২৬ অক্টোবর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই গঠনতন্ত্র সংস্কারকে প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখেছিলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। সেই লক্ষ্যেই ৯ নভেম্বর প্রথম নির্বাহী কমিটির সভায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া।
খসড়ায় সবচেয়ে আলোচিত প্রস্তাব হলো— নির্বাহী কমিটির কোনো পদে সর্বোচ্চ তিন মেয়াদের বেশি থাকা যাবে না। টানা কিংবা বিরতি দিয়ে হোক, একই ব্যক্তি সভাপতিসহ অন্য কোনো পদে তিন বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ফিফার নীতিমালার সঙ্গেও এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও ফিফা সভাপতির জন্য ব্যতিক্রম রেখেছে, বাফুফের খসড়ায় সেটি রাখা হয়নি।
বর্তমান নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে তিন বা ততোধিক মেয়াদ পার করেছেন। তবে নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদনের পর তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে না। কারণ, ট্রানজিশনাল ধারায় বলা হয়েছে, নিয়মটি পরবর্তী নির্বাচন থেকে গণনা শুরু হবে।
নির্বাচন প্রক্রিয়াতেও এসেছে বড় পরিবর্তন। সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে এখন ন্যূনতম পাঁচজন প্রস্তাবকের সমর্থন লাগবে, যেখানে বর্তমানে দুইজনই যথেষ্ট। পাশাপাশি এসব পদে জিততে হলে বৈধ ভোটের অন্তত ৫০ শতাংশ পেতে হবে। তা সম্ভব না হলে সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া প্রার্থী বাদ পড়ে পুনরায় ভোট হবে। অন্যদিকে সদস্য পদে জয়-পরাজয় আগের মতোই নির্ধারিত হবে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়।
খসড়ায় বয়সসীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান নিয়মে ২৫ বছরের কম ও ৭২ বছরের বেশি হলে প্রার্থী হওয়া যায় না। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে যেকোনো বয়সের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। ফলে চারবারের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও পুনরায় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
নতুন প্রস্তাবনায় নির্বাহী কমিটির গঠন আগের মতোই থাকছে— সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, চার সহ-সভাপতি ও ১৫ সদস্য। তবে ১৫ সদস্যের মধ্যে অন্তত দুই নারী রাখার বাধ্যবাধকতা যোগ হয়েছে। প্রথম নির্বাচনে ফুটবলের বাইরের নারীরাও প্রার্থী হতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে ডিসিপ্লিনারি, আপিল, নির্বাচন কমিশন ও অডিট কমপ্লায়েন্স কমিটিকে নির্বাহী কমিটির বাইরে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নির্বাচিত করার বিধান। এক বছরের মধ্যে এই কমিটিগুলো কংগ্রেসের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে হবে। এছাড়া এসব কমিটি ক্লাব, জেলা এমনকি আত্মীয় বা ব্যবসায়িক অংশীদারের প্রভাব থেকেও মুক্ত থাকবে।
তবে খসড়ায় কিছু অসঙ্গতিও রয়েছে। যেমন— ফিফার কাঠামোয় সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ নেই, অথচ বাফুফেতে তা রাখা হয়েছে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ গ্রাউন্ডস কমিটিকেও খসড়ায় যুক্ত করা হয়নি। এছাড়া ফুটবল কার্যক্রমে অনিয়মিত অনেক জেলা-ক্লাবের ভোটাধিকার নিয়ে কোনো সমাধানও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়নি।
খসড়াটি নিয়ে এক মাসের মধ্যে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামত দিতে বলা হয়েছে। সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও এনএসসির সঙ্গে আলোচনা করবেন, আর সাব্বির আহমেদ আরেফ কথা বলবেন ক্লাব ও জেলার সঙ্গে। এরপর ফিফার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তাবটি সাধারণ সভায় তোলা হবে। এজিএমে অনুমোদনের পরই কার্যকর হবে নতুন গঠনতন্ত্র।
এআর/আরইউ