মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি/ দাঁড়াও না একবার ভাই!/ ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, /দাঁড়াবার সময় তো নাই...
ছড়াকবিতার এই মৌমাছিদের আজকাল সহজে দেখা মেলা ভার। অতীতে শহর-গ্রামের বাড়ি-ঘরে আর আঙ্গিনার গাছে গাছে মৌচাক দেখা যেত হর-হামেশা।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত পটুয়াখালীর বাউফলেও মৌমাছি বা মৌচাকের দেখা পাওয়া এখন বিরল। এমনি এক আবহে বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া গ্রামের সরদার বাড়ির ইসমাইল সরদারের ঘরের দুয়ারের একটি গাছের বিশাল মৌচাকটি দেখে যে কেউ থমকে দাঁড়ায়।
ইসমাইল সরদার বাংলানিউজকে জানান, প্রায় দু’মাস আগে এক ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের দুয়ারে মৌমাছির ছোট একটি চাক দেখে কিছুটা চমকিত হন। ঘরের আঙ্গিনায় মৌচাক দেখে প্রথমে কিছুট ভয়ও পেয়ে যান, প্রাণীগুলো বিষাক্ত কি না আর বাড়ি-ঘরের মানুষ তাদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে- এই চিন্তায়। তবে পরে দেখা গেল মৌমাছিগুলো কোনো ক্ষতি করছে না। দিনে দিনে এরা যেন ঘরের মানুষের বন্ধু হয়ে যায়। ক্রমশ মৌচাকটি বাড়তে বাড়তে এখন তা দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে প্রায় ৯ বর্গফুট (৩X৩) আকৃতি নিয়েছে।
ইসমাইল সরদার আরো জানান, প্রতি ১ মাস পরপর চাকটি থেকে হাত দিয়েই মধু সংগ্রহ করা যায়। এসময় প্রাণীগুলো বিরক্ত হয় না বা কারো ক্ষতি করে না। প্রতিবার ১০-১২ কেজি মধু পাওয়া যায়।
তিনি জানালেন, শুরুর দিকে মৌমাছিগুলোকে ভয় পেলেও এখন প্রতিদিন তার ঘুম ভাঙ্গে অসংখ্য মোমাছির মধুর গুঞ্জরণে। এটা বেশ ভালোই লাগে।
উল্লেখ্য, উপকারী পোকা মৌমাছি সচরাচর মানুষের ক্ষতি না করলেও উত্যক্ত করলে এরা ক্ষিপ্ত হয়। সাধারণত গ্রীষ্মপ্রধান দেশে মৌমাছি দেখা যায়। এরা গাছের ডালে, মাটির গর্তে, পাথরের গায়ে, গুহার ভেতরে, বন-জঙ্গলে, ঝোপ-ঝাঁড়ে, বাড়ির দেয়ালে-কার্নিশে বা ছাদের নিচে মৌচাক বানায়। সামাজিক ও পরিশ্রমী প্রাণী হিসেবে এদের অন্যদের থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। এদের রয়েছে নিজস্ব সুশৃঙ্খল বিধি-বিধান।
পৃথিবীতে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে এপিস মেলিফেরা, এপিস সেরেনা, এপিস, ডরসাটা ও এপিস ফ্লোরিয়া- এই ৪ প্রজাতির মৌমাছি দেখতে পাওয়া যায়।
এপিস ডরসাটা প্রজাতির মৌমাছি সাধারণত ঘরের কার্নিসে বাসা তৈরি করে।
মৌমাছির মধু সূক্ষ্ম পুষ্টি উপাদান ও ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ। নানাবিধ জটিল ও পুরাতন রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও সুপরিচিত মধু শক্তিবর্ধক উপাদেয় খাবারও বটে।
বাংলাদেশ সময় : ১২৩৬ ঘণ্টা, ২৮ মার্চ, ২০১২