দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও ফিলিস্তিনের পতাকা উড়তে দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস)। কলম্বাস ক্রু সমর্থকরা (নর্ডেকে) নিজেদের হোম ম্যাচে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে।
গত মাসের শেষে মিশরের আল আহলি থেকে ৭.৫ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার ফি দিয়ে প্যালেস্টাইনি তারকা ফরোয়ার্ড ওয়েসাম আবু আলি-কে দলে ভেড়ায় কলম্বাস ক্রু। এরপরই সমর্থক সংগঠন নর্ডেকে ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়, যাতে দলের অন্য আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের মতোই আবু আলির দেশ ফিলিস্তিনের পতাকা স্টেডিয়ামে উড়ানো যায়।
এমএলএস সাধারণত রাজনৈতিক ব্যানার বা স্লোগান স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ করে, তবে খেলোয়াড়দের জন্মভূমির পতাকা আনার অনুমতি থাকে। ব্যতিক্রম ছিল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের পতাকা, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ফিলাডেলফিয়ার ইসরায়েলি খেলোয়াড় তাই বারিবো ক্লাবে যোগ দেওয়ায় সেখানকার সমর্থকরা আগের নিয়মে পতাকা আনতে পারছে।
কলম্বাস ক্রুর পক্ষ থেকে করা আনুষ্ঠানিক আবেদনের ভিত্তিতে এমএলএস এবার অনুমোদন দিয়েছে। এখন থেকে নর্ডেকে সেকশনে প্রতিটি খেলোয়াড়ের দেশ বা জাতীয় দলের পতাকা আনা যাবে। তবে অন্য কোনো মাঠে বা অন্য ক্লাবের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়নি।
কলম্বাস ক্রু এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ফুটবল মানুষকে একত্রিত করার শক্তি রাখে। আমাদের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের বৈচিত্র্যকে আমরা সম্মান জানাই। ’
২৬ বছর বয়সী আবু আলি ডেনমার্কে জন্ম নিলেও ফিলিস্তিনি অভিভাবকের সন্তান। গত বছর অনুমতি নিয়ে ডেনমার্ক ছেড়ে ফিলিস্তিন জাতীয় দলে খেলতে শুরু করেন তিনি। এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচে করেছেন ৪ গোল। মঙ্গলবার ওহাইওতে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আবু আলি বলেন, ‘আমার দেশ ও আমার জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করা বিশাল গর্বের। রাজনীতিতে কখনো যাইনি, তবে ফিলিস্তিনের হয়ে খেলা আমার জন্য সম্মানের। ’
ক্লাব বিশ্বকাপে গোল করার পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত এক কার্টুন চরিত্রের ভঙ্গি নকল করেছিলেন আবু আলি। এক ম্যাচে তিনি প্রয়াত হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ারের ভঙ্গিমাও অনুকরণ করেছিলেন।
এমএলএসের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অন্য জায়গায় এর আগে ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা গেছে। আল আহলির হয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে আবু আলির খেলার সময়ও সমর্থকেরা পতাকা উড়িয়েছিল।
প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় গত এক বছরে ৪০০-র বেশি ফুটবলার নিহত হয়েছেন। চলতি মাসে নিহত হয়েছেন সাবেক জাতীয় তারকা সুলেমান ওবায়েদ, যাকে ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফা ‘ফিলিস্তিনি পেলে’ বলে উল্লেখ করেছে। তার মৃত্যুর খবরে লিভারপুল তারকা মোহামেদ সালাহ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখেন, ‘বলুন তো, তিনি কীভাবে, কোথায়, আর কেন মারা গেলেন?’
প্যালেস্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কলম্বাস ক্রু সমর্থকদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। ফিলিস্তিনের পতাকা শুধু আবু আলির পরিচয় নয়, এটি আমাদের জাতির দৃঢ়তা ও গৌরবের প্রতীক। এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে আমাদের খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতির বার্তা। ’
এমএইচএম