ঢাকা: পারলেন না তিনি! পারলেন না ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে দিতে, সর্বকালের সেরাদের কাতারে আসন নিতে! পারলেন না দেশকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ উপহার দিতে। রোববার দুঃস্বপ্নের রাতে ট্র্যাজিক হিরো বনে গেছেন ক্লাবের হয়ে সম্ভব সব রেকর্ড গড়া এবং চারবারের ফিফা বর্ষসেরা খেতাব জেতা লিওনেল মেসি!
পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে আসা তার দল আর্জেন্টিনাকে অতিরিক্ত সময়ে গোলে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতে নিয়েছে জার্মানি।
২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপ থেকেই ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে খেলছেন মেসি। সেবার অবশ্য ততোটা পরিণত ছিলেন না। কোয়ার্টার ফাইনালে সাইড বেঞ্চে বসে দেখেছেন স্বাগতিকদের বিপক্ষে দলের বিদায়ের দৃশ্য।
২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি নজরে ছিলেন তিনি। গোল না পেলেও আড়ালি নৈপুণ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত দলকে টেনে আনেন মেসি। তবে এবারও সেই জার্মান দেওয়ালে চাপা। মেসির আর্জেন্টিনাকে সেরা আটের সে লড়াইয়ে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে জার্মানি। সেবারের ব্যর্থতায় অবশ্য মেসি শেষ হয়ে যাননি বলে আবার আশায় বুক বাঁধে আর্জেন্টিনা।
এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক প্রতিবেশী ব্রাজিল বলে আর্জেন্টাইনদের প্রত্যাশার মাত্রা আরও বেশি বেড়ে যায়। বিশেষত দলের নেতৃত্বে লিওনেল মেসির মতো ফুটবলার রয়েছেন বলে তাদের প্রত্যাশা ছিল, অন্তত এবার ছিয়াশি পরবর্তী সময়ের শিরোপা খরা কাটাতে পারবেন প্রিয় ফুটবলাররা।
দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রুপ পর্ব-নকআউট পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত অনেকটা নিজেই টেনে নিয়ে এনেছেন। এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই মেসির দুর্দান্ত ফর্ম এ আসরকে ‘মেসিময়’ ধরে নেওয়া হচ্ছিল।
আর্জেন্টাইনদের পাশাপাশি ফুটবলের অনেক রথি-মহারথিও কল্পনায় মেসির হাতেই বিশ্বকাপ দেখতে পাচ্ছিলেন।
উত্তরসূরীদের উৎসাহ দিতে পুরো বিশ্বকাপে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। বলেছিলেন, বিশ্বকাপ জিতলে তাকে লাল গালিচায় বরণ করে নেবেন। মেসির মতো ফুটবলারের বিশ্বকাপ জেতা উচিত মন্তব্য করে ফাইনালে আর্জেন্টিনার জন্য শুভকামনা জানান ব্রাজিলের পোস্টারবয় নেইমারও।
কিন্তু দেশবাসী, কিংবদন্তি আর সময়ের সেরা ফুটবলারদের শুভকামনা আর ভালোবাসার প্রতিদান যে মেসি দিতে পারবেন না কে জানতো? ফাইনালে এক গঞ্জালো হিগুয়েনের খলনায়কোচিত অনেকটা ‘পেনাল্টি’ মিসের পর খোদ মেসিও অতিরিক্ত সময়ে ক্লাবে হরদম গোল উদযাপন করা বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হলে তার ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হওয়ার নিদর্শনই স্পষ্ট হতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত দেশবাসীকে কাঁদিয়ে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়লেন মেসি। এই ব্যর্থতায় মেসি যতোটা না মুষড়ে গেছেন তার চেয়েও বেশি মুষড়ে যেতে হয়েছে তার ভক্তদের, যে ভক্তরা ক্লাবের ‘ভিনগ্রহী ফুটবলারের জাদুকরি ড্রিবলিংয়ে’ আস্থা রেখে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বেঁধে ছিলেন।
ম্যারাডোনার মতো সর্বকালের সেরা হতে দেশকে অন্তত একটি বিশ্বকাপ উপহার দেওয়ার প্রয়োজন ছিল মেসির। জাতীয় দলের হয়ে মেসি (৯৩ ম্যাচে ৪২ গোল) অনেক আগেই ম্যারাডোনাকে (৯১ ম্যাচে ৩৭ গোল) ছাড়িয়ে গেছেন। তবে চার বিশ্বকাপে (১৯৮২, ৮৬, ৯০, ৯৪) ২১ ম্যাচ খেলা ম্যারাডোনা ৮ গোল ও ৮ অ্যাস্টিস্টে দলকে জিতিয়েছেন ছিয়াশির বিশ্বকাপ এবং নব্বইয়ে পৌঁছে দেন ফাইনালে। অপর দিকে, তিন বিশ্বকাপে (২০০৬, ১০, ১৪) ১৫ ম্যাচ খেলা মেসি ৫ গোল এবং ৩ অ্যাসিস্ট করেও দেশকে একবারের জন্য বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি।
আগামী রাশিয়া বিশ্বকাপ (২০১৮) মেসি খেললেও তার বয়স দাঁড়াবে তখন ৩১ বছর বা তার কিছু বেশি। ফর্মে কিংবা বয়সে দুরন্ত যৌবন পার করা মেসি কি তখন পারবেন সে বিশ্বকাপে দুঃখ গোচাতে। সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন অনেক কঠিন হলেও আর্জেন্টাইনদের অন্তত এখন এতটুকুতেই সান্ত্বনা খুঁজতে হবে...!
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