পৃথিবীর তাবৎ ক্রিকেটপ্রেমী আর মিডিয়া যার পেছনে ছোটেন তিনি হলেন আধুনিক ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তী শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। কিন্তু শচীন কার পেছনে ছোটেন?
বাংলাদেশে এসে জীবনের শততম সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
তরুণদের জন্য একথা শুধু তার মুখ ছাড়া আর কার মুখেই বা মানায়?
সেই ১৯৮৯ সাল থেকে যখন তার সঙ্গের বন্ধুরা পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেট ব্যাট হাতে খেলছে সাধারণ টুর্নামেন্ট। তখন শচীন দাঁড়িয়েছেন করাচিতে পাকিস্তানের নামজাদা বাঘা বাঘা বোলারদের সামনে। ওয়াকার ইউনিসের বলে পিচে রক্ত ঝড়ে পড়তে দেখেও সেই ১৬ বছরের কিশোরটি একবারও পিছ পা হয়নি। বরং ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো নতুন প্রত্যয়ে। শুক্রবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জীবনের শততম সেঞ্চুরি করার পরও শচীনের মুখে তাই ঘুরেফিরে সেই সপ্নের কথাই এসেছে।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে যখন সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরেছেন তার দুটি কথা শোনার অপেক্ষায়- তখন শচীন সবাইকে বল্লেন, ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই স্বপ্নের পিছনে ছুটেই আজ তার এই অনন্য অর্জন।
কবে ক্রিকেট ছাড়বেন এমন প্রশ্নের উত্তরে লিটল মাস্টার জানিয়েছেন, ক্রিকেট ভালোবাসেন বলেই এখনো সেটা খেলে যাচ্ছেন। যতদিন উপভোগ করবেন ঠিক ততদিনই খেলবেন। এর একদিন বেশিও নয়।
শচীন বলেন, আমার অবসর বিষয়ে কারো চিন্তার কিছু নেই। যখন আমি অবসরের সিদ্ধান্ত নেব তখন এটি লুকাবো না।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঠিক এক বছরের মাথায় সেঞ্চুরি বিষয়ে ভারতীয় এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বলেন, আমি আসলে এই পর্যায়ে এসে কোনো কিছু ভাবতে পারছি না। আমার জন্য এক কঠিন সময় গেছে এটি। আমি এই সিজনে দায়িত্বপূর্ণভাবেই ব্যাটিং শুরু করেছিলাম এবং অস্ট্রেলিয়াতেও ভালোই ব্যাটিং করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না।
তার সেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের প্রতিক্রিয়ায় শচীন বলেন, আসলে আপনি ঠিক কতগুলো সেঞ্চুরি হাঁকালেন তা বড় বিষয় নয় বরং সবশেষে আপনি আপনার দলের জন্য কী করতে পারলেন সেটাই মুখ্য।
গত বছর সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার মত মাইলফলক অর্জন নিয়ে তিনি হতাশায় ভুগতেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরেও শচীন জবাব দিযেছেন খাঁটি ভদ্রলোকের মতই। সংবাদ মাধ্যম আইএএনএস কে তিনি বলেন, ‘আমিও আসলে মানবিক গুণাবলী দ্বারা পরিচালিত এবং চেষ্টা করছি সৎ থাকার। অনেক সময় আমি এনিয়ে হতাশ হয়ে পড়তাম। এবং এটি আপনার মধ্যেও কাজ করতে পারে। ’
তার প্রতিটি সেঞ্চুরি তাকে অনন্য এক রেকর্ড বা মাইলফলকের দিকে নিয়ে গেছে কিনা একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শচীন উত্তর দেন তার স্বভাবমতই। তিনি বলেন, অনেক সেঞ্চুরি করা কঠিন কিন্তু আমি রেকর্ডের জন্য খেলি না। আমি আসলে খেলাটাকে ভালোবেসেই খেলি। আমার শুরু অর্থাৎ ১৯৮৯ সাল থেকেই এই প্রক্রিয়া চলছে। আমি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেও এখনো মাঝে মাঝে ভুল করি।
শচীন আরো বলেন, পেছনের সময়টা আমার জন্য একটি পরীক্ষা ছিলো এবং আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেই যে, আমি এর যোগ্য নই জেনেও সবকিছু আমার পক্ষেই গেছে। আমি আসলে খেলায় কত স্কোর করলাম সেটা বড় কথা নয়। সবার আগে আপনাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমি আমার সব পরিকল্পনা আমার দলের জন্যই করেছি। তাই শুধুমাত্র সেঞ্চুরির ইচ্ছাই আমার মধ্যে কাজ করেনি বরং আমি স্কোরবোর্ডে আমার কত রান হলো তা না দেখে রান রেটকে তাড়া করেছি।
তারপরও একবারের জন্যও কি সেঞ্চুরির মাইলফলকের কথা তার মনে হয়নি বা মিডিয়া কিংবা ভক্তদের মাতামাতি কি একটু হলেও প্রভাব ফেলেনি শচীনের মধ্যে? তিনি এর জবাব দিয়েছেন সত্যের কাছে থেকে।
শচীন বলেন, সত্যিই আমি এ বিষয়ে কিছু চিন্তা করতাম না। মিডিয়াই এটা প্রথমে শুরু করেছে। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে রুম সার্ভিসসহ যেখানে যেতাম সবাই একই প্রশ্ন করতো, আমার শততম সেঞ্চুরি কবে হবে। আমার আশ্চর্য লাগতো এই ভেবে যে, কেউ আমার ৯৯ তম সেঞ্চুরি নিয়ে কথা বলতো না।
শততম সেঞ্চুরি করার আগ মুহূর্তের অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে শচীন বলেন, এটা ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন অনুভূতি। বল ভালোভাবে ব্যাটে আসছিলো না। কোহলি আর আমি আলাপ করেছিলাম যে এই উইকেটে ২৭৫ থেকে ২৮০ ভালো সংগ্রহ।
বাংলাদেশ দলের ব্যাপারে শচীন বলেন, তারা ভালো উদীয়মান দল। যদিও এখনো এই দেশের মানুষ মনে করে তারা ক্রিকেটটা খেলতে পারে না। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষের ম্যাচটা তাদের ভালো খেলার প্রমাণ বহন করে।
যুবক ও উদীয়মান খেলোয়াড়দের জন্য শচীন দিয়েছেন তার মূল্যবান পরামর্শ।
যুবকদের জন্য শচীন বলেন, ‘স্বপ্নকে সত্যি করতে এগিয়ে এসো। আমি এক এক করে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য ২২ বছর অপেক্ষা করেছি। তাই স্বপ্নের পেছনে লেগে থাকো। ’
বাংলাদেশ সময়: ২৩২২ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১২
শচীন ও বাংলাদেশ দলকে ফুল-মিষ্টি পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
সম্পাদনা: সুমন মজুমদার, নিউজরুম এডিটর/আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর