ঢাকা : পদার্থবিদদের মাঝে সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় আবিষ্কার ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’র (আপেক্ষিকতাবাদ) জনক আলবার্ট আইনস্টাইনের ১৩২তম জন্মদিন ১৪ মার্চ, বুধবার। যাঁর অনুসৃত গবেষণার পথ ধরেই এখনো এগিয়ে চলছে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের চর্চা, নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কার।
আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতাবাদে বলবিজ্ঞান ও তড়িৎ চৌম্বকত্বকে একীভূত করেছিলেন। প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন অসমগতির ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নতুন মহাকর্ষ তত্ত্বের। এছাড়াও বিজ্ঞানে তার অনন্য সাধারণ অবদানের মধ্যে, আপেক্ষিকতাভিত্তিক বিশ্বতত্ত্ব, বলবিজ্ঞানের চিরায়ত সমস্যাসমূহ ও কোয়ান্টাম তত্ত্বে তাদের প্রয়োগ, অণুর ব্রাউনীয় গতির ব্যাখ্যা, আণবিক ক্রান্তিকের সম্ভাব্যতা, পদার্থবিজ্ঞানের জ্যামিতিকীকরণ অন্যতম।
১৯৯৯ সালে বিশ্ব বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন আইনস্টাইনকে ঘোষণা করে ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি’ হিসেবে।
বিশ্বের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের ভোট নেওয়ার মাধ্যমে একটি সমীক্ষাতেও জানা গেছে, তাকে প্রায় সবাই সর্বকালের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দৈনন্দিন প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন কাউকে বা কোনো কিছুকে বোঝাতে উপমা হিসেবে চলে আসে আইনস্টাইনের নাম। আইনস্টাইনকে তাই মনে করা হয় মেধার সমার্থক হিসেবে।
১৯০৫ সালে আইনস্টাইন ‘স্পেশাল রিলেটিভিটি’ বা ‘বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’ প্রকাশ করেন। আপেক্ষিকতা তত্ত্বে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বে আলোর চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এ সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক পদার্থবিদ্যার কাঠামো ও তৎসংশ্লিষ্ট তত্ত্ব। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বারবার জয় হয়েছে আইনস্টাইনের এ তত্ত্বের।
ইউরোপের একদল বিজ্ঞানী বলেন, আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলে নিউট্রিনো। প্রায় তিন বছর গবেষণার পর এই তথ্য প্রকাশ করেন পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান সার্নের বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের এই তথ্য হুমকির মুখে ফেলে দেয় বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ E=MC2 অর্থাৎ আইনস্টাইনের ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ বা আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে। কেননা এই তত্ত্বের মূল কথা হচ্ছে, আলোর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছু নেই।
সার্নের গবেষণা ফল প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন বিশ্বের তাবৎ বিজ্ঞানী। তাদের বেশিরভাগই মনে করতে থাকেন যে, নিশ্চয়ই কোথাও গণ্ডগোল হচ্ছে! কেননা এতদিনকার একটা তত্ত্ব আজ হঠাৎ ভুল বলে প্রমাণিত হবে, সেটা মেনে নিতে পারছিলেন না তারা। সন্দেহের মধ্যে ছিলেন খোদ গবেষকরাও।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জার্নাল ‘সায়েন্স ইনসাইডার’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে সার্নের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সম্ভাব্য দু`টি ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়। এর একটি ‘লুজ’ অর্থাৎ ঢিলা অপটিক্যাল ফাইবার কানেকশন।
