ঢাকা: এসিড সন্ত্রাস, আগুনজনিত দুর্ঘটনাসহ নানা বিকৃত হয়ে যাওয়া মুখের অনেক মানুষকেই প্রায়ই আমরা দেখতে পাই। এই দেখায় আমরা হই ব্যথিত তার তারা হন বিব্রত।
কিন্তু তারপরেও প্রায়শ দুর্ঘটনা বা দুবৃত্তের হামলায় মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছেই। এ কারণে আমাদের মাঝে বিকৃত মুখমণ্ডলের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে মুখমণ্ডলের ছোটখোটো ত্রুটি সারানো গেলেও তা বিশাল সংখ্যক ভুক্তভোগীর জন্য অপ্রতুল এবং এ চিকিৎসা সেবাটাও সবার নাগালে নয়।
তবে এবার মুখমণ্ডলের বিকৃতি নিয়ে চরম কষ্টে ভোগা মানুষের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছেন মার্কিন চিকিৎসকরা। এই প্রথম তারা সফল হয়েছেন বিকৃত হয়ে যাওয়া মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা চোয়াল, দাঁত, জিহ্বাসহ নতুন এক মুখমণ্ডল ফিরিয়ে দিয়েছেন বিকৃত মুখের রিচার্ড নরিস নামে ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে। চিকিৎসকরা তার মুখমণ্ডলের চুলের রেখা থেকে নিয়ে কলার বোন পর্যন্ত পুরোটাই প্রতিস্থাপন করেছেন। এছাড়াও প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ওপর এবং নিচের চোয়াল, দাঁত এবং জীবের কিছু অংশ। গত ১৯ থেকে শুরু করে ২০ মার্চ পর্যন্ত চলা টানা ২০ ঘণ্টার ওই অপারেশনে ভূমিকা রেখেছেন দুই শ’র বেশি মেডিকেল প্রফেশনাল।
তবে মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনের এই যজ্ঞ ছিল মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারে চলা টানা ৭২ ঘণ্টার এক ম্যারাথন অঙ্গদান কর্মজজ্ঞের অংশ। এই অসাধারণ কাজে অজ্ঞাত পরিচয় একজন দাতার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মোট ৫ জন ব্যক্তিকে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মেডিকেল টিম এবং অঙ্গদাতার ভূয়সী প্রশংসা চলছে সর্বত্র।
গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট চিকিৎকদের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- আলোচিত ও প্রশংসিত ওই অঙ্গদান এবং প্রতিস্থাপনের এক সপ্তাহ পর রিচার্ড নরিস এখন তার চোয়াল নাড়াতে পারছেন, দাঁত ব্রাশ করছেন এমনকি ক্ষৌরিকর্মও (দাড়ি শেভ) করছেন।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে বন্দুকের গুলিতে নরিসের মুখ বিকৃত হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি প্রকাশ্য জীবন ত্যাগ করে দীর্ঘ ১৫ বছর নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন। ওই দুর্ঘটনায় তার খুলি, দুটি চোখ আর চোয়ালের কিছু অংশ বেঁচে যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর থেকে নিভৃতচারী বনে যাওয়া মানুষটি অতি প্রয়োজনে প্রকাশ্যে আসার ক্ষেত্রে মুখোশ ব্যবহার করতেন।
এদিকে প্রতিস্থাপন সাফল্যের অন্যতম রূপকার প্রধান সার্জন এডুয়েরডো রডরিগেজ বলেন, ‘এটি রিচার্ড নরিসের জন্য একটি চমৎকার উপহার। যে এক সময় মুখ দেখার আয়না নামিয়ে রেখেছিলো সে আজ আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে এবং আলিঙ্গন করছে। ’
রডরিগেজ আরও জানান, এই যুগান্তকারী সাফল্যের আগে ২০০৫ সাল থেকে নরিসের মুখমণ্ডলের ওপর ১২ বার অপারেশন করেছেন তিনি। কিন্তু কোনোবারই সাফল্য আসেনি।
তিনি বলেন, ‘সর্বশেস অপারেশনের দ্বারা আমরা আসলে নরিসের জীবন থেকে হারানো ১৫টি বছর প্রতিস্থাপন করেছি এবং তাকে সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে ফিরিয়ে এনেছি।
ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. স্টিফেন বার্টলেট সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নেভাল রিসার্চ দফতরের অর্থায়নে ১০ টানা বছরের গবেষণার ফসল হচ্ছে মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনের এ ঘটনা। অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল- গবেষণায় অর্জিত জ্ঞান যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা।
সাফল্যে উৎফুল্ল চিকিৎসক রডরিগেজ বলেন, ‘অপারেশনের তিন দিন পর নরিস মুখ দেখার আয়না চান। এরপর আয়নায় নিজের মুখ দেখে তা নামিয়ে রাখেন এবং আমাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানান। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১২
সম্পাদনা: সুমন মজুমদার, নিউজরুম এডিটর/ আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর