেথ, এবং বোন নেলি বেঁচে যান। কিন্তু অনেক হতভাগ্য যাত্রীর মতোই মৃত্যু ভাই জর্জের। টাইটানিক ডুবে যাওয়ার প্রায় দু’দিন পরে উদ্ধারকারী জাহাজ কার্পেথিয়ায় নিউ ইয়র্ক ফেরার সময় শাশুড়িকে ওই চিঠিটা লিখেছিলেন এমিলি।
বেঁচে যাওয়া টাইটানিকের দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রী এমিলি রিচার্ডসের অভিযোগ, ‘হিমশৈলে ধাক্কা লাগার কয়েক ঘণ্টা আগে টাইটানিকের বারে মদ খেতে দেখা গিয়েছিল ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ। ’
চিঠির জবানিতে জানা যায়, সেদিন রাত ১১টায় বিশাল হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে জাহাজের। অন্য আর এক জনকে দায়িত্বে বসিয়ে ক্যাপ্টেন বারে মদ খেয়ে পড়েছিলেন। ক্যাপ্টেনেরই দোষ। শেষ লাইফবোটে এমিলি ও তার অন্য স্বজনরা বাচঁতে পারলেও মারা যান এমিলির ভাই জর্জ।
ঐতিহাসিক তথ্যে জানা যায়, দুর্ঘটনা ঘটার আগে সন্ধ্যায় টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির একটি রেস্তোরাঁয় ডিনার পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন ৬২ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন। রাতে নিজের কেবিনে ফিরে যান তিনি। কিন্তু হিমশৈলে ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জেগে যান। শেষ পর্যন্ত যাত্রীদের অসহায়তা সহ্য করতে না পেরে অতলান্তিকে ঝাঁপ দিয়ে তলিয়ে যান ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ।
খবরে বলা হয়, ক্যাপ্টেন স্মিথকে নিয়ে লেখা এমিলির ওই চিঠির সঙ্গে মিলেছে আরও একটি চিঠি। নিউ ইয়র্ক পৌঁছে যেটা লিখেছিলেন এমিলি। টাইটানিকের জিনিসপত্র নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের ‘হেনরি অলরিজ অ্যান্ড সন’ দু’টি চিঠিই নিলামে তুলছে আগামী ৩১ মার্চ।
এমিলির চিঠি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে নিলাম সংস্থার অ্যান্ড্রু অলরিজ বলছেন, ‘হয়তো নিজের ভাইকে হারিয়ে অসম্ভব মনোকষ্টে ভুগছিলেন ওই মহিলা। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে যাঁকে সামনে পেয়েছেন, তাঁকেই দোষারোপ করতে চেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন স্মিথ বোধহয় তাঁর ক্ষোভের শিকার হয়েছেন। কারণ আমরা যত দূর জানি, ওই সন্ধ্যেয় ক্যাপ্টেন মদ খাচ্ছিলেন এমন সাক্ষ্য কোনও রিপোর্ট থেকে পাওয়া যায়নি। তাই এমিলির দেওয়া তথ্য সত্যি বলে মানতেই হবে, তা নয়।
অ্যান্ড্রু অলরিজ বলেন, বিষয়টা বিতর্কিত। তবে হ্যাঁ, উনি সেই রাতে জাহাজে ছিলেন এবং তাঁর দেওয়া বিবরণে নতুন কিছু জানা গেল, এটুকুই বলা যেতে পারে। তা ছাড়া, কার্পেথিয়া থেকে পাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ যথেষ্ট দুষ্প্রাপ্য। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘন্টা, মার্চ ১০, ২০১২