যে কারণে সময় গণনায় ভুল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া আরেকটি ত্রুটি হতে পারে ‘অসিলেটর’-এ। এটাও সময় গণনার একটি যন্ত্র। মার্কিন ওই জার্নালের প্রতিবেদনের পর সার্নের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে সম্ভাব্য ওই দু’টি ত্রুটির কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী মে মাসে তারা আবার নতুন করে গবেষণা শুরু করবেন।
সার্নের মুখপাত্র জেমস গিলিস বলেন, গবেষণার ফল এখন সন্দেহের মুখে। আরেক মুখপাত্র আর্নড মার্সোলিয়ার বলেন, এটা একটা জটিল গবেষণা। কেবল যন্ত্র নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানীরা আবার সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা শুরু করেছেন এবং এটা চলবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের কাছে সার্নের ল্যাবরেটরি অবস্থিত। বিজ্ঞানীরা সেখান থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা ইতালির রোমের কাছে মাটির নিচের ‘গ্রান সাসো’ ল্যাবরেটরিতে নিউট্রিনো পাঠান। এ সময় তারা দেখতে পান যে, আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউট্রিনো। সংখ্যার হিসেবে নিউট্রিনো আলোর চেয়ে ৬০ ন্যানোসেকেন্ড বেশি দ্রুতগতির। অর্থাৎ এক সেকেন্ডকে যদি একশ কোটি ভাগ করা হয়, তাহলে তার ৬০ ভাগ যতটুকু সময় হবে, ঠিক ততটুকু সময় আগে নিউট্রিনো রোমের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে পৌঁছে। সার্নের এই গবেষণা ফল নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বেঁচে থাকা পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত স্টিফেন হকিং এ বিষয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।
বাংলাদেশে আইনস্টাইন চর্চা
বিশ্বের বিজ্ঞান চর্চায় ব্যাপৃত অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও আইনস্টাইন চর্চা রয়েছে। তবে আমাদের চর্চা এখনো বিশ্বমানে উন্নীত হয়নি বলে অভিমত দেশের পদার্থবিজ্ঞানীদের। তবে পদার্থবিজ্ঞানের সামগ্রিক বিষয়াবলীর মধ্যে আইনস্টাইনের তত্ত্ব এখনো অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলে মত তাদের।
দেশের পদার্থবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা ও তাদের মতামতও প্রকাশ করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ওসমান গনি তালুকদার এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুসফিক আহমদ কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন, তাঁরা যৌথভাবে গ্যালিলিও, নিউটন, আইনস্টাইন ও ডি-ব্রগলির তত্ত্বের সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের ১৫ বছরের গবেষণালব্ধ তত্ত্বের মাধ্যমে তাঁরা পেয়েছেন তিনটি সমীকরণ ও কিছু মৌলিক ধ্রুব সংখ্যা। আর এই সমীকরণ ও ধ্রুব সংখ্যা দিয়ে পূর্ণতা লাভ করবে বা সম্প্রসারিত হবে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার মতবাদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো দাবি করা হয়, উপ-পারমাণবিক কণা নিউট্রিনোর আলোর গতিকে অতিক্রম করার সাম্প্রতিক এক পরীক্ষার খবরে বিশ্বে যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, তার ইঙ্গিত আজ থেকে ১০ বছর আগেই অধ্যাপক ওসমান গনি তালুকদার তাঁর একটি বইয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি দাবি করেছিলেন, নিউট্রিনো নামের একটি বস্তুকণিকা আছে, যা আইনস্টাইনের সূত্র মানছে না। ওই সময়ে সংবাদপত্রেও তাঁর এই দাবির কথা প্রকাশিত হয়েছিল। অধ্যাপক ওসমান গনি বলেন, তিনি ও মুসফিক আহমদ ১৯৯৬ সাল থেকে আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি (আপেক্ষিকতা) মতবাদ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন।
