ক্লাব ও দেশের জার্সিতে ৬০০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন ম্যাচ সেরা রোনালদো। একইসঙ্গে লিওনেল মেসিকে টপকে চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসরে সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের আসনে বসেন সিআর সেভেন।
কার্ডিফের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে ১-১ সমতার পর দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারানো জুভিদের জালে আরও তিনবার বল পাঠিয়ে দ্বাদশ শিরোপা নিশ্চিত করে গ্যালাকটিকোরা। মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে ৮৩ মিনিটে মিডফিল্ডার হুয়ান কুয়াদরাদোর লাল কার্ড।
স্কোরলাইন তখন ৩-১। বাকিটা সময় দশজনের দল নিয়ে খেলতে হয়। খেলোয়াড়ী জীবনের সাবেক ক্লাবের মুখোমুখি হয়ে শেষ হাসি হাসেন জিদান। এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫০০টি গোল করার নজির স্থাপন করে লস ব্লাঙ্কসরা।
তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার শিরোপার এতো কাছে এসেও না পাওয়ার হতাশাই পুড়লো ইতালিয়ান জায়ান্টরা। ঘরোয়া লিগ ও কাপ শিরোপা ঘরে তোলার পর ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবার ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বপ্নটা অধরাই থেকে গেল।
অন্যদিকে, বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একমাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগটাই জেতা হয়নি ৩৯ বছর বয়সী জিয়ানলুইজি বুফনের। পুরো আসরে অপরাজিত থাকা জুভেন্টাস ফাইনালে এসে ব্যর্থ।
এসি মিলানের (১৯৮৯, ৯০) পর ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ব্যাক-টু-ব্যাক ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো রিয়াল। চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণের (১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে) পর এটাই প্রথম। কোচ হিসেবেও নতুন উচ্চতায় পা রাখলেন জিদান। আরিগো সাচ্চির পর দ্বিতীয় কোচ হিসেবে টানা দু’বার ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি।
চার বছরের মধ্যে তৃতীয়বার ইউরোপ সেরার আসনে রিয়াল। সব মিলিয়ে ১২তম। পাঁচ বছরের খরা কাটিয়ে লা লিগা পুনরুদ্ধারের পর চ্যাম্পিয়নস লিগ দিয়ে মৌসুমের মধুর সমাপ্তি টানলো জিদানের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধে মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখে ম্যাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির শিষ্যরা! ৬১ মিনিটে ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ক্যাসিমিরোর দূরপাল্লার শট সামি খেদিরার গায়ে লেগে গোলপোস্টের নিচের বাম কোনায় প্রবেশ করে। মুহূর্তেই পরাস্ত হন বুফন।
তিন মিনিট পরেই আবারো গোল খেয়ে বসে জুভিরা। ছিটকে যায় ম্যাচ থেকেই। লক্ষ্যভ্রষ্ট পাস পেয়ে যায় রিয়াল। রাইটউইং দিয়ে লুকা মদরিচের ক্রসে আবারো সতীর্থদের উদযাপনের মধ্যমণি বনে যান রোনালদো। গোল পোস্টের ডান পাশের কাছ থেকে এক চান্সেই বুফনকে হতাশায় ডোবান পর্তুগিজ আইকন।
ক্যাসিমিরোর গোলের পর থেকে এক কথায় দাঁড়াতেই পারেনি জুভেন্টাস। রিয়ালের মুহূর্মুহূ আক্রমণে রক্ষণ সামলাতেই হিমশিম খায় তারা। ৯০ মিনিটে জুভিদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়ে স্কোরশিটে নাম লেখান বদলি হিসেবে নামা উদীয়মান স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মার্কো অ্যাসেনসিও।
রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর পর জুভেন্টাস শিবিরের হতাশার বিপরীতে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন বেল-বেনজেমা-রোনালদোরা। বার্সা থেকে জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়ে দুর্দান্ত মৌসুম পার করা ব্রাজিলিয়ান দানি আলভেজের আক্ষেপটা আরও বেশি! মোনাকোর বিপক্ষে সেমির দুই লেগ মিলিয়ে দলের ৪ গোলের মধ্যে নিজে এক গোলের পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন বাকি তিনটি।
অথচ, প্রথমার্ধে ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সমাপ্তির ইঙ্গিত। উত্তেজনায় ঠাসা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-১ সমতায়। ২০ মিনিটে রিয়ালকে লিড এনে দেন রোনালদো। সাত মিনিট বাদেই দর্শনীয় গোলে জুভেন্টাসকে ম্যাচে ফেরান মারিও মান্দজুকিচ। রোনালদো-মান্দজুকিচের গোলে ১-১ সমতায় প্রথমার্ধ
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলে রিয়ালের ডিফেন্স ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন দিবালা-হিগুয়েইনরা। ৪ মিনিটের মাথায় গঞ্জালো হিগুয়েইনের দূরপাল্লার শট রুখে দেন কেইলর নাভাস। তার আগে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের একটি হেডের প্রচেষ্টা পরাস্ত করতে পারেনি।
তিন মিনিট বাদেই আবারো ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হন রিয়ালের কোস্টারিয়ান গোলরক্ষক। জুভেন্টাস মিডফিল্ডার মিরালেম পিজানিকের বুলেট গতির শট দুর্দান্ত নৈপুণ্যে প্রতিহত করেন নাভাস।
২০ মিনিটে এসে গোলের উপলক্ষ পেয়ে যায় লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা। জুভিদের ক্রমাগত আক্রমণের বিপরীতে কাউন্টার অ্যাটাকে দানি কারভাজালের সঙ্গে চমৎকার ওয়ান-টুতে বল জালে জড়ান রোনালদো। ডান প্রান্ত পাস পেয়ে চলন্ত বলে কিক নিয়ে নিখুঁত ফিনিশিং টানেন চারবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী।
সাত মিনিট পর দর্শকদের চোখ ধাঁধানো গোল উপহার দেন ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড মান্দজুকিচ। এ যাত্রায় আর ফেরে ওঠেননি নাভাস। কিছু করারও ছিল না! ডিফেন্ডার সান্দ্রোর ক্রস খুঁজে পান হিগুয়েইন। শূন্যে রেখেই বাড়িয়ে দেন মান্দজুকিচের কাছে। চমৎকারভাবে বুকে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে উল্টোদিকে ঘুরে অবিশ্বাস্য ওভারহেড কিক। নাভাসের মাথার উপর দিয়ে গ্লাভস ছুঁয়ে বল জালে। ১-১ সমতায় ফেরে জুভিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, ৪ জুন, ২০১৭
এমআরএম