ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘বুদ্ধিমানের বিপদ থাকে না’

শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:০৬, মার্চ ২৮, ২০১২
‘বুদ্ধিমানের বিপদ থাকে না’

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) : কারো দুরবস্থাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেশগ্রামের মানুষ সাধারণত বলে থাকেন ‘অভাগার গরু মরে...। ’ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারী গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের মরেছে একটি এঁড়ে বাছুর।



এ পরিস্থিতিতে নিজেকে নিজেই ‘হতভাগা’ সাব্যস্ত করে সান্ত্বনা খোঁজা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। কারণ, বাছুরবিহীন গাভীর দুধ দোহানো বন্ধ হয়ে গেছে। এর কারণটা সবাই জানেন- সাধারণত নিজ সন্তানকে সামনে না দেখলে মা গরু দুধ দেয় না।

গাভী দুধ দেওয়া বন্ধ করায় চোখে অন্ধকার দেখছিলেন হতদরিদ্র কাশেম। এ পরিস্থিতিতে আবহমানকাল ধরে প্রচলিত কৌশল অবলম্বন করে মুখে হাসি ফুটেছে তার। এখন গাভীটি প্রতিদিন নিয়মিত দুধ দিচ্ছে।

কৃষক আবুল কাশেম (৩৫) বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন ৩ কেজি দুধ দেওয়া গাভীটি গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিয়ানোর (প্রসব) ২০ দিনের মাথায় মারা যায় তার বাছুরটি। সঙ্গে সঙ্গে দুধ দেয়াও বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে, ঋণ করে কেনা গরুর কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন কাশেম। এমনি একপর্যায়ে চর্মকারের সহায়তায় মৃত বাছুরের চামড়া ছাড়িয়ে নিলেন। তারপর চামড়ার ভেতর খড় ঢুকিয়ে চারদিক সেলাই করে মোটামুটি মরে যাওয়া বাছুরটির একটি প্রতিরূপ (ডামি) খাড়া করলেন। ডামি বাছুরের পা দিয়েছেন বাঁশের খুটি দিয়ে। এতেই হয়ে গেল কাজ। ডামিটি দেখে গাভীটির সন্তান বাৎসল্য ফিরে এল। এই ডামি বাছুরটি গাভী দোহানোর সময় পাশে রেখে তিনি দুধ দোহান। এ সময় গাভীটি ডামির গায়ে চাটা দেয় (লেহন করে)।

‘তবে আগে তিন কেজির মতো দুধ দোহানো যেত। এখন দুই কেজির মতো পাই। তারপরও ক্ষতির হাত থেকে অনেকটাই আমার রক্ষা হয়েছে এ কায়দায়’- হাসিমুখে বললেন আবুল কাশেম।  

আবুল কাশেমের স্ত্রী লুৎফুন্নাহার (৩০) বাংলানিউজকে জানান, দুধ দোহানোর সময় ডামিটি গাভীর সামনে রাখা হয়। অন্য সময় ঘরের ভেতরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। যাতে শিশুসহ উৎসুক মানুষের হাতের ছোঁয়ায় কিংবা রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়ে যায়।  

চরভেলামারী বন্দের চরপাড়ার গ্রামের ঈমান আলী (৭০) বললেন, ‘কথায় বলে বুদ্ধিমানের বিপদ থাকে না। বুদ্ধি থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব, তা দেখিয়েছেন কৃষক আবুল কাশেম। ’

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করলে নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক বেলালুর রহমান বাংলনিউজকে জানান, মাতৃত্ব অর্থাৎ সন্তান বাৎসল্যের কারণে সাধারণত প্রাণীদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস উদ্দীপ্ত হয়। এর ফলে পিটুইটারি গ্রন্থি (এক প্রকার অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি) প্রোল্যাকটিন হরমোন ক্ষরণ শুরু করে। ডামি বাছুরটি দেখে নিজের সন্তান ভেবে বা সন্তানের কথা মনে করে এই প্রোল্যাকটিন হরমোন ক্ষরণ হয় গাভীটির। আর সে সূত্রেই গাভীটি থেকে দুধ পাচ্ছেন আবুল ‍কাশেম।  

বাংলাদেশ সময় : ১৩৫৪ ঘণ্টা, ২৮ মার্চ, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।