প্রথমদিকে, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলাদা কাজ শুরু করেন। তবে একটা ব্যাপারে দু’জনেই একমত ছিলেন যে বস্তুকণিকার গতি আলোর চেয়ে বেশি হতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের কিছু বিদ্যমান তত্ত্বের ভিত্তিতেই তাঁরা এই ধারণা পান। এই ধারণাগুলো তাঁরা প্রবন্ধ আকারে বিভিন্ন জার্নালে পাঠালেও তা প্রকাশিত হয়নি। পরে অধ্যাপক ওসমান গনি নিজ উদ্যোগে ২০০১ সালে ‘অ্যান অল্টারনেটিভ অ্যাপ্রোচ টু দ্য রিলেটিভিটি’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেন।
বইটিতে তিনি দাবি করেন, বস্তুর বেগ আলোর বেগের চেয়ে বেশি হতে পারে এবং নিউট্রিনোর কিছু ব্যবহার আইনস্টাইনের রিলেটিভিটির মতবাদকে লঙ্ঘন করে। দেশের শীর্ষ দু’টি দৈনিকে তাঁর এই বক্তব্য ছবিসহ প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি অধ্যাপক মুসফিক আহমদ ও অধ্যাপক ওসমান গনির বেশকিছু প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এই দুই গবেষক যৌথভাবে ঘোষণা করেন, এ পর্যন্ত আইনস্টাইনের মতবাদগুলো ছিল অসম্পূর্ণ। আইনস্টাইন পাঁচটি সমীকরণ এবং একটি মৌলিক ধ্রুব সংখ্যা দিয়ে গেছেন। আর তাঁদের নির্ণীত তিনটি সমীকরণ এবং কয়েকটি ধ্রুব সংখ্যার মাধ্যমে আইনস্টাইনের মতবাদ সম্প্রসারিত হবে এবং সেই সম্প্রসারিত রূপই একবিংশ শতাব্দীতে পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি হবে বলে তাঁরা দাবি করেন।
তবে এবিষয়ে ভিন্নমতও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এএ মামুন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, যারা অতীতে মৌলিক গবেষণা করে গেছেন তাদের অবশ্যই বড় করে দেখতে হবে। গবেষণাকর্ম সম্প্রসারিত বা সমৃদ্ধ করা যেতে পারে, কারো গবেষণাকে ভুল বলা ঠিক হবে না।
ড. মামুন মনে করেন, আইনস্টাইন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণাকর্ম নিয়ে মন্তব্য করতে আমরা এতটা সামর্থ্য এখনো অর্জন করিনি। অধিকতর গবেষণার মাধ্যমেই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে হবে।
শৈশব ও শিক্ষা জীবন
আইনস্টাইন জন্মগ্রহণ করেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল-এর মৃত্যুর বছর ১৮৭৯ সালের ১৮ মার্চ জার্মানির উরটেমবার্গের উল্ম শহরে। তার শৈশব কাটে মিউনিখে। বাবা হেরমান আইনস্টাইন মূলত পাখির পালকের বেড তৈরি ও বাজারজাত করতেন। পরবর্তীতে তিনি মিউনিখে একটি তড়িৎ যন্ত্র নির্মাণ কারখানা স্থাপন করে মোটামুটি সফলতা পান।
ছোটবেলায় দু’টি জিনিস আইনস্টাইনের শিশুমনে অপার বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। প্রথমত: পাঁচ বছর বয়সে একটি কম্পাস হাতে পান এবং তার ব্যবহার দেখে বিস্মিত হন। অদৃশ্য শক্তির কারণে কিভাবে কম্পাসের কাঁটা দিক পরিবর্তন করছে? তখন থেকেই আজীবন অদৃশ্য শক্তির প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ জন্ম নেয়।
দ্বিতীয়ত: ১২ বছর বয়সে একটি জ্যামিতির বই তার চিন্তার রাজ্যে নতুন দিক উন্মোচন করেন। বইটি ছিল ইউক্লিডের এলিমেন্ট্স।
স্কুল পর্যায়ে ইউক্লিডীয় জ্যামিতি আয়ত্ত করার পর ক্যালকুলাসের প্রতি মনোযোগী হন আইনস্টাইন। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে তড়িৎ প্রকৌশলী হবে, কিন্তু তিনি বিশুদ্ধ জ্ঞানের প্রতিই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
১৫ বছর বয়সে আইনস্টাইন প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র লিখেন যার নাম ‘চৌম্বক ক্ষেত্রে ইথারের অবস্থা সংক্রান্ত অনুসন্ধান’ (The Investigation of the State of Aether in Magnetic Fields)।
যেভাবে আইনস্টাইন হয়ে ওঠা
আইনস্টাইন সুইজারল্যান্ডের আরাইতে জস্ট উইন্টেলার কর্তৃক পরিচালিত একটি বিশেষ ধরনের স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৯৬ সালে সেখান থেকে স্নাতক হন। সেখানে তিনি মূলত ম্যাক্সওয়েলের তড়িত চৌম্বক তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। একই সময়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তিনি তা এড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন।
গণিতজ্ঞ মার্সেল গ্রসম্যান এবং বেসোযার সঙ্গে আইনস্টাইন স্থান-কাল নিয়ে পড়াশুনার ফাঁকে নিয়মিত আলোচনা করতেন। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় মিলেভা মেরিক নামে এক তরুণীর। মিলেভা সার্বিয়া থেকে আগত পদার্থবিজ্ঞানের ফেলো ছাত্রী ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে মিলেভা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের একমাত্র ছাত্রী। তাদের বন্ধুত্ব প্রেমে গড়ায় এবং এই মিলেভাকেই পরবর্তীতে বিয়ে করেন। আইনস্টাইন ১৯০০ সালে ইটিএইচ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বের হন।
১৯০৫ সালে আইনস্টাইন Annalen der Physik নামক জার্মান বিজ্ঞান সাময়িকীতে চারটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। জার্মানির নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রগুলোকে ইতিহাসে ‘অ্যানাস মিরাবিলিস’ গবেষণাপত্রসমূহ নামে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। গবেষণাপত্র চারটির বিষয় ছিল, আলোক তড়িৎ ক্রিয়া, আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ সমীকরণ প্রতিপাদন, ব্রাউনীয় গতি, আণবিক তত্ত্বের সমর্থন, তড়িৎগতিবিজ্ঞান, আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব আবিষ্কার, ভর-শক্তি সমতুল্যতা, বিখ্যাত E=mc2 সূত্র প্রতিপাদন।
চারটি গবেষণাপত্র বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত এবং এগুলোর কারণেই ১৯০৫ সালকে আইনস্টাইনের জীবনের ‘চমৎকার বছর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য সে সময় তার গবেষণাপত্রের অনেকগুলো তত্ত্বই প্রমাণিত হয়নি এবং অনেক বিজ্ঞানীর কয়েকটি আবিষ্কারকে ভ্রান্ত বলে উড়িয়ে দেন। ২৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার উপদেষ্টা ছিলেন পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলফ্রেড ক্লাইনার। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল, ‘আ নিউ ডিটারমিনেশন অব মলিক্যুলার ডাইমেনশনস’।
১৯০৮ সালে বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯১০ সালে তিনি ক্রান্তীয় অনচ্ছতা বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। ১৯১১ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন আইনস্টাইন। অবশ্য এর পরপরই চার্লস ইউনিভার্সিটি অব প্রাগে পূর্ণ অধ্যাপকের দায়িত্ব নেন।
প্রাগে অবস্থানকালে আলোর উপর মহাকর্ষের প্রভাব বিশেষত মহাকর্ষীয় লাল সরণ এবং আলোর মহাকর্ষীয় ডিফ্লেকশন বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখেন। এর মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যগ্রহণের (Solar eclipse) সময় আলোর ডিফ্লেকশনের কারণ খুঁজে পান। এ সময় জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী Erwin Freundlich বিজ্ঞানীদের কাছে আইনস্টাইনের চ্যালেঞ্জগুলো প্রচার করতে শুরু করেন। আইনস্টাইন অসাধারণ গবেষণাকর্মের জন্য ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯২৫ সালে কপলি মেডেল এবং ১৯২৯ সালে ম্যাক্স প্লাংক মেডেল পান। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির প্রিন্সটনে মারা যান বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানী।
বাংলাদেশ সময় : ০৯৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১২