দেশের সীমানা পেরুতে গেলেই প্রয়োজন পাসপোর্ট। সেখানেই মানুষের যত বিপত্তি।
বাংলানিউজ- ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) আয়োজিত জাতীয় উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় ‘ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট সিস্টেম’ প্রকল্পটি পেয়েছে তৃতীয় পুরস্কার। প্রকল্পটি তৈরি করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাত ইয়াসির, তারিকুল ইসলাম রনি এবং শারনেন্দু বণিক প্রতিক।
নিজেদের কাজের কথা বলতে গিয়ে রাহাত ইয়াসির বাংলানিউজকে পুরো গল্পই বলে ফেলেন। তিনি বলেন, আমি পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে দেখি বিশাল লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এমনকি কবে পাসপোর্ট দেবে সেটারও নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। সময় দেওয়া হচ্ছে কিন্তু সেদিনই আমি পাসপোর্ট পাবো সেটা নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য ঠিক কবে পুলিশ আমার বাসায় যাবে সেটারও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয় না। অন্যদিকে সেদিনই আমি ভয়াবহ একটি ঘটনা দেখলাম। শত শত হজযাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের কাছেই জানতে পারি সেদিনই তাদের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন। বিষয়টি দেখে খুব খারাপ লাগতে থাকে। এতোগুলো মানুষ হজে যাবেন কিন্তু সময়মত পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। ধর্মীয় বিষয়গুলোতো আবেগের। সেদিনই বাসায় এসে সিদ্ধান্ত নেই কিছু একটা করতে হবে।
তখনই বন্ধুদের নিয়ে সফটওয়্যার তৈরির কথা ভাবি। কাজও শুরু করে দেই। এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করেছেন আমাদের শিক্ষক ড. নোভা আহমেদ।
‘ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট সিস্টেম’ প্রকল্পটি একদমই ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে। কয়েকটি ধাপে এগুতে হবে। শুরুতেই জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরটি ইনপুট দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারে নম্বরটি খুঁজে দেখবে। যদি ব্যবহারকারীর নম্বরটি সঠিক হয় তবেই তিনি পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করতে পারবেন।
দ্বিতীয় ধাপে সাধারণ তথ্য দেওয়া লাগবে। যেমন- নিজের নাম, পিতার নাম, মায়ের নাম, ঠিকানাসহ আরো কিছু তথ্য। এ তথ্যগুলোও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। যদি কোনো তথ্য ভুল থাকে তবে তাকে সেই ধাপেই ব্লক করে দেওয়া হবে। যদি তথ্য সঠিক হয় তবে তিনি এরপরের ধাপগুলোতে যেতে পারবেন।
এসব কিছুর পর প্রয়োজন পড়বে কাগজপত্র, ছবি এবং ফিংগার প্রিন্ট। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্কেন কপি সংযুক্ত করার পদ্ধতিও আছে তাদের এ প্রকল্পে। ওয়েবক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যাবে। প্রয়োজন হবে ফিংগার প্রিন্ট নেওয়ার যন্ত্র। তার আগে অবশ্য পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করতে হবে।
এসব প্রক্রিয়া শেষ হলে নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিতে হবে। ব্যাংক তাকে একটি স্লিপ দেবে। এ গেল ব্যবহারকারীর কাজ।
এবার আসা যাক অ্যাডমিন প্যানেলের কাজে। এ বিষয়টি একজন নির্দিষ্ট মানুষকেই করতে হবে। অ্যাডমিন প্যানেলে গিয়ে প্রত্যেকটি ফর্মের তথ্য যাচাই করে দেখে তিনি ব্যবহারকারীকে তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন। কবে পাসপোর্টটি দেওয়া হবে। কবে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য বাসায় মানুষ যাবে। এ সব বিষয় তিনি উল্লেখ করে দেবেন। এতে করে ব্যবহারকারীকে ভোগান্তির স্বীকার হতে হবে না। কারণ, ব্যবহারকারী লগইন করে তার পরবর্তী কাজগুলো সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন।
যদি ব্যবহারকারী কোনো ধরনের রিপ্লাই না পায় তবে কি হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে রাহাত জানায়, এজন্য আমরা একটি অপশন তৈরি করেছি। সেটার নাম হলো- ‘ইমেইল টু কমপ্লেইন’। যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সমস্যা ইমেইল সরাসরি অ্যাডমিনের কাছে পৌঁছবে।
এ সফটওয়্যারটি তৈরি করতে সময় লেগেছে পাঁচ মাস। ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট সিস্টেম বাস্তবে কার্যকর সম্ভব বলেও রাহাত ও তাদের পুরো দল জানায়।
বাংলানিউজ - ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) আয়োজিত ‘জাতীয় উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা’য় তৃতীয় স্থান পাওয়া সম্পর্কে তারা বাংলানিউজকে জানান, আমরা পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতায় যাইনি। আমরা চেয়েছি আমাদের উদ্ভাবনটি সবাই দেখুক। জানুক পাসপোর্ট সমস্যার সমাধান সম্ভব। সেখানে অংশ নিতে পেরেই আমরা খুশি। আর তৃতীয় স্থান পাওয়াটা আমাদের জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে।
তারা আশা প্রকাশ করেন, প্রতি বছর এমন আয়োজন দেশব্যাপী আরো বড় আকারে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৫২২ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১২