উদ্ভাবনী ধারণা দিয়ে ব্যবসার গতানুগতিক ধরনকে যারা পাল্টে দিয়েছেন এমনই ১২ জন সেরা উদ্যোক্তার তালিকা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইমের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফরচুন। তালিকার ষষ্ঠ স্থানে আছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি কফিকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।
হাওয়ার্ড শুলজ হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি ঘরে ঘরে কফি পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। জনপ্রিয় কফি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্টারবাকসের মধ্যমণি হলেন হাওয়ার্ড শুলজ।
শুলজের জন্ম ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। পড়াশোনা করেছেন নর্দান মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনা শেষ করে কর্মজীবনে তিনি বহু জায়গায় কাজ করেছেন।
তবে জীবনের গতি পাল্টে যায় হ্যামারপ্লাস্টে কাজ করতে এসে। এখানে এসেই জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান স্টারবাকসের মালিকদের রাজি করান তাকে কাজে নেওয়ার জন্য। স্টারবাকস তখন কফি উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। বাজারে পরিচিতিও আসছে ধীরে ধীরে।
স্টারবাকসে কাজ করতে গিয়ে তিনি নিত্য-নতুন আইডিয়া দিয়ে মালিকদের মুগ্ধ করে তুলছিলেন। সে সময় তাকে মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক করে দেওয়া হয়। সময়টা ছিল ১৯৮২।
মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হয়েই শুলজ বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন দেশের কফি হাউজ এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্রমণে। কফি বারগুলোতে গিয়ে তিনি নোট নিতে থাকেন। আসলে ক্রেতাদের চাহিদা কী।
ইতালিতে গিয়ে শুলজ খেয়াল করলেন শুধু কফিবারেই কফি বিক্রি হয় না। বারের বাইরেও বিভিন্ন পাবলিক জায়গায় কফি বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে শুলজের মাথায় নতুন বুদ্ধি আসলো। তিনি স্টারবাকসে ফিরেই মালিকদের জানিয়ে দিলেন, এখন থেকে কফি ঘরে বসেই খেতে পারার ব্যবস্থা করতে হবে।
আগে তরল কফি বিক্রি হত। সেজন্য সবাই হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেত। তবে যদি রোস্টেড কফি হয় তবে মানুষ বাসায় বসেই কফি বানিয়ে খেতে পারবে।
সঙ্গে সঙ্গে আইডিয়া লুফে নিল স্টারবাকস। এমন ভিন্ন আইডিয়া থেকে লাভের অর্থ শুলজকে দেওয়ারও ঘোষণা আসলো। এক বছরের মধ্যে স্টারবাকস ৩.৮ মিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম হল। চমকে গেল স্টারবাকস পরিবার।
নব্বইয়ের পর পর তিনি খেয়াল করলেন প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শ্রমিক কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শুলজ খুবই চিন্তায় পড়লেন। মনে পড়তে লাগলো তার বাবার কথা। তার বাবাও শ্রমিক ছিলেন। কাজের চাপে স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য তার মৃত্যু হয়েছিল।
স্টারবাকসের অধিকাংশ শ্রমিকদের ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ বিষয়ে তিনি নতুন সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বলে দিলেন, প্রতিজন শ্রমিক সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করবে। সে সঙ্গে তিনি বেতন থেকে কিছু অর্থ নিয়ে একটা ফান্ড করলেন। কেউ অসুস্থ হলে সে ফান্ড থেকে অর্থ নিতে পারবেন। সাময়িকভাবে বিষয়টির সুরাহা হল।
জনপ্রিয় ম্যাকডোনালসকে পেছনে ফেলে স্টারবাকস এগিয়ে গিয়েছে দুরন্ত গতিতে। এক জরিপে দেখা যায় বিশ্বের ২৫টি দেশে স্টারবাকসের ৪০০০ স্টোর আছে। প্রতিটি স্টোর সরাসরি স্টারবাকসের নিয়ন্ত্রণে চলে। প্রতি সপ্তাহে ১৫ মিলিয়ন মানুষকে কফি খাওয়ায় স্টারবাকস।
সফলতার রহস্য কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে শুলজ বলেন, তুমিই সেরা এটা ভাবতে গিয়ে অন্যকে ছোট করে দেখবে না। সে সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে। তবেই সফলতা ধরা দেবে।
বাংলাদেশ সময় : ১০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১